জনবল সংকটে ধুকছে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১২ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এক সহকারী সার্জন। একই পথে হাসপাতালটির দুজন সিনিয়র নার্স। তাদের মধ্যে একজন দুই বছর ও অপরজন এক বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
Advertisement
কয়েক দফায় নোটিশ জারি করার পরও কোনো জবাব মিলেনি তাদের। এ অবস্থায় জনবলের চাহিদা মেটানোর পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের অননুমোদিত অনুপস্থিতি। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি বেশ জটিল। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক দপ্তর জড়িত। এজন্য খুব সহজে সমাধান হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর থেকে কর্মস্থলে অননুমোদিত অনুপস্থিত রয়েছেন উপজেলার বড় চতুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. গোলাম কবির (কোড-১২৩০৬২)। এ বিষয়ে ডা. গোলাম কবিরকে একাধিকবার নোটিশ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস। কিন্তু কোনো জবাব মিলেনি। তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে কোনো তথ্য নেই।
Advertisement
এ বিষয়টি সিলেট সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় পদ শূন্য না হওয়ায় এ পদে কোনো চিকিৎসক পদায়ন করা হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির আলোকে ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম সহকারী সার্জন ডা. গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি পত্র পাঠায়। সেই চিঠির প্রায় তিন বছর হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে কানাইঘাট উপজেলায় সহকারী সার্জন সাতটি পদের মধ্যে ডা. গোলাম কবিরসহ চারজন কর্মরতদের তালিকায় রয়েছেন। গোলাম কবির অনুপস্থিত থাকায় বাকি তিনজন কর্মস্থলে থাকার কথা। কিন্তু এ তিনজনের মধ্যে একজন সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ে ও আরেকজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকায় সংযুক্তিতে রয়েছেন। যার ফলে হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র একজন সহকারী সার্জন ।
অন্যদিকে সহকারী সার্জন ডা. কবিরের মতো হাসপাতালটির সিনিয়র নার্স নিশাত জাহান মারিয়া ও শামসুন্নাহার বেগম কর্মস্থলে অননুমোদিত অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে নিশাত জাহান ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর এবং শামসুন্নাহার ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে কর্মস্থলে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের একাধিকবার নোটিশ করার পরও কোনো জবাব আসেনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিশাত মারিয়ার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার শ্রীবহর গ্রামে এবং শামসুন্নাহারের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার এয়ারপোর্ট থানার লাক্কাতুরা এলাকায়। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
Advertisement
এ বিষয়ে কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুবল চন্দ্র বর্মণ জাগো নিউজকে বলেন, একজন সহকারী সার্জন দীর্ঘদিন ধরে অননুমোদিত অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। যার কারণে পদ খালি না থাকায় এ পদে জনবল পদায়নও করা হচ্ছে না।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা একাধিকবার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি। কিন্তু এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা থাকায় খুব সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও বিষয়টি যত দ্রুত সমাধান করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি।
আহমেদ জামিল/আরএইচ/জিকেএস