পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিদেশি অর্থায়ন থাকুক বা না থাকুক, জনগণের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তাই জাতীয় বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ করে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘ক্যাটালাইজিং ক্লাইমেট অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকশন অ্যাট স্কেল অ্যান্ড মোবাইলাইজিং ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি একথা বলেন।
স্ট্যার্ন্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আয়োজনে এ কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীরা জলবায়ু অভিযোজন বিনিয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেও এর সীমাবদ্ধতার কথাও বলেন।আইপিসিসির তথ্য উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেন যে, যদি জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা না যায়, তবে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে চলে যেতে পারে। অভিযোজন জরুরি, তবে এর মানে এই নয় যে, আমরা পরিবেশ বিধ্বংসী অর্থনৈতিক মডেল চালিয়ে যাবো।
Advertisement
আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশের অভিযোজন চাহিদা বিজ্ঞানসম্মতভাবে নিরূপণ করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক তহবিলের ধীর প্রবাহ এবং অনুদানের পরিবর্তে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কপ-২৯-এ আর্থিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, কিন্তু যদি তা দেরিতে আসে বা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়, তবে তা আমাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়াবে।
তিনি এ কর্মশালাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন, কারণ এতে ঋণদাতা ও উন্নয়ন সহযোগীরা একসঙ্গে বসে কার্যকর অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, অর্থ ও প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রকৃত সমাধান হতে হবে স্থানীয় ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক। জলবায়ুর প্রভাব যারা সবচেয়ে বেশি অনুভব করছেন, তারা এসব আলোচনা সম্পর্কে জানেন না। তাই বিনিয়োগকারীদের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা খুবই জরুরি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, টেকসই ও সহনশীলতাও বিবেচনায় রাখতে হবে। ঢাকা থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত বিশ্বকে বুঝতে হবে-মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বরং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে।
Advertisement
খুলনা ও যশোরের জলাবদ্ধতা সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরোনো প্রকৌশলগত নকশার ভুলে এখন কৃষকরা ভোগান্তিতে আছেন। বাংলাদেশের কৃষকরা কখনো ধর্মঘটে যায়নি, তারা সবসময় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তাদের স্থানীয় সমাধানগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সংযোগ ঘটালে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আমাদের আর পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই, এখন বাস্তব পদক্ষেপ দরকার। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, সময় চলে গেলে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলব- যোগ করেন রিজওয়ানা হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়াং, এসিআই অ্যাগ্রোবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারি, ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডির ইউনেস্কো ওয়াটার ল’ সেন্টারের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. নন্দন মুখার্জি, স্ট্যার্ন্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিনিয়র সাসটেইনেবিলিটি অ্যাডভাইজার ড. জন মার্টন, স্ট্যার্ন্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট ক্লায়েন্ট কভারেজ প্রধান এনামুল হক এবং ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অরিঞ্জয় ধর।
কর্মশালার সমাপনীতে জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করতে অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আলোচনা থেকে উঠে আসে, জলবায়ু বিনিয়োগকে কার্যকর ও ন্যায়সংগত করতে হবে।
আরএএস/জেএইচ