অর্থনীতি

প্রথমবারের মতো সিরিয়ায় যাবে প্রাণের পণ্য

পৃথিবীর ১৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণের পণ্য। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। প্রথমবারের মতো দেশটিতে পণ্য রপ্তানির আদেশ পেয়েছে প্রাণ। সেখানে যাবে বাংলাদেশের প্রাণের পণ্য। 

Advertisement

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউইএ) বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্যপণ্যের মেলা গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় পাঁচ শতাধিক পণ্য প্রদর্শন করছে প্রাণ। মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্য ও বেভারেজ পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিত হয়েছে।

এবারের গালফ ফুড ফেয়ারে ১২৯টির বেশি দেশ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। মেলায় প্রাণসহ বিশ্বের খ্যাতনামা উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিচ্ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে ইউইএতে গালফ ফুডে অংশগ্রহণ করছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা গালফ ফুডে অংশগ্রহণ করে প্রচুর সংখ্যক কাস্টমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সাধন হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে সিরিয়াতে আমাদের প্রথম পণ্যের অর্ডার পেয়েছি। যুদ্ধের মধ্যে সিরিয়াতে আমাদের পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছিল না। আমরা অনেক দিন যাবত চেষ্টা করছিলাম যেন সিরিয়াতে আমাদের পণ্যসামগ্রী যাওয়া শুরু হয়। আমরা ইরাকে ভালো করছি। উত্তরোত্তর ইরাকে আমরা আরও ভালো করতে পারব।

Advertisement

আরও পড়ুন গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নিলো প্রাণ ওমরাহ পালন করলেন প্রাণ গ্রুপের ২৫০ কর্মকর্তা কর-ভ্যাটের হার যুক্তিযুক্ত করা হলে দেশ সুন্দরভাবে চলবে

‘এ মেলাতে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হলো আমরা এই মেলার মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের পণ্যসামগ্রীর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এই মেলার মাধ্যমে পৃথিবীর ১৫০টিরও বেশি দেশে (আমাদের পণ্য) বর্তমানে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি আগামীতে এই মেলার মাধ্যমে আরও বেশি পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।’

আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এই গালফ ফুডের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমগ্র কাস্টমারদের সঙ্গে আমাদের দেখা হচ্ছে। আমরা এখানে আমাদের একটা কাস্টমার মিট করেছি। এই কাস্টমার মিটে গতকাল অন্তত ১০০টিরও বেশি দেশের গ্রাহক আমাদের এখানে উপস্থিত ছিলেন। এদের হয়তো সবার পক্ষে বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু গালফ ফুডের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে এবং তারা উত্তরোত্তর আমাদের আরও ভালো ভালো ব্যবসা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে বাংলাদেশে এক্সপোর্টের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছি এবং এই গালফ ফুডের মাধ্যমে আগামী দিনে আমরা আরও ভালো অর্জন করতে সক্ষম হবো। এই গালফ ফুডের একটি অভিনব দিক যে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সমস্ত নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এই গালফ ফুডে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা আমাদের বিস্কিট সেগমেন্ট থেকে অনেক অনেক নতুন পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। আমাদের কুকিজ সেগমেন্ট নতুনভাবে এসেছিল। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত আমাদের ভোক্তা সাধারণরা এই কুকি গ্রহণ করেছেন। তারা আমাদের এই নতুন ইনোভেশনকে খুবই ভালোভাবে দেখছেন।’

আরও পড়ুন সেরা প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নের স্বীকৃতি পেলো আরএফএল সেন্টমার্টিনে হলো প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চাকরিমেলা কর্মসংস্থান সৃষ্টি আমাদের লক্ষ্য: আহসান খান চৌধুরী

‘এর পাশাপাশি সার্বক্ষণিকভাবে আমরা চেষ্টা করি আমাদের নুডলস সেগমেন্টে। আমরা এবার অভিনব উপায়ে আমাদের নুডলস সেগমেন্টকে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভোক্তার হাতে কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেকগুলো নতুন সিজলিংয়ের সমাহার নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। আমাদের কাছে কোরিয়ান ভ্যারাইটি ছিল, থাই ভ্যারাইটি ছিল, চাইনিজ ভ্যারাইটি ছিল এবং আমাদের ভ্যারাইটি তো ছিলই। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত আমাদের ভোক্তা সাধারণ এই ধরনের পণ্যসামগ্রী ভালোভাবে গ্রহণ করছেন এবং আগামী দিনেও আরও অভিনবভাবে আমরা চেষ্টা করবো সুন্দর সুন্দরভাবে পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হতে পারি।’

Advertisement

আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোক্তা সাধারণের জন্য আমাদের উপহার হবে আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে সমস্ত পণ্যসামগ্রী বিপণন হচ্ছে, আমরা আমাদের বাংলাদেশি ভোক্তাদের কাছেও এই পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হবো। আশা করি তারা আমাদের পণ্যসামগ্রী গ্রহণ করবেন এবং তারা প্রাণকে নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ড আকারে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের সঙ্গে সচেষ্ট থাকবেন। আবারও ভোক্তা সাধারণকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আগামী দিনে আরও সুন্দর সুন্দর পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের আশ্বাস দিচ্ছি।’

বিশ্বের প্রতিটা দেশে পণ্য পৌঁছে দিতে এবং আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে নিজেদের উপস্থিতি আরো সুসংহত করতে কাজ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ।

আরও পড়ুন বাণিজ্যমেলায় আরএফএলের ২০ হাজার পণ্যের সমাহার বাণিজ্যমেলায় ৫০০ ধরনের খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করছে প্রাণ

প্রাণ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (এক্সপোর্ট) মিজানুর রহমান বলেন, গালফ ফেয়ার সবসময় খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটর প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে হাজির হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ ও উপকরণ সম্পর্কে অবহিত হন। এছাড়া বড় বড় কোম্পানি অংশ নেওয়ায় তাদের পণ্য সম্পর্কে এবং ভোক্তার আচারণে বিশ্বব্যাপী কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে সেটি বোঝা যায়। পাশাপাশি বিদ্যমান আমদানিকারকের কাছে নতুন পণ্য ও সেবা তুলে ধরা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রাণ গ্রুপ ২০১৩ সাল থেকে গালফ ফেয়ারে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০০ আমদানিকারক প্রাণের স্টল পরিদর্শন করেন। এবার প্রাণ গ্রুপের স্টলে রয়েছে জুস ও বেভারেজ, বিস্কুট ও বেকারি, স্ন্যাকস, নুডলস, স্পাইস, কালিনারি ও ফ্রোজেন ফুডস ক্যাটাগরির বিভিন্ন পণ্য। এবারের মেলায় বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভারড ড্রিংক, নানান ভ্যারিয়েন্টের বিস্কুট, জুস, স্পাইস, ওয়েফার, নুডলস ও ফ্রোজেন ফুডসের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরছে প্রাণ।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ২০২৫ সালে প্রাণের লক্ষ্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা। এ লক্ষ্যে নিজেদের নতুন পণ্য নিয়ে ও বিদ্যমান পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে প্রাণ গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নিচ্ছে। মেলায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং নতুন বাজার ধরার ওপর গুরুত্ব দিবে। আমাদের লক্ষ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রাণের পণ্য রপ্তানি করা।

এমএমএআর/এএসএম