প্রয়াণের পর ব্যান্ডতারকা শাফিন আহমেদের প্রথম জন্মদিন। সম্ভবত এবারই সবচেয়ে ঘটা করে উদযাপন করা হবে দিনটা। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, গানের বই, সংগৃহীত ও স্মৃতিময় দ্রব্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে তার জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনাবেন তার সংগীতাঙ্গনের বন্ধুরা। এরচেয়ে বর্ণাঢ্য জন্মদিন উদযাপন আগে কখনও করেননি শাফিন আহমেদ।
Advertisement
শাফিন আহমেদের জন্মদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। একদিন আগে আজ (১৩ ফেব্রুয়ারি) তার স্মরণে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে ‘শাফিন আহমেদ: ইকোস অব আ লিজেন্ড’-এ শাফিনের গানগুলোই শোনাবে তার সাবেক দল মাইলস, দলছুট, ফিডব্যাক, আর্টসেল, অ্যাভয়েড রাফা। কনসার্টের অন্যতম আয়োজক শিল্পীর ছেলে র্যাপার অজি। তিনিও বাবার গান শোনাবেন। বাবার জন্মদিনের এই আয়োজন নিয়ে জাগো নিউজকে অনেক কথাই বললেন অজি। বললেন, ‘আমরা সবাই মিলে পাপার গান পারফর্ম করবো।’
অজি, বাবা শাফিন আহমেদের সঙ্গে
বাবার ভীষণ ন্যাওটা ছিলেন অজি। বাবার প্রেরণায় মিউজিক শুরু করেছিলেন তিনি। প্রতিদিন বাবার কাছ থেকে টিপস পেতেন। স্টুডিওতে হাতে ধরে কত কিছু শিখিয়েছেন শাফিন আহমেদ, সেসব স্মৃতিচারণ করতে করতে আবেগাত্মক হয়ে যায় অজির কণ্ঠ। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্টুডিওতে বসে কাজ করতাম, পাপা ছোট-খাটো অনেক লেসন দিতো। পাপার কাছ থেকে ডে টু ডে যে গাইডেন্স পেতাম, সেটা এখন পাচ্ছি না। স্টুডিওতে যে টাইম দিতাম, পাপা যেগুলো বলতো সেসব আর কেউ বলবে না। ব্যাপারগুলো খবু মিস করি। আমি চেষ্টা করবো তার লেগেসিটা ধরে রাখতে।’
Advertisement
শাফিন আহমেদের ছিল নিজস্ব স্টাইল। সেই স্টাইল আইকনের ব্যবহৃত সুরযন্ত্র, গানের বই, আইকনিক হ্যাট, চেইন, বর্ণিল শার্ট, টিশার্টগুলো একসঙ্গে প্রদর্শিত হবে আলোকিতে। অজি জানালেন, কনসার্ট ভেন্যুতে একটা কর্নার করা হবে। সেখানে গান শুনতে আসা শািফন ভক্তরা দেখতে পাবেন সেসব। এই আয়োজন প্রসঙ্গে অজি বলেন, ‘একজন মিউজিশিয়ান একদিনে গড়ে ওঠে না। বাবার যে জার্নি, সেটা তো আমরা কয়েকজন কাছের মানুষ জানি। কিন্তু ভক্তরা জানে না। তাদের সামনে বাবার জার্নির কিছুটা তুলে ধরতেই এই আয়োজন করা হচ্ছে। এরচেয়ে বেটার ওয়েতে বাবার জন্মদিন আর কীভাবে সেলিব্রেট হতো? এখানে ফ্যামিলি থাকবে, ফ্যান থাকবে এবং তার মিউজিশিয়ানরা থাকবেন। তার গান দিয়ে তার জন্মদিন সেলিব্রেট করবো আমরা।’
আরও পড়ুন: বুকে হাত দিয়ে পড়ে যান শাফিন আহমেদ সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদ মারা গেছেন তবু তিনি মাইলসের শাফিন আহমেদ হয়েই রইবেনএসব জিনিস কেন প্রদর্শন করার কথা ভাবলেন? জানতে চাইলে অজি বললেন, ‘আমরা মানুষকে দেখাবো কতটা মনোযোগ দিয়ে কাজ করে এ রকম একজন মিউজিশিয়ান হয়ে উঠতে হয়। তিনি কত টাইম দিয়ে, কতটা ডিসিপ্লিন মেনে মিউজিক করতেন। এই ব্যাপারটাই আমরা হাইলাইট করতে চাই। এভাবেই তো লেগেসি তৈরি হয়। বছরের পর বছর এভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। তার সেই জীবনের কিছুটা পার্সোনালি আমি দেখতে পেয়েছি। আমি মনে করছি, বাবার যত ফ্যান আছেন, তাদেরও সেগুলোর কিছুটা দেখানো দরকার। পাপাও চাইতো যে, তাকে এইভাবে সেলিব্রেট করি।’
শাফিন আহমেদ, তাদের মা ফিরোজা বেগম ও হামিন আহমেদ
১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম শাফিন আহমেদের। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতঙ্গ কমল দাশগুপ্ত। ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবে গানের আবহে বড় হন শাফিন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত আর মায়ের কাছে শেখেন নজরুল সংগীত। বড় ভাই হামিন আহমেদকে নিয়ে তারা গড়ে তোলেন ৯০ দশকের অন্যতম ঝড় তোলা গানের দল মাইলস। মাইলসের বেজ গিটারিস্ট এবং প্রধান গায়ক ছিলেন শাফিন। দলের বেশির ভাগ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা জ্বালা’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ফিরে এলে না’, ‘আজ জন্মদিন তোমার’।
Advertisement
গত বছরের ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় কনসার্টের আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শাফিন আহমেদ। দুদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২৪ জুলাই মারা যান এই শিল্পী।
এমআই/আরএমডি/এএসএম