অর্থনীতি

৬ শতাংশে ধরে রাখার নিউক্লিয়াস টাইপের মূল্যস্ফীতি দেখেছি

বাজার ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে ধরে রাখার কৃত্রিম প্রবণতা দেখেছি। এটা নিউক্লিয়াস টাইপের মূল্যস্ফীতি। এর মানে দুটো লাইনের মধ্যে একটি ওঠে অন্যটি নামে। মূল্যস্ফীতির কাঠামোটি ওরকম ছিল।

Advertisement

গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এমসিসিআই কনফারেন্স হলে জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

২০১৮ সালের সিপিডির এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ তো অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। বলতে পারি দ্বৈত চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ। একটি হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অন্যটি দুর্বল রাজস্ব আদায়। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে এগুলোই কি ভালো ছিল না সরকার বিকল্প উদ্যোগ নিতে পারতো। উচ্চ মূল্যস্ফীতি তথ্যের ভেতরে সব সময় একটা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হতো। এটা এরকম খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে কমে। আবার খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে বাড়লে খাদ্যে কমে। হঠাৎ করে দেখবেন মার্চ মাস থেকে এটার পরিবর্তন হয়েছে।

আরও পড়ুনপরিবহন-বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবেভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট হবে

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত ছিল সরকার মূল্যস্ফীতিসহ আর্থিক তথ্যগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করবে। তবে এখন ক্রোমোজোমের মতো মূল্যস্ফীতির কাঠামো পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। দেখবেন, এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বা ফুড ইনফ্লাশন বাড়লে কিছুদিন পর নন-ফুডও বাড়ে। এটাই কিন্তু হওয়ার কথা।’

Advertisement

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছি। বিগত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি অব্যাহতভাবে বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ভেতরে ভোক্তাকে থাকতে হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় দেখেছি মূল্যস্ফীতি স্টেবল করার জন্য কন্ট্রোল করা হতো। মূল্যস্ফীতির সমস্যা কিন্তু বহুমাত্রিক। এটা শুধু শুল্ক কমিয়ে হবে না। এটাও ঠিক ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে। সুতরাং এটার একটা লজিক্যাল কারণও রয়েছে।’

আরও পড়ুনভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত, পরিণতি ভালো হবে নাবর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বাজার এবং বাজারবহির্ভূত কারণগুলো অ্যাড্রেস করা না গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেবে। কিন্তু তা দেখছি না এবং সরকারের আগ্রহও নেই। সরকার স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগেই হাত দিয়েছে। কালই ফলাফল পাওয়ার সমাধান মূল্যস্ফীতিতে পাওয়া কঠিন। সাপ্লাই চেইন সিস্টেম ডিজিটাল করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা যেন ডিজিটালাইজেশন হয়।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে বাজার ব্যবস্থাপনার তথ্য খুবই কম। কম তথ্য দিয়ে বাজারব্যবস্থা ঠিক করা খুবই কঠিন। বাজারে কে কতটুকু ভোজ্যতেল এনেছে কে কতটুকু ছেড়েছে তার কোনো তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে নেই। সাপ্লাই চেইন তথ্য না থাকার প্রতিক্রিয়া বাজারে পড়ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। স্বল্পমেয়াদে এটা চিন্তা করা যাবে না। গতানুগতিক মূল্যস্ফীতির উদ্যোগে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। বাণিজ্য উপদেষ্টা পরিবর্তন করা হলো। নতুন যিনি এলেন তিনিও কোনো চেষ্টা করেছেন বলে দৃশ্যমান হয়নি।

এমওএস/এমএএইচ/জেআইএম

Advertisement