আন্তর্জাতিক

তিন দেশে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা

কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর সোমবার সকালেই বড় ধরনের ধাক্কা খেলো এশিয়ার শেয়ারবাজার। সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বড় বড় কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে।

Advertisement

সোমবার সকালে হংকংয়ের হ্যাং সেং ইনডেক্স কমেছে ০.৭ শতাংশ, জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকের পতন হয়েছে ২.৮ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচক কমেছে ১.৯ শতাংশ।

লুনার নববর্ষের কারণে চীনের মূল ভূখণ্ডের শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল। অপরদিকে মার্কিন ডলার আরও শক্তিশালী হচ্ছে। চীনের মুদ্রা ইউয়ানের বিপরীতে ডলারের দর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে কানাডিয়ান ডলারের দাম ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।

আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য বিরোধের সম্ভাবনার কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়িয়ে চলছেন। বিনিয়োগকারীদের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের তালিকায় পরের দেশ কোনটি হতে পারে।

Advertisement

একদিন আগেই কানাডা থেকে আসা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং দেশটির জ্বালানি পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সময়ে মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

আগামী মঙ্গলবার থেকেই এই শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্পের এমন নির্দেশের কারণে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে পৃথক দুটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। পাশাপাশি চীন যতক্ষণ না ‘ফেন্টানিল’ মাদকের পাচার বন্ধ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আরেকটি নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র তিন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যেও একই হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ওই ঘোষণার পর মেক্সিকোও জানায় যে, তারাও একই ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

Advertisement

সব মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তার জবাবে শুল্কসহ পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম।

চীনের দিক থেকেও একই ধরনের ঘোষণা এসেছে। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এই পদক্ষেপের বিরোধী। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন।

কানাডা এবং মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্য ও সেবার ৭৫ শতাংশই আসে কানাডা থেকে। ফলে ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে কানাডা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির প্রায় এক চতুর্থাংশই ছিল অপরিশোধিত তেলের আমদানি যা আর্থিক মূলে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন: তিন দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু? যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে মেক্সিকো-চীন

ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন কোম্পানি যারা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি কোনো মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক মেক্সিকো থেকে একটি যন্ত্রাংশ আমদানি করে, তবে এটি দেশে আসার পরে তাকে শুল্ক দিতে হবে। এভাবে সবক্ষেত্রেই অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাব পড়বে।

টিটিএন