চঞ্চল কিশোরীর প্রথম প্রেমের পবিত্রতার মতো ততধিক সৌন্দর্য আছে কবিতার। কবিতা শহরের আদিম কোনো স্থাপত্যের ন্যায় নিরুপম; পথের চেয়েও বেশি গতিশীল। রাত্রির অন্ধকার কিংবা আলোর উচ্ছ্বাসে বৃক্ষের শাখায় শিশিরের স্ব-শব্দ পতনের মতো কবির হৃদয় হিল্লোলেও সুর বেজে চলে অনবরত। সংগোপন সংকল্পে আপন আলোর পরশে কবি শব্দে শব্দে অক্ষরে আঁচড়ে সে সুর আঁকেন ছবির মোড়কে; আলোর মতো ক্রমাগত বিবর্ধিত হতে হতে তা কবিতা হয়ে ওঠে।
Advertisement
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি প্রেক্ষিতে কবিতা কখনো অস্ত্র হয়ে তো কখনো আবার বাঁশরীর বাঁশির মতো জেগে থাকে। মোহ, মায়া এমনকি আত্মাহুতির বাস্তবতা অবাস্তবতাও কবিতার রঙে, ঢঙে, প্রকাশে অকৃত্রিম ভাবে ধেয়ে চলে। কবিতা যেমন জাগরণে তেমন নৈরাশ্যেও পুরোনো বীণার ঝঙ্কারের মতো আন্দোলিত হয়।
মুখের ভাষা আর কবিতার ভাষাতেও আছে বিরাট ব্যবধান। শব্দ কবিতার পঙ্ক্তিতে সুরশলাকার মতো নিস্তব্ধ তরঙ্গ বহন করে। আবেদনের শুদ্ধতা, অভিব্যক্তি ও শব্দ চয়নের দক্ষতা কবিতায় যেমন বহুমাত্রিকতা আনে। তেমনই কবিতা থেকে পরবর্তী কবিতার পার্থক্যই কবিকে স্বার্থক করে তোলে। কবিতার জন্ম হয় আকস্মিক; তবে নির্মাণ সময় সাপেক্ষও হতে পারে।
কবিতার পরীক্ষা কবিকে যেমন দিতে হয়। তেমনই শব্দের নিরীক্ষাও চালাতে হয় ক্রমাগত। কবি পরাজিত হলে একটি বোধের ও একটি পরিস্থিতির মৃত্যু হয়। আর বিজয়ী হলে প্রতিটি নতুন কবিতা প্রতিবার একজন নতুন কবির জন্ম দেয়।
Advertisement
প্রতারণার গোপন কৌশলে শহরে গ্রামে মাটির পালকপরে আছে যারা—পাখিটি রোজ তাদের কাছে উড়ে যায়আপাত সবুজ পাখিটির ঠোঁট পুরোপুরি লাল নয়
দূর থেকে দেখা, কাছ থেকে দেখার বিরাট ব্যবধানদেবতাও রাবণ হতে পারেনরাবণও হতে পারেন রামতবুও ভালোবাসার জন্য ভালোবেসে যেতে হয়
ইত্যাদি ধারাবাহিকতার ভেতরে একটি চোখঅজ্ঞাত পরিচয়েকোনো কোনো দিন কোনো কোনো সকালেপ্রজ্ঞাপনের মতো নির্দেশ জারি করে
মেট্রোর এক্সেলটরে দাঁড়িয়েমৃত্যুহীন দুর্ভাগ্যের অন্ধকারের ভেতরেনিজেকে বড় বেশি সুখী মনে হয় তখনকারওয়ানবাজারও হয়ে ওঠে অদেখা স্বর্গের ঝুলন্ত উদ্যান।
Advertisement
ভগবানকে বলব ভেবেছিলামরাশিফল ভেঙে যে দিনগুলোছিনতাই হওয়া সিকনেসের মধ্যে ডুবে আছেজলে ভেজা মুড়ির মতোন কল্পনার সহবাসেকোমল যে তরতাজা ফলবিভা ও বিভ্রমে হাতের করতলছুঁয়ে থাকে—দ্বায় মোচনে তাদের যেন না লাগেইত্যাদি আরও অনেক কথাই বলার ছিলকিন্তু তিনি সব জানেন ভেবে বলা হয়ে ওঠেনি…
প্রত্যাগমনকিছুই হচ্ছে না যখনচিরচেনা পথে ফিরে যাওয়া ভালোএকটা কিছু হবে ভেবে অনেকদিন হলোএখানে নতুনকথা ছিল ফেরার আগেঅগ্রিম কোনো প্যাকেজে বিক্রি হবোতা-ও হচ্ছে না যখনপুরোনো দৃশ্যের ভেতরনতুন দৃশ্যের ইশারা পেয়েছিল যারাযারা বলেছিল, সুগন্ধ বাঁচিয়ে রাখতেআমি তাদের কথাও রাখছি না আর
ফিরে যাচ্ছিযেখানে রাত আর দিন মিলেমিশেএক হয়ে যায়…
বোধনহয়তো একদিন ফুল ফুটবে ব্যর্থ অঞ্জলিও ফলপ্রসূ হবেআনন্দ বৃক্ষটিকে উপড়ে ফেলার পররাতের মেকাপ সেদিন পরবো না আরসংসারীঅনাহারীসন্ন্যাসীকারো জীবনই আজ আর আমাকে প্রেরণা দেয় নাশুধু অনুমতির অপেক্ষা—মা রায় দিলেআমি কীর্তনের দলে যাব,বাকিটা জীবন হারমোনিয়ামে জাগরণের গান গাব।
অস্তমিত সূর্যবাড়ি ফেরার পথে ঘড়ির কাঁটা কেন জানি না দ্রুতঘুরতে থাকে, মনে হয় দাঁড়িয়ে পাশে, কাছেকোথাও কেউ যেন নজরে রাখে
দুধসাদা বিড়ালটার শরীরে ক্ষত, রক্তজবার মতোফুটে আছে চোখের লালচিঠির ভারে লেটার বাক্সেরদরজা গেছে খুলেতারপরও কোথাও কোথাও অপরিবর্তিত পারদ স্তম্ভপ্রাচীর ভেঙে নেমে আসছে কস্তুরী রাত
দূরে দাঁড়িয়ে যেন কেউ দেখছে সব, নজরে রাখছে আমাকে।
এসইউ/জেআইএম