জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তা নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদন মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে অকাট্য দলিল হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে ব্যবহার করা হবে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এমন কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার তদন্ত করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর), সে প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
মোটাদাগে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নির্দেশে বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
Advertisement
তাজুল বলেন, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি সুস্পষ্ট এবং অসম্ভব জোরালো প্রমাণ। এই প্রমাণটি তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (এভিডেন্স) সাক্ষ্য হিসেবে আসবে এবং অকাট্য দলিল হিসেবে এটা ট্রাইব্যুনালে ব্যবহার করা যাবে। সেটা আমরা ব্যবহার করবো।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে গত জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা সংগঠিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার, তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা; আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে একত্র হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। যার মধ্যে রয়েছে কয়েকশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গুরুতরভাবে শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপকহারে নির্বিচার গ্রেফতার, আটক, নির্যাতনসহ অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন। ওএইচসিএইচআর যুক্তিসংগত কারণে বিশ্বাস করে যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা, সমন্বয়, নির্দেশনায় এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে, এক বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন। বিশেষভাবে ‘বিক্ষোভের মূল হোতা’, ‘গণ্ডগোল সৃষ্টিকারী’দের গ্রেফতার, হত্যা ও হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
Advertisement
এফএইচ/এমএইচআর/জেআইএম