মেহেরপুরে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এবার মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
Advertisement
নতুন পেঁয়াজ উঠার পর জেলার বাজারগুলোতে দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। ন্যায্যমূল্যে না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার পেঁয়াজ চাষিরা।
এবার জেলায় তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১, লাল তীর কিং, মেটাল কিং এবং কিং সুপার জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
গত মাসের প্রথম দিকে বাজারে পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের দরপতন হয়েছে। জেলার খুচরা বাজারগুলোতে এখন প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে।
Advertisement
মেহেরপুর বড়বাজারে নতুন পেঁয়াজের সঙ্গে পুরোনো পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। তবে, পুরোনো পেঁয়াজের তুলনায় ক্রেতারা নতুন পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহী।
পেঁয়াজ চাষিরা বলছেন, ভর মৌসুমে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করে দেশীয় পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে জেলা কৃষিবিভাগ বলছে, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও একসঙ্গে বাজারজাত করায় দাম কমে গেছে। কিছুদিন সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারলে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যে পাবেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। অথচ, গত মৌসুমে এ জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল মাত্র ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কয়েক বছর পেঁয়াজের দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় এ বছর চাষিরা দ্বিগুণের বেশি পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
Advertisement
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সমসের আলী। তিনি এ বছর আট বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে মজুরি, সার ও কীটনাশক, বীজ কেনা এবং লিজ খরচ দিয়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
পেঁয়াজ চাষি সাইদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি জানান, বিঘা প্রতি জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজের ফলনও কম হচ্ছে। গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৮০-১০০ মণ পেঁয়াজ পেলেও এ বছর বীজে সমস্যা থাকায় উৎপাদন হচ্ছে ৬৫-৭৫ মণ।
বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষির ঘরে আসছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ চাষে উচ্চমূল্যে বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ করতে যেয়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। সেই হিসাবে পেঁয়াজ উত্তোলনের ভরা মৌসুমে দরপতনে চাষির মাথায় হাত।
চাষিরা বলছেন, এ লোকসান থেকে বাঁচতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পেঁয়াজ চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আমি গেল মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। দাম ভালো পাওয়ায় এবার ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এক বিঘা পেঁয়াজ চাষে লিজসহ খরচ হয় অন্তত ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৭০-৭৫ মণ। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের মারাত্মকভাবে দরপতন হওয়ায় চাষের অর্ধেক খরচ উঠছে না। মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে।
কৃষক রাফিউল বলেন, এ বছর লিজ নিয়ে ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজের ফলনও কম, আবার দরপতন। সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
আরেক কৃষক জামিরুল ইসলাম জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। চাষে মোট খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এ জমিতে পেঁয়াজ পেয়েছেন ৯৫ মণ। প্রতি মণ ৬০০ টাকা কেজি দরে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, চলতি মৌসুমে চাষিরা গতবারের তুলনায় এবছর দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তবে পেঁয়াজের বাজারে দরপতনে অনেক চাষি লোকসানে পড়বেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরের বাজার খোঁজ করে কিছুটা লোকসান কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আসিফ ইকবাল/জেডএইচ/এএসএম