দেশজুড়ে

৩০ কোটি টাকার সড়ক নিয়ে শঙ্কায় স্থানীয়রা

বান্দরবান সদর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) চট্টগ্রাম ডিভিশন উপজেলা অ্যান্ড ইউনিয়ন রোড ওয়াইডেনিং অ্যান্ড স্ট্রেনথেনিং প্রজেক্ট (সিডিডব্লিউএসপি) প্রকল্পের ৩০ কোটি টাকার সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়মের ফলে সড়কটির স্থায়ীত্ব নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মনে।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, রেইচা বাজার থেকে গোয়ালিয়া খোলা পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে এলজিইডি। যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০টি কালভার্ট নির্মাণ করছেন ঠিকাদাররা। এসব কালভার্ট নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছেন ঠিকাদারের লোকজন। আজম ও খোরশেদ আলম নামক এসব ঠিকাদার স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় সরাসরি অনিয়মের প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না তেমন কেউ।

কালভার্টগুলো নির্মাণে সিক্সটি গ্রেডের রড, পরিষ্কার (ডাস্টমুক্ত) এলসি পাথর, সিলেট সেন্ট বা সিলেকশন ২.৫ এফএমের বালি ও সিম ওয়ান কেটাগরির সিমেন্ট ব্যবহারের কথা থাকলেও অধিকাংশ আরসিসি ঢালাইয়ে তা মানা হয়নি। কয়েকটি কালভার্টের আংশিক অংশে সিক্সটি গ্রেডের রড ব্যবহার করলেও অধিকাংশ কালভার্টে ব্যবহার করা হয়েছে মরিচাযুক্ত নিম্ন মানের লোহার রড, সিলেট সেন্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে মানহীন স্থানীয় লোকাল বালি, এছাড়া নির্দিষ্ট আকারের দিক থেকেও ছোট করা হচ্ছে কালভার্টগুলো। আর এই অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করে মৌন সহযোগিতা করছেন স্থানীয় এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

স্থানীয়রা আরও জানান, ঠিকাদার আজম দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবান জেলা এলজিইডি কার্যালয়ে অস্থায়ী রোলার চালকের কাজ করছেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাগিয়ে নিচ্ছেন এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। আর এতে রাষ্ট্রীয় আয়কর ফাঁকি দিতে ব্যবহার করেন বিভিন্ন লাইসেন্স। এবারও আয়কর ফাঁকি দিতে তার ব্যতিক্রম হয়নি। সরকারি বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম ও আয়কর ফাঁকি দিয়ে বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, রেইচা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকার গোয়ালিয়া খোলা সড়কে চলছে কালভার্ট নির্মাণ। সেখানে আরসিসি ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে লোকাল বালি ও এলসি পাথর।

সেখানে কথা হয় বান্দরবান উপজেলা এলজিইডির কার্যসহকারী শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারের লোকজনকে লোকাল বালি ব্যবহার না করতে নিষেধ করলেও তারা তার কথা মনছে না। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

উত্তর গোয়ালিয়া খোলার বাসিন্দা শামসুল আলম ও নুরুল ইসলাম জানান, এখানে টেকসই উন্নয়ন না করে নামেই উন্নয়ন করে যাচ্ছে এলজিইডি। এছাড়া আরসিসি ঢালাইয়ে ভাইব্রেটিং ও ঢালাই পরবর্তীতে কিউরিং না করায় কাজ শেষ না হওয়ার আগেই এরই মধ্যে একটি ব্রিজের নিচে ওয়ালে ফাটল ধরেছে। ফলে এসব কাজের মান বজায় রেখে উন্নয়ন প্রকল্পটিকে টেকসই উন্নয়নে রূপান্তর করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আজম ও খোরশেদ আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

Advertisement

বান্দরবান এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ সরোয়ার হোসেন জানান, সিডিডব্লিউএসপি প্রকল্পের অধীনে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেইচা গোয়ালিয়া খোলা সড়কের কাজটি বাস্তবায়ন করছেন এস অনন্ত ও মিল্টন ট্রেডার্স। কাজটির ভৌতিক অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ। এর প্রেক্ষিতে ১০ শতাংশ বিল প্রদান করা হয়েছে।

স্থানীয়দের বরাতে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শনপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।

এফএ/জিকেএস