দেশজুড়ে

আগে আসতো ৪০০ ট্রাক পাথর, এখন ৭০

দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি হয়। একসময় বহুজাতিক পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলেও এখন কেবল পাথর আমদানিনির্ভর বন্দর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে নানান সংকটের কারণে সম্ভাবনাময় বন্দরটি বাণিজ্য ঘাটতির ফলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। আমদানি-রপ্তানি নেমেছে অর্ধেকের নিচে।

Advertisement

সম্প্রতি এই বন্দর দিয়ে স্লট বুকিংয়ের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কে কেন্দ্র করে ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে দাম বেশি হওয়ায় ভারত থেকে পাথর আমদানি কমেছে। এতে এক সময়ের কর্মচঞ্চল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, বেকার হয়ে পড়ছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ীসহ পাথর শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভুটানের পাথর গুণগত মানে ভালো হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি দেশটির প্রতি। এর মধ্যে আবার ভালো মানের পাথর আমদানিতে ভুটানের রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন ডিউটি ছাড় রয়েছে। এজন্য ভারতের চেয়ে কম খরচে আমদানি করা যায় ভুটানের পাথর।

আরও পড়ুন:

Advertisement

অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দর প্রাথমিকভাবে বন্ধের সুপারিশ প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাক চতুর্দেশীয় স্থলবন্দরটি অনিয়ম দুর্নীতিসহ সমস্যায় জর্জরিত স্থলবন্দর

২০২৩ সালে ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বাংলাদেশে রপ্তানি করা ভুটানের পাথরের প্রতিটি ট্রাকের বিপরীতে স্লট বুকিং বাবদ ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাবান্ধা বন্দরের ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে

সম্প্রতি ভারতের ফুলবাড়ির ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীরা ওই স্লট বুকিং নিয়ে ফের সরব হয়ে ওঠেন। অনশনসহ আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবির মুখে আবারো রাজ্য সরকার ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর স্লট বুকিং চার্জ চাপিয়ে দেয়। এতে চলতি বছরের (২০২৫) জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যায় ভুটান থেকে পাথর আমদানি।

তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের ভেতর ও বাইরে অলস সময় পার করছেন পণ্য ওঠানামা করা শ্রমিকরা। হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিবহন শ্রমিকসহ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ভুটানের পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় ভারত থেকে প্রতি টনে ৩-৪ ডলার বেশিতে পাথর আনতে হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে কিছু ব্যবসায়ী পাথর আমদানি করলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বন্ধ রেখেছেন। আগে প্রতিদিন ভারত ও ভুটান মিলিয়ে ৩০০-৪০০ পাথরের ট্রাক বন্দরে এলেও বর্তমানে তা নেমেছে অর্ধেকের নিচে।

Advertisement

বর্তমানে শুধু ভারত থেকে ৬০-৭০ ট্রাক পাথর আসছে। যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় পাথরের বাজার ও নির্মাণ শিল্পেও। রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক মাসে সরকার প্রায় ৯১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে।

আরও পড়ুন:

পঞ্চগড়ে ১৯ বছর পর খুলছে চারদেশীয় ব্যবসায়ীক সংযোগ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফের পাথর আমদানি শুরু

বাংলাবান্ধা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট প্রতিনিধি নাজির হোসেন বলেন, সম্ভাবনাময় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে যে পরিমাণ গাড়ি ঢুকছে, তাতে বন্দরটি চলার মতো নয়। শুধু ভারতীয় পাথর দিয়ে চলে না। এতে ব্যবসায়ীসহ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। স্লট বুকিংয়ের নামে টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে ভুটানের পাথর আমদানি বন্ধ। এই বন্দরে অন্য কোনো পণ্য তেমন আমদানি-রপ্তানি হয় না। আগে ৩০০-৪০০ গাড়ি পাথর ঢুকতো। এটা আবার চালু হলে আমাদের পাথরের দামও কমে আসবে। সবার জন্য ভালো হবে।

পাথর আমদানিকারক হামিদুল ইসলাম বলেন, ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর স্লট বুকিং চার্জ নির্ধারণ করায় তারা পণ্য রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। ভারতের পাথরের মান ভুটানের চেয়ে নিম্নমানের হওয়ায় ব্যবসায়ীদের চাহিদা বেশি ভুটানের পাথরের প্রতি। এই পাথর দিয়েই বিভিন্ন কনস্ট্রাকশনের কাজ হয়। ভুটানের পাথর আসা বন্ধ থাকায় কেউ কেউ ভারত থেকে পাথর আনছেন বেশি দরে।

বাংলাবান্ধা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আকতারুল ইসলাম বলেন, আমাদের ৫০০ এর বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পাথর ব্যবসায়ীসহ ভাঙা শ্রমিকরাও বেকার। দ্রুত ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বসে বিষয়টি সমাধান করা দরকার।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বর্তমানে আমদানি কিছুটা কম। মূলত বন্দরটি পাথরনির্ভর। ভুটান ও ভারত থেকে এই বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি হয়। তবে বেশ কিছুদিন থেকে ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ। ভারত থেকে কিছু পাথর আসছে। এখন ভারত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন পাথর আসে। ২০-২৫ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। এতে বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শ্রমিকরা যারা বন্দরের কাজ করেন, তাদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।

সফিকুল আলম/জেডএইচ/এমএস