দেশজুড়ে

কুমিল্লা বিসিকের রাস্তায় শীতেও ভোগাচ্ছে বর্ষার পানি

চলছে শীত মৌসুম। দেখা নেই বৃষ্টির। তবুও মূল সড়কে রয়েছে বর্ষার জলাবদ্ধতা। খানাখন্দে বেহাল দশা সড়কের। এমন সড়কেই চলাচল করে পণ্যবাহী যানবাহন। ময়লা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে ড্রেন। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলে এই দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। ডুবে যায় এলাকার প্রায় সড়ক। ময়লা পানি মাড়িয়ে চলতে হয় কারখানার মালিক, কর্মচারী ও ক্রেতাদের। মশা-মাছির উপদ্রবতো আছেই। প্রায় অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার সড়কের এমন দশা।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, বিসিকের প্রধান সড়কের মাঝখানে পানি জমে রয়েছে। ময়লা পানি মাড়িয়ে পার করা হচ্ছে মালামাল। চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। হঠাৎ যে কেউ দেখলেই মনে করবে মুক্ত জলাশয়।

এদিকে বিসিকে প্রবেশের পথেই চোখ পড়লো সড়কের দুই পাশে ড্রেনগুলো সরু হয়ে গেছে। ময়লা আবর্জনা জমে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় বাতাসে ভাসছে দুর্গন্ধ। এছাড়া বিসিকের ভেতরে দুই একটি সড়কের মেরামত কাজ করলেও প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ সড়কের অবস্থা বেহাল। মশা-মাছির উপদ্রবের কারণে এক স্থানে ২-৩ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টসাধ্য। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে কুমিল্লা বিসিক।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কুমিল্লা সূত্র জানায়, ৬৫ বছর আগে ৫৪ দশমিক ৩৫ একর জায়গায় স্থাপিত হয় বিসিক কুমিল্লা অঞ্চল। ওই সময় প্লট সংখ্যা ছিল ১৫৫টি। এর মধ্যে ৬টি প্লটে প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন এবং ওয়াটার ট্যাংক স্থাপন করা হয়। বাকি ১৪৯টি শিল্প প্লটে ১৪২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দেওয়া হলেও এর মধ্যে বন্ধ ও রুগ্ণ রয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে পুরোদমে সচল রয়েছে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজারের অধিক মানুষ কাজ করছে।

Advertisement

এই শিল্প এলাকায় রয়েছে একাধিক টেক্সটাইল মিল, স্টিল মিল, অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, সিলভার, প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানা, মৎস্য জাল, আয়ুর্বেদিক পণ্য তৈরির কারখানা, ছাপাখানা, আটা ও পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা এবং বেকারিসহ বেশ কয়েকটি ফুড কারখানা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মালিক ও কর্মচারী বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লা বিসিকের রাস্তা-ঘাট ও ড্রেনসহ পুরো এলাকার বেহাল দশা। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান ধরে আছে। এ অবস্থায় মালামাল আনা নেওয়াসহ চলাফেরায় চরম কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ দুর্ভোগ থেকে আমরা স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ চাই।

অশোকতলা এলাকার সালমান মিয়া বলেন, এ সড়ক ধরেই আমাদের চলতে হয়। বছরের ১২ মাসই সড়কে পানি থাকে। একটু বৃষ্টি হলেতো কথাই নেই। হাঁটুপানি মাড়িয়ে বাসায় যেতে হয়। এটাই আমাদের এলাকার বড় বদনাম। কবে আমাদের এই দুঃখ শেষ হবে, আল্লাহই ভালো জানেন।

ভ্যানচালক আবদুল মালেক বলেন, রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা, কারখানা থেকে মাল নিয়ে বের হতে জীবনটা শেষ। এত কষ্ট কুমিল্লা সিটির অন্য কোনো রাস্তায় হয় না। ২/১ দিন পর পর গাড়ির কাজ করাতে হয়। স্যারেরা যদি আমাদের কষ্ট বুঝতেন রাস্তাগুলো আরও আগেই মেরামত করতেন।

Advertisement

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন বলেন, বিসিকের ভেতরে কয়েকটি সড়কের কাজ এরইমধ্যে সংস্কার করেছি। প্রধান সড়কসহ আরও একাধিক সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার চাহিদা জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি আগামী অর্থ বছরে এর অনুমোদন পাবো। এরপর বাকি সড়কগুলোর কাজ শুরু করবো।

বছর জুড়ে সড়কে জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন বিসিকের সামনের সড়কটির যখন কাজ করে, উঁচু না করে ঢালাই দিয়ে চলে যায়। যার কারণে নগরীর ঠাকুরপাড়া, রানীর বাজার, অশোকতলা এলাকার বৃষ্টির পানি এদিকে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তাদের জানিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

এফএ/জেআইএম