প্রতিবারের মতো এবারো ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল আয়োজন করেছিল অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান।
Advertisement
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্কুল প্রাঙ্গনে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে ভাষা সংগ্রামীদের স্মরণ করেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রভাত ফেরির মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রভাত ফেরিটি পুরো স্কুল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের বেদীমূলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক রাফায়েল রোজারিও অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ এ সবাইকে স্বাগত জানান। তারপর সবাই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গেয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।
প্রথম পর্বে বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি অনবদ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। অংশ নেয় মাইশা, লিয়ানা, মিকাইল, রূপকথা, মেহরিশ, গার্গী, জারা, সুহানা, মুনাজ্জাহ, মৃন্ময়ী, নাসভা, অনিরুদ্ধ, মাহনাজ, আমীনা, মাহরুজ, অস্কার, জারিফ, রাইয়ান, নুসাইবা, রাইনা, সোহারদিতি, ইমরান, অলিভিয়া ও অর্না। এই পর্বটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক বিশাখা পাল।
Advertisement
সমন্বয় করেন শ্রেণি শিক্ষক শায়লা ইয়াসমিন নুসরাত, অনিতা মন্ডল, সায়মা হক, নুসরাত মৌরি ও অনিতা বিশ্বাস মীরা। শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্কুলের সংগীত শিক্ষক স্বপ্না চক্রবর্তী ও বিজয় সাহা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিশিষ্ট সমাজকর্মী, সিডনি প্রবাসী বাঙালিদের কাছের মানুষ, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের একান্ত সুহৃদ মহাপ্রাণ নার্গিস ইয়াসমিন খান লতাকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারে অসামান্য অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা ২০২৫ এ ভূষিত করা হয়। স্কুলের সভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভর সভাপতিত্বে একুশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক একটি আলোচনা পর্ব উপস্থাপিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র ডার্সি লাউন্ড। এই প্রবাসে বাংলা ভাষার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনসাল ও হেড ওফ চেনসারি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের গৌরবজনক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলার ও বাংলা স্কুলের সাবেক সভাপতি মাসুদ চৌধুরী। ব্যস্ততার কারণে অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও, শুভেচ্ছা বক্তব্য লিখে পাঠান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আনুলাক চানটিভং।
বক্তব্যটি পড়ে শোনান বাংলা স্কুল সভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুণ, বারডিয়া বাংলা স্কুলের সভাপতি ড. রফিক ইসলাম ও অধ্যক্ষ মিলি ইসলাম, ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলার আশিক রহমান অ্যাশ, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ শফিকুল ইসলাম। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সদস্য কাজী আশফাক রহমান। অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনা বাংলা স্কুলের অর্জন ও সাফল্যের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।
মহান ভাষা আন্দোলন ও বর্তমান প্রেক্ষাপটকে উপজীব্য করে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত একটি চমৎকার নাটিকা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। নাটকটির মূল ভাবনা, রচনা, নির্দেশনা, পরিচালনা ও অভিনয়ে ছিলেন প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব মাজনুন মিজান, অভিনয়ে আরো ছিলেন ফারহানা বীথি, মানব, মৃন্ময়ী, সাগর, সম্রাট ও রঞ্জন।
শেষ পর্বে পরিবেশনা নিয়ে আসেন সিডনির বরেণ্য শিল্পীরা। গানে গানে ভাষা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানান সাজ্জাদ হোসেন, লুৎফা খালেদ, স্বপ্না চক্রবর্তী, দুলাল ভট্টাচার্য, নাজমুল আহসান খান ও ফায়সাল খালিদ শুভ। কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন আজিম সাগর ও ফারহানা বীথি দম্পতি। পুরো আয়োজনে তবলায় সংগত করেন বিজয় সাহা। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন নুসরাত মৌরি।
Advertisement
শব্দ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সভাপতি ফয়সাল খালিদ শুভ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান ও কার্যকরী কমিটির সদস্য মশিউল আযম খান স্বপন। কারিগরি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রাফায়েল রোজারিও। শহীদ মিনার নির্মাণ ও মঞ্চ সজ্জার দায়িত্ব পালন করেন ইয়াকুব, রাফায়েল, স্বপন, শুভ, শাহিন, দুলাল, সম্রাট ও আজিজ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ইয়াকুব আলী ও নুরুল ইসলাম শাহিন। আপ্যায়ন ছিলেন শাহীন, ইয়াকুব, নূরীণ, আলিশা ও তাহিয়া। প্রধান সমন্বয়কারী নাজমুল আহসান খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলা স্কুলের অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর এবারের আয়োজন দুপুর ২টায় শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বাংলা স্কুল সভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভ। উল্লেখ্য, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য উন্মুক্ত থাকে।
এমআরএম/এএসএম