সংস্কারের পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
Advertisement
তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে আলাপ চলুক, উন্নতি না দেখাতে পারলে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে চলে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে রমনার বিআইএসএস মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য আয়োজিত সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ এই সংলাপের আয়োজন করে।
Advertisement
আরও পড়ুন
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধের সুপারিশ সিপিডির রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার সম্ভব নয়: সিপিডিপ্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ, বারবিডার সভাপতি আবদুল হক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মুনমুন মাহজাবীন।
সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্কার করে নির্বাচন করা বাস্তবসম্মত নয়। আগের সরকার গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে আলাদা করে দেখতে চেয়েছিলেন। তাদের বয়ান ছিল আগে খাদ্য ও উন্নয়ন এরপর গণতন্ত্র। তাদের এ দাবি সত্য না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ যে বাড়ছে এটা কীভাবে আয়ত্তে আনতে পারি তা নিয়ে ভাবতে হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে যে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। আগের সরকার যে টাকা রেখে গেছে এতে দৈনন্দিন যে ব্যয় তা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে এবং অনেকে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। কিন্তু এসব রেখে আমরা ভ্যাটের ওপর হাত দিলাম।
Advertisement
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন হয়েছে অর্থনীতির জন্য, চাকরির জন্য। সংস্কার করে পরে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি আনতে হবে। আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।
অনুষ্ঠানে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হওয়ার কথা কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটি নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করতে হলে নিয়োগ পদ্ধতি বদলাতে হবে, আইন-কানুন পরিবর্তন করতে হবে। যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে। নির্বাচন সংক্রান্ত আইনগুলো অধ্যাদেশ আকারে জারি করে কার্যক্রম শুরু করা যায় তত দ্রুত নির্বাচন হবে।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার শব্দটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। সংস্কার জরুরি। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করতে পারিনি। আমাদের আগে নজর দিতে হবে সঠিক ব্যবস্থাপনা করার বিষয়ে। নেতা ভুল করতে পারেন কিন্তু সিস্টেম ঠিক থাকলে শুধরাবার সুযোগ থাকে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা স্ববিরোধিতায় সংকুচিত হচ্ছি। স্ববিরোধিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সংবিধানের আওতায় জনগণের সব জানার অধিকার আছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নিয়মতান্ত্রিক হতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে হবে। ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন বা সামগ্রিক পুনর্গঠনের ক্ষমতা যদি আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়ে থাকি, ওই ক্ষমতাকে প্রোপারলি চর্চা করতে পারছে কি না- সে ব্যাপারে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ধারণা আছে? এই বিষয়গুলি পরিষ্কার না হলে কিন্তু অনেক আলোচনাই পণ্ড হয়ে যেতে পারে।
সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, পরিবর্তন হতে হবে মনস্তাত্ত্বিক জগতে। আইন যারা বানায় তারাই যদি আইন ভাঙে তাহলে সঠিকভাবে আইনের প্রয়োগ হয় না। সরকার শপথ নেওয়ার সময় বলে সংবিধান মেনে চলবে কিন্তু ১০ মিনিট পরেই বলে যে সে সংবিধান মানে না।
এসএম/এমআরএম/কেএসআর