ট্যাক্স নেট কীভাবে বাড়ানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর বারবার ভ্যাট না বাড়ানোর কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
Advertisement
জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রাজস্ব আদায়ের নেগেটিভ দিক দেখা খুবই একটা রেয়ার ঘটনা। সরকার চালাতে হবে, সরকারের নিজস্ব আয় দরকার। সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় না করতে পারার কারণে সরকার দেনার মধ্যে রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। টাকা না দিতে পেরে অনেককে বন্ড দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রোথ ছিল টোটাল রেভিনিউয়ের, গত বছর যেটা ছিল সাড়ে ১৭ শতাংশ, যেটার টার্গেট ছিল সাড়ে ৩২ শতাংশ। যদি টার্গেট অনুযায়ী রেভিনিউ সংগ্রহ করা হয় তবে ৪৫ শতাংশ গ্রোথ দরকার, যেটা সম্ভব না।
তিনি বলেন, রেভিনিউ আদায় ঘাটতি রয়েছে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৪২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ধরা পড়েছে। আইএমএফের টার্গেট অনুযায়ী এটা হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তি অন্যদিকে রাজস্ব আসছে না। একদিকে প্রবৃদ্ধি কম অন্যদিকে মানুষের পকেটে টাকা নেই। ব্যবসায়ীরা সমস্যায় আছে কারণ ক্রেতা কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, ক্রেতা কমে গেলে তারা কীভাবে ভ্যাট দেবে।
Advertisement
রাজস্ব বাড়ানোর উপায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজস্ব বাড়াবে আবার ভোক্তাকেও চাপে ফেলবে না, তাহলে সরকার আসলে কী করবে। সরকার সহজ পন্থা বেছে নিয়েছে। যে জায়গাগুলোতে সহজে রাজস্ব আদায় করা যায়, অর্থাৎ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স, এটাতে সরকার হাত দিয়েছে। এই জায়গায় হাত দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই আমরা কিন্তু তা বলছি না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে চিন্তা করেছেন কি না। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ভ্যাট বাড়াতে হবে, এখন এটার সঠিক সময় কি না। এমন জিনিসের ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে যেগুলো আমাদের প্রতিদিনই লাগে।
‘বিদেশ ভ্রমণে ট্যাক্স ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সিনেমা দেখার জন্য কিছুটা বাড়ানো হয়েছে- এটা ঠিক আছে। বেশকিছু বিষয়ে সরকার সমন্বয় করেছে, রেস্তোরাঁয় সরকার সমন্বয় করেছে বলে আমি জানি। আরও কিছু পণ্যে সমন্বয় হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়গুলো সরকার যৌক্তিকভাবে নেবে। রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগের সরকার ও বর্তমান সরকার একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।’
সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে তাদের একটা লিস্ট করা দরকার। রাজস্ব কতটুকু ন্যায়সঙ্গত হচ্ছে সেটাও দেখার প্রয়োজন রয়েছে। রাজস্ব বাড়িয়ে যেমন রেভিনিউ বাড়ানো যায়, আবার কমিয়েও এটা বাড়ানো যায়। যে সংস্কারগুলো ১০ বছর আগে করার দরকার ছিল সেগুলো না করে করে আজ এই অবস্থায় আমরা চলে এসেছি।
‘প্রতি বছর ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত ০ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। আয় বৈষম্য দেখা দিচ্ছে। ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স যেভাবে বাড়ানো হয়েছে সরকারের অন্য কোনো উপায় ছিল কি না চিন্তা করা দরকার? বাড়তি ট্যাক্সে সরকারের নাকি ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি সংস্থান হবে। সরকারের নিজেদের টার্গেটের গ্যাপই ৪২ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের হিসাবে ছয় মাসে গ্যাপ ৮৫ হাজার কোটি টাকা।’বলেন তিনি।
Advertisement
মোয়াজ্জেম আরও বলেন, সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়াতে গিয়ে দুর্নামের বোঝা নিলো আবার পাবলিকের কাছেও যেতে পারছে না। ট্যাক্স ডিজিটালাইজেশনে কোনো আগ্রহ নেই। ডিজিটাল করার পেছনে এনবিআরের নিজেদের মধ্যে আগ্রহ কম, এখানে হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত আছে।
এমওএস/এএসএ/এএসএম