জাতীয়

বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজ গণপূর্তের, করছে মন্ত্রণালয়গুলো

সচিবালয়ে কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগে স্থাপন করা ইলেকট্রনিক যন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরের। কিন্তু নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করে তাতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিচ্ছে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এতে তৈরি হচ্ছে অগ্নিঝুঁকি।

Advertisement

নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করায় অভ্যন্তরীণ পুরোনো বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ওভারলোড হচ্ছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বৈদ্যুতিক অগ্নি-দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণও এই ওভারলোড বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার কারণ হিসেবেও বলা হয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগের দুর্বলতা। বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে গঠিত এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।

সম্প্রতি বৈদ্যুতিক সংযোগ ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য সচিবালয়ের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের ইলেকট্রো মেকানিক্যাল (ই/এম) বিভাগ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরপর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো মানার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

Advertisement

কোনো কোনো মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করছে। এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে প্রভাব ফেলছে। অগ্নিঝুঁকি তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এটি করার কথা। সে বিষয়েও আমরা আরেকটি চিঠি দিয়েছি।- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদার

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) মো. আব্দুর রহমান তরফদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন কক্ষের বাইরে থাকেন, তারা যাতে তাদের এসি, ফ্যান, কম্পিউটার, লাইটসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখেন। অফিস থেকে যাওয়ার সময়ও যাতে তারা এগুলো বন্ধ করা হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে বের হন। এতে আগুন লাগার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। এ বিষয়গুলো ঠিকভাবে মানার জন্য আমরা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া আরেকটি বিষয় দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করছে। এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে প্রভাব ফেলছে। অগ্নিঝুঁকি তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এটি করার কথা। সে বিষয়েও আমরা আরেকটি চিঠি দিয়েছি।’

আরও পড়ুন সচিবালয়/মানা হয়নি ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশ, সাজসজ্জায় বেড়েছে অগ্নিঝুঁকি সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন: ৬ থেকে ৯ তলা পুড়ে ছাই সচিবালয়ে আগুন ‘রিমোট কন্ট্রোল’ দিয়ে নাকি অন্য কিছু?

গণপূর্তের ইলেকট্রো মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে এ বিষয়ে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুটি চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব।

Advertisement

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিগত চার/পাঁচ মাসের মধ্যে আমাদের বিভাগে এসিসহ বড় ধরনের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থাপন করা হয়নি। এর আগে হয়েছে কি না জানা নেই।’

গত ২ জানুয়ারি গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ মো. তানভীর আলমের সই করা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন- লাইট, ফ্যান, এসি, ফ্রিজ, ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলি, হিটার ইত্যাদির নতুন বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ভবনের অফিস কক্ষে নিজ ব্যবস্থাপনায় নতুন এসি স্থাপনসহ অন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নতুন সংযোগ স্থাপন করার ফলে অভ্যন্তরীণ পুরাতন বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ওভারলোড হচ্ছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বৈদ্যুতিক অগ্নি-দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভবনগুলোতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নতুন সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৪ থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। চিঠিটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখায়ও পাঠানো হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের এসি লাগানো হয়েছে গণপূর্ত বিভাগের অনুমতি ছাড়া।

এর আগে ১ জানুয়ারি গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর পাঠানো অপর চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে গত ২৬ ডিসেম্বর সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ফলে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সচিবালয়ের অন্য ভবনে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে অফিসকক্ষের অপ্রয়োজনীয়/ডেকোরেটিভ লাইট, ফ্যান, এসি, কম্পিউটারসহ অন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পরিমিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস কক্ষের বাইরে অবস্থানকালে ও অফিস শেষে অফিস কক্ষ ত্যাগের আগে এসি, ফ্যান, লাইট ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির সব সুইচ বন্ধ রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

এ দুটি চিঠির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ৯ জানুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

গত ২৫ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আগুন লাগার ঘটনায় পুড়েছে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলা। এ চার তলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অফিস ছিল। ২৫ ডিসেম্বর দিনগত রাত ২টার কিছু আগে আগুন লাগে, ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগুন পুরোপুরি নিভতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা।

এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’ থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

আরএমএম/এএসএ/এএসএম