দেশজুড়ে

ছাত্রলীগের ভেবে জামায়াত নেতার মাছ লুট করলেন বিএনপি কর্মীরা

যশোরের মণিরামপুরে জামায়াত নেতার আলমসাধু (মোটরচালিত ভ্যান) ভর্তি মাছ লুট করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘেরের মাছ মনে করে জামায়াত নেতার মাছ লুট করা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

Advertisement

আলমসাধু ভর্তি মাছ লুটের ঘটনা সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজেও ধরা পড়েছে। গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে মণিরামপুর উপজেলার কালিবাড়ি মোড় থেকে কপালিয়া বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে আলমসাধুতে করে মাছ আড়তে নেওয়ার সময় এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শনিবারের এই ঘটনা রোববার বিকেলে প্রকাশ্যে এলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের বাড়ি মণিরামপুরের দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে। স্থানীয় ঘুঘুদা বিলে তার মাছের ঘের রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় তৌহিদ নামে এক ব্যক্তির কাছে ঘের দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান লেখক। তৌহিদ ঘেরের মাছ ধরে বিক্রি করেন। এতে বিএনপির কয়েকজন বাধা দেন। একপর্যায়ে শনিবার দুপুরে লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘের থেকে মাছ ধরে আলমসাধুযোগে কপালিয়া বাজারে বিক্রির উদ্দেশে পাঠানো হয়।

এদিকে একই সময়ে নিজেদের ঘেরের মাছ ধরে অন্য এক আলমসাধু যোগে কপালিয়া বাজারে আড়তে পাঠান জামায়াত নেতা লিয়াকত হোসেন ও আবু নসরসহ ঘেরের অংশীদারেরা। পথিমধ্যে কালিবাড়ি মোড় থেকে কপালিয়া বাজারে নেওয়ার পথে জামায়াত নেতাদের সেই মাছ লুট করে নেন স্থানীয় বিএনপির কর্মী মাহবুর রহমান, রাজীবসহ কয়েকজন। যার দৃশ্য মনোহরপুর বাজারের সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়ে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মূলত লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘের থেকে ধরা মাছ লুট করতে গিয়ে তথ্যের ভুলে জামায়াত নেতার মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। মাছ বিক্রির টাকা হজম করতে না পেরে শনিবার রাতে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন মাছ লুটে অভিযুক্তরা।

Advertisement

কুলটিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আবু নসর বলেন, ‘এলাকায় আমাদের তিনটি ঘের আছে। আমাদের সাবেক থানা আমির লিয়াকত হোসেনসহ কয়েকজন ঘেরে মাছ চাষ করি। শনিবার দুটো ঘের থেকে ১৮-২০ মণ মাছ ধরে আলমসাধুতে করে কপালিয়া বাজারে আড়তে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়ে। রাস্তায় কিছু লোক আলমসাধুসহ মাছ ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়।’

আবু নসর বলেন, ‘লুট করা মাছ তারা ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রির কথা স্বীকার করেছে। চাপ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধার করেছি। এলাকার কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িত আছে। সব তথ্য উদ্ধারের পর নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে থানায় অভিযোগ করার কথা ভাবছি।’

নেহালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, ‘শনিবার বিকেলে জামায়াত নেতা লিয়াকত হোসেনের কাছে মাছ ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনে আমরা তৎপর হই। পরে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে মাহাবুব ও রাজিব নামে দুজনকে চিহ্নিত করা গেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে মাছ বিক্রির টাকা উদ্ধার করে লিয়াকত হোসেনের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। রাজিব ও মাহাবুব বিএনপির রাজনীতি করে। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, ‘মাছ লুটের কোনো ঘটনা জানা নেই। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Advertisement

মিলন রহমান/এফএ/জিকেএস