কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কলেজের ৪টি দামি গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত দুই নেতা হলেন উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম নান্নু এবং আরেক সদস্য আলাউদ্দিন বাদল।
Advertisement
শুক্রবার ছুটির দিনে কলেজের কাউকে না জানিয়ে গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দেন তারা। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে গাছ কাটার প্রতিবাদে রোববার বিক্ষোভ করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টার জানিয়েছেন, কলেজ চত্বরে বেশ কিছু মেহগনি গাছ লাগানো ছিল। কলেজে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সেখান থেকে ৩৫টি ছোট ছোট গাছ নিলামে বিক্রি করা হয়। কয়েকদিন ধরে সেসব গাছ কাটা হয়। এ সুযোগে উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ও বিএনপির সদস্য আরিফুল ইসলাম মাস্টার এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আরেক সদস্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে মোটা মোটা ৪টি গাছ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন কাঠ ব্যবসায়ী হাবিব ও মোশারফ হোসেন মোশার কাছে। শুক্রবার সকালে বিএনপির ওই দুই নেতার উপস্থিতিতে চারটি গাছ কেটে নিয়ে যান হাবিব ও মোশারফের লোকজন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, এই দুজন কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য মনোনীত হলেও আদালতের মাধ্যমে সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়। তবে এখনো তারা নিজেদের গভর্নিং বডির সদস্য দাবি করেন।
Advertisement
নিলামের মাধ্যমে গাছ কেনেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আলামিন। নিলামের বাইরে ৪টি গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, ছোট ছোট ৩৫টি গাছ নিলামের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকায় ক্রয় করি। ভ্যাট দিয়ে সর্বমোট ৪২ হাজার টাকা হয়। ৮ হাজার টাকা লাভে গাছগুলো (৩৫টি) ৫০ হাজার টাকায় কাঠ ব্যবসায়ী হাবিব ও মোশারফের কাছে বিক্রি করি। পরে যে চারটি বড় গাছ কাটা হয়েছে সেগুলো নিলামের চিহ্ন দেওয়া ৩৫টি গাছের মধ্যে ছিল না। এগুলো কেন কাটা হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে আরিফুল ইসলাম নান্নু ও আলাউদ্দিন বাদলের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে।
দৌলতপুর কলেজের পিয়ন আব্দুল জলিল বলেন, নিলামে বিক্রি করা গাছের সঙ্গে অতিরিক্ত চারটি গাছ শুক্রবার কাঠ ব্যবসায়ী হাবিব ও মোশারফের লোকজন কেটে নিয়ে যায়। আরিফুল ইসলাম নান্নু ও আলাউদ্দিন বাদলের নির্দেশে গাছ কাটা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বিষয়টি কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুস সালাম স্যারকে অবগত করেছি।
অতিরিক্ত গাছ কাটার বিষয়ে কাঠ ব্যবসায়ী হাবিব ও মোশারফ বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই ৪টি গাছ কাটা হয়েছে।
দৌলতপুর কলেজের উপাধ্যক্ষ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) আব্দুস সালাম বলেন, অতিরিক্ত গাছ কর্তনের বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ব্যক্তিগত কাজে আমি রাজশাহীতে। কলেজে যাওয়ার পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
Advertisement
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, নিলামের মধ্যে বড় কোনো গাছ কাটার সিদ্ধান্ত ছিল না। বিষয়টি শোনার পরপরই বনবিভাগের কর্মকর্তাকে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। নিলামের বাইরে কোনো গাছ কাটা হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ নিয়ে অভিযুক্ত উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম নান্নু গাছ কাটর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অভিযুক্ত অপর বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন বাদল দাবি করেন, কেবল নিলামকৃত গাছগুলোই কাটা হয়েছে। এর বাইরে কোনো গাছ কাটা হয়নি।
আল-মামুন সাগর/এমএইচআর/জেআইএম