গত দুই মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এরপরও চালের বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। দাম কমার কথাতো দূরে থাক কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা।
Advertisement
এদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাল আমদানির মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারিভাবে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করতে পারবেন।
আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেশি। তাই আমদানি করা চালের দামও বেশি। সেজন্য বর্তমান সময়ে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন ধান-চালের ভরা মৌসুম, কৃষকের ঘরে উঠেছে আমন ধান। তারপরও সাধারণ মানুষকে বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে।
বন্দর সূত্র জানায়, গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। সরকার গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির অনুমোদন দেয় তিন লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ের মধ্যে আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করে চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি করে। এরপরও বাজারে চালের দাম না কমায় ভারত থেকে আমদানির জন্য আবারো ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানির সময় বাড়ানো হয়েছে।
Advertisement
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, মাহবুবুল আলম ফুড প্রডাক্ট, অর্ক ট্রেডিং, সর্দার এন্টারপ্রাইজসহ আটটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেনাপোল বন্দর দিয়ে এ চাল আমদানি করেছেন।
এ পর্বে ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এতে দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি পায়। অনেক প্রতিষ্ঠান এ স্বল্প সময়ের মধ্যে চাল আমদানি করতে পারেনি।
বেনাপোল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, বাজারে মোটা চাল ৫২ টাকা, হীরা চাল ৪৮ টাকা, উনপঞ্চাশ চাল ৫৬ টাকা, আঠাশ চাল ৫৮-৬০ টাকা, জিরা মিনিকেট ৭৫ টাকা, ইন্ডিয়ান মিনিকেট ৭৫ টাকা, বাসমতি ৯০, পাইজাম ৫৬ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
নাভারণ বাজারের চৌধুরী রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী রাশেদ চৌধুরী বলেন, হাইব্রিড মোটা চাল ৫১ টাকা ও স্বর্ণা মোটা চাল ৫৩ টাকা কেজি পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। নতুন ধানের চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। অপরদিকে ভারত থেকে ও আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। এখন থেকে চালের দাম কমতে থাকবে। যদিও এবার অতিবৃষ্টির কারণে চালের উৎপাদন কমেছে। সে কারণে চাল আমদানি চলমান থাকবে।
Advertisement
বেনাপোল বাজারে চাল কিনতে আসা সেলিম রেজা বলেন, এখন ধানের মৌসুম, আবার ভারত থেকে টন-টন চাল আমদানি হচ্ছে। তারপরও চালের দাম কমছে না কেন। প্রতিবছর এ সময় নতুন ধান উঠলে বাজারে চালের দাম অনেক কমে আসে। কিন্তু এবার বাজারের চিত্র উল্টো।
রাসেল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এবার পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হয়েছে। তারপরও দাম কমছে না কেন। আমরা গরিব মানুষ, দাম না কমলে কীভাবে চলবো? হয়তো সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তাই আমি মনে করি, প্রশাসন বাজারে নজরদারি করলে দাম অনেকটা কমে যাবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) কাজী রতন জানান, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দুমাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হয়েছে। যেহেতু চাল একটি নিত্যপণ্য এবং দেশের বাজারে চাহিদা ব্যাপক, সেহেতু আমদানিকৃত চাল বন্দরে আসা মাত্র আমরা দ্রুত ছাড় করণের ব্যবস্থা করছি।
মো. জামাল হোসেন/আরএইচ/এমএস