দেশজুড়ে

তিনটি গরু দিয়ে যে গল্পের শুরু

তিনটি গরু দিয়ে যে গল্পের শুরু

শহরে চাকরির পেছনে না ছুটে নানান জটিলতা কাটিয়ে দাঁড় করিয়েছেন নিজেদের পরিচয়। খামার করার পরিকল্পনা থেকে ২০২২ সালে মাত্র তিনটি গরু নিয়ে যে পথচলার শুরু, আজ তার পরিণতি ২২টি গরুর একটি পূর্ণাঙ্গ খামার। খামারের নাম দিয়েছেন ইনসান অ্যাগ্রো। এ সংগ্রামের গল্প খুলনার দুই ভাই জোবায়ের আব্দুল্লাহ ও জুনায়েদ আব্দুল্লাহর। জোবায়ের বয়সে বড় এবং জুনায়েদ ছোট। যারা নিজেদের উদ্যম ও শ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন স্থানীয় তরুণদের অনুপ্রেরণা।

Advertisement

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইনসান অ্যাগ্রো খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার মল্লিকের মোড় নামক স্থানে অবস্থিত। প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর এ খামার তৈরি করা হয়েছে। গরুর গোয়ালঘর রয়েছে, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে, গরুর খাবার প্রস্তুতের জন্য আলাদা ঘর রয়েছে, খামারে থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

জোবায়ের আব্দুল্লাহ এবং জুনায়েদ আব্দুল্লাহ জানান, প্রথমদিকে সঞ্চয় এবং কিছু ঋণের মাধ্যমে ছোট পরিসরে তিনটি গরু নিয়ে খামার শুরু করেন। সেই সময় গরুর খাবার, ওষুধ এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। কিন্তু পিছপা হননি তারা। জটিলতা কাটিয়ে ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ খামার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে খামারে একটি পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।

আরও পড়ুন

Advertisement

জমেনি হাট, বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা কোরবানির হাট মাতাবে ফরিদপুরের ‘রাজাবাবু’

চ্যালেঞ্জ এখনো পিছু ছাড়েনি

জোবায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথম বছরটা অনেক কষ্টে গেছে। গরুর খাবারের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। বাজার থেকে গরু কিনতে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়। সবকিছু ম্যানেজ করতে গিয়ে আমরা প্রায় ঋণের বোঝায় পড়ে যাই। গ্রামের আশপাশে পশুচিকিৎসার জন্য ভালো ডাক্তার না থাকায় অনেক সময় গরু অসুস্থ হলে ঠিক সময়ে চিকিৎসা মেলেনি। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়েছে।

প্রথমদিকে সঞ্চয় এবং ঋণের মাধ্যমে ছোট পরিসরে তিনটি গরু নিয়ে খামার শুরু করেন। সেই সময় গরুর খাবার, ওষুধ এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। কিন্তু পিছপা হননি তারা। জটিলতা কাটিয়ে ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ খামার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে খামারে একটি পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এরপর ধাপে ধাপে ইউটিউব দেখে শিখে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এরপর একটা সময় নিজেদের সুবিধা মতো খামারের ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছি। নিজেরাই ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা, প্রজনন ও চিকিৎসার বিভিন্ন দিক শিখেছি। পরে খামারটি ধীরে ধীরে আধুনিক করতে পেরেছি। বর্তমানে আমাদের খামারে ২২টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে সব গরু কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটির ওজন গড়ে ১৫০-৪৫০ কেজি।

Advertisement

পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা হয়েছে গরু-ছবি জাগো নিউজ

জুনায়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিটি গরু অনেক যত্ন করে বড় করেছি। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে গরু কিনেছি। খাবার, পানি, পরিচ্ছন্নতাসহ সবকিছুর ওপর জোর দিচ্ছি। সময়মতো খাবার দেওয়া, গোসল করানো এবং পরিচর্যা করা হয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। গরুর বাসস্থান নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। খামারের আশপাশে রোজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে শুরুর সময় খামারের বিষয়টা আমাদের কাছে অনেক কঠিন ছিল। তবে হাল ছাড়িনি। লেগে থাকতে থাকতে একটা সময় সবকিছুই আমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন

বিশালাকৃতির ৩ ষাঁড়, একসঙ্গে কিনলে ওমরাহ ফ্রি দুধ দিচ্ছে পাঁঠা, দেখতে মানুষের ভিড়

জুনায়েদ আরও বলেন, ব্যবসার থেকে বড় বিষয় হলো দায়িত্ব। দায়িত্ব নিয়ে গরু লালন-পালন করছি বলে আজ আমাদের কাছে খামার ব্যবসা এবং গরু পালন সহজ মনে হচ্ছে। বর্তমানে খামারের সব গরু এবার কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত।

প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জোবায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের স্বপ্ন খামার আরও বড় করা। স্বয়ংসম্পূর্ণ খামার গড়ে তুলতে পারলে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। পাশাপাশি নিজেদের সচ্ছলতাও ফিরে আসবে।

এক বিঘা জায়গার ওপর ইনসান অ্যাগ্রো-ছবি জাগো নিউজ

তিনি আরও বলেন, সরকার সহযোগিতা করলে খামার ব্যবসা গতি পাবে। বিশেষ করে খামার ব্যবসায় গরুর খাবার কিনতে খামারিরা হিমশিম খান। গরুর খাবারে ভর্তুকি দিলে অনেকটা লাভের মুখ দেখতে পাবেন খামারিরা। এছাড়া ভালো পশুচিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা হলে আরও বড় পরিসরে খামার গড়ে তুলতে পারবেন উদ্যোক্তারা।

খামার ব্যবসা খুব ভালো। বাসার কাছে হওয়ায় মাঝে মধ্যে ঘুরতে ইনসান অ্যাগ্রোতে যাই। দুই ভাইয়ের উদ্যোগ খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে খামারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটা খুব সুন্দর। অনেক খামার থেকে দুর্গন্ধ আসে। কিন্তু এখানে তা পেলাম না। তবে তরুণরা উদ্যোগী হলে সবার জন্যই ভালো।

জুনায়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, খামার ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিকায়ন করার ইচ্ছা আছে। অনেকে খামার ব্যবসায় আগ্রহ দেখালেও ব্যবস্থাপনার অভাবে হোঁচট খান, যা একটি প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে সামনে আরও বড় পরিসরে ব্যবস্থাপনা এবং জনবল কাজে লাগিয়ে বড় পরিসরে খামারকে রূপান্তর করবো।

আরও পড়ুন

‘বাদশা’র ওজন ৩৫ মণ, কিনতে লাগবে ১৫ লাখ টাকা সিরাজগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক, বাদ যাচ্ছে না কোনো রাত!

ইনসান অ্যাগ্রোতে কর্মরত মো. শাহেদুল গাজী বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে খামারেই থাকেন। ২৪ ঘণ্টা গরু দেখভাল করেন। প্রথমে এ কাজ একটু কঠিন মনে হলেও এখন গরু পরিচর্যার কাজ তাকে অনেক আনন্দ দেয়।

খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে একটি পরিবারের-ছবি জাগো নিউজ

তিনি জানান, সকাল ৯টার মধ্যে গরুর খাবার দেন। এরপর দুপুর ১টার মধ্যে দুপুরের খাবার দেন। তারপর বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে রাতের খাবার। এছাড়া অনেক গরম পড়লে গরুর গা মুছে দেওয়া এবং নিয়মিত গোসল করানো হয়।

মল্লিকের মোড়ের স্থানীয় বাসিন্দা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, খামার ব্যবসা খুব ভালো। বাসার কাছে হওয়ায় মাঝে মধ্যে ঘুরতে ইনসান অ্যাগ্রোতে যাই। দুই ভাইয়ের উদ্যোগ খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে খামারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটা খুব সুন্দর। অনেক খামার থেকে দুর্গন্ধ আসে। কিন্তু এখানে তা পেলাম না। তবে তরুণরা উদ্যোগী হলে সবার জন্যই ভালো।

বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ইনসান অ্যাগ্রো ফার্মসহ বেশকিছু খামার সম্প্রতি পরিদর্শন করা হয়েছে। তারা নিয়মকানুন মেনেই খামারে গরু লালন পালন করছেন। এছাড়া ভ্যাক্সিন দেওয়া এবং খামারিদের জরুরি প্রয়োজনে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি।

এসএইচএস/এমএফএ /এমএস