বইমেলা বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। দরজায় কড়া নাড়ছে অমর একুশে বইমেলা। ভালোবাসার ফাল্গুনে নতুন বইয়ের ঘ্রাণের অপেক্ষায় পাঠক। পরিবর্তনের বাংলাদেশে সবকিছুতে এসেছে সংস্কার, নতুনত্ব। নতুন দিনের এই বইমেলা নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থী ও লেখকদের প্রত্যাশা জানাচ্ছেন তানজিদ শুভ্র—
Advertisement
নতুন নতুন বইয়ের প্রচ্ছদে উচ্ছ্বাসমোহাম্মদ অংকন, তরুণ লেখক
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে একটি গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন চলছে সংস্কার কার্যক্রম। অনেক কিছুতেই রয়েছে প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা। তাই নতুন বছরের শুরুতে একটু কানাঘুষা ছিল যে, এবার অমর একুশে বইমেলা না-ও হতে পারে। সেই ভাবনায় জল ঢেলে এরই মধ্যে বইমেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন নতুন বইয়ের প্রচ্ছদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক প্রকার উচ্ছ্বাস বইছে। বইয়ের ভাষায় লেখক মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন বলেই আমার মনে হচ্ছে। এবারের বইতেও ফুটে উঠবে জুলাই বিপ্লবের কথা। যা পাঠককে সমসাময়িক ধারণা ও ভিন্নতার জোগান দেবে। সব মিলিয়ে ভিন্ন ধাচের একটি বইমেলা হতে পারে এ বছর। প্রত্যাশা থাকবে—মানুষ যেন নির্বিঘ্নে বইমেলায় আসতে পারে এবং পছন্দের বইগুলো কিনতে পারে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে হবেরিকমা আক্তার, শিক্ষার্থী, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
Advertisement
বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন-পুরাতন লেখকের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে বইমেলা। বইমেলা শুধু বই ক্রয়-বিক্রয়ের জায়গা নয়। আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সবকিছুতেই আসছে সংস্কার, নতুনত্ব। বইমেলা নিয়েও রয়েছে আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা। নতুন লেখকদের সৃষ্টিশীল চিন্তা-ভাবনা প্রকাশের অন্যতম জায়গা হতে পারে। পাশাপাশি শিশু এবং তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ছবি, রংতুলির আঁচড়ে শিশু প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে। তাদের বইয়ের প্রতি কৌতূহলী করা যেতে পারে। বইমেলায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রকাশনার আয়োজন করা যেতে পারে। বইমেলা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভাষা ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম জায়গা হয়ে উঠুক। বইমেলা থাকুক নতুনত্ব, সৃষ্টিশীল চিন্তা-ভাবনা এবং সব বয়সী মানুষের মনের খোরাক হয়ে।
শুধু বই হাতে ছবি নয়, পড়াতেও গুরুত্ব দিতে হবেতানজিলা আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা
অমর একুশে বইমেলার প্রসঙ্গ এলেই বইপ্রেমী মানুষের উৎসাহের সীমা থাকে না। তবে বইপড়া কারো শখ, কারো নেশা কিংবা সুন্দর মলাটের বই সংরক্ষণ করা কারো অভ্যাস। অভ্যাস যেমনই থাকুক না কেন, জ্ঞান আহরণ করার একটি সহজলভ্য এবং দুর্দান্ত মাধ্যম বই। জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি রয়েছে জীবনমুখী অনেক সমস্যার সমাধান। ফেব্রুয়ারি মাসের বৃহৎ এই বইমেলাকে শিক্ষণীয়, থ্রিলার, রোমান্টিক, বিনোদনমূলক বইসাম্রাজ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন বইপ্রেমীরা। তবে বর্তমানে বইমেলা আয়োজনের উদ্দেশ্যের ছোট একটি অংশ ব্যাহত হচ্ছে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা ও আকর্ষণে যেমন পাঠকেরা বইমেলায় ভিড় জমান, পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের অনেকের মাঝে দেখা যায় বই কেনায় অনীহা। বইমুখী করার মহৎ উদ্দেশ্য কেবল বিভিন্ন স্টলে বই হাতে নিয়ে আলোকচিত্র ধারণ করাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তাই নিজের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে বইপড়ার উপকারিতা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজন ভিন্নধর্মী আয়োজন। তবেই নতুন বাংলাদেশ পাবে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সুস্থ একটি তারকা প্রজন্ম।
আরও পড়ুন
Advertisement
বইমেলার প্রতিটি দিন হোক জ্ঞানের উৎসবগৌরাঙ্গ সরকার, শিক্ষার্থী, সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা
অমর একুশে বইমেলা বাঙালির সংস্কৃতি, ভাষা ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির মেলাটি নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। এটি কেবল একটি বইমেলা নয়; বাঙালির সৃষ্টিশীলতার মিলনমেলা। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মিলিত করে। এ মেলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক বিশাল উৎসব। আজকের পরিবর্তিত বাংলাদেশে বইমেলাও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। ই-বুক, অডিও বুক এবং অনলাইন প্রকাশনার মাধ্যমে বইয়ের জগতে এসেছে নতুনত্ব। তবে মলাটবন্দি বইয়ের মিষ্টি গন্ধ, পৃষ্ঠা উল্টানোর মায়া এবং বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে গল্প করার যে আনন্দ—তা কখনোই হারিয়ে যায়নি। অমর একুশে বইমেলা তরুণ প্রজন্মকে বইপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। এটি কেবল বই কেনাবেচার জায়গা নয়। বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গৌরবের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম। ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় স্মৃতিকে স্মরণ করে বইমেলার প্রতিটি দিন হোক জ্ঞানের উৎসব।
বইয়ের বিস্তারিত তথ্য সহজলভ্য করুনরাইহান উদ্দিন, শিক্ষার্থী, টঙ্গী সরকারি কলেজ, গাজীপুর
বছর ঘুরে বইপ্রেমীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফিরে এসেছে অমর একুশে বইমেলা। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের সম্মিলনে গড়ে ওঠা বইমেলা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহনের পাশাপাশি নিঃসন্দেহে দেশের সর্ববৃহৎ বইমেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বইমেলায় বইয়ের প্রচারণার জন্য যে ব্যবস্থা আছে; তাতে পাঠক এলেও বই কিনতে খুব একটা আগ্রহী হোন না। সহজে তাদের মনের মতো বই খুঁজে পান না। তাই হতাশ হয়ে অনেককেই দেখা যায় বই না কিনে ফিরতে। লেখক-প্রকাশকদেরও এ নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। আমার চাওয়া, প্রচারণার আয়োজন থেকেই যেন পাঠক ভালো বইয়ের তথ্য পেতে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এ ব্যবস্থাকে খানিকটা ঢেলে সাজালে এটি খুবই সম্ভব। এসব কাজের জন্য কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন অনেক ধারণা উঠে আসবে। আমার বিশ্বাস, এতে বইপ্রেমীদের পাশাপাশি লেখক-প্রকাশকরাও তাদের বই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে উপকৃত হবেন।
বইমেলায় কোনো প্রকার বৈষম্য রাখা না হোককামরান চৌধুরী, তরুণ কবি
নতুন বছর শুরু হলেই যেসব বিশেষ দিনের অপেক্ষায় থাকি, তার মধ্যে অমর একুশে বইমেলা অন্যতম। ভাষা দিবসের এ মাসে বইমেলা ছাড়া চিন্তা করা যায় না। নতুন বাংলাদেশের নতুন দিনে বইমেলা নিয়ে আমার প্রত্যাশা আগের চেয়ে একটু বেশি। বিগত বছরে স্বৈরাচারী শাসকের এক রকমের জুলুমের কারণে যে প্রকাশনীগুলো স্থান পায়নি। এবার সেসব প্রকাশনীও স্টল পেতে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সাহিত্যপাড়া কিংবা বইমেলায় কোনো প্রকার বৈষম্য রাখা না হোক। তবে হ্যাঁ, যেসব বই সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের জন্য ক্ষতিকর; সেসব বই মেলার স্টলগুলোতে যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আশা করি, এ বছর অমর একুশে বইমেলা গতবারের তুলনায় বেশ জমজমাট হবে। লেখক-পাঠকদের মিলনমেলায় ভিন্ন রূপে শোভা পাবে আমাদের বইমেলা। বেশি বেশি বই কিনে পাঠকেরা বাড়ি ফিরে যাবেন। এ আনন্দ লেগে থাকুক প্রতিটি বইমেলায়—এটাই প্রত্যাশা।
এসইউ/এমএস