সংবিধান সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে তাতে চার বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং ২১ বছর বয়সে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
Advertisement
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। পরে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে।
কেমন সংসদ হবে সে বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করছে। একটি নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং একটি উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে ৪ বছর।
নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে ৪০০ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে আলী রীয়াজ কমিশন। যেখানে ৩০০ জন সদস্য সমান সংখ্যক সংসদীয় এলাকা থেকে নির্বাচিত হবেন। আর ১০০টি নির্বাচনী এলাকা থেকে ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন ১০০ নারী সংসদ সদস্য।
Advertisement
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, ‘নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ (চারশো) আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে।
‘৩০০ (তিনশো) জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। আরও ১০০ জন নারী সদস্য দেশের সব জেলা থেকে এ মর্মে নির্ধারিত ১০০ (একশটি) নির্বাচনী এলাকা থেকে কেবল নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।’
নিম্নকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করার সুপারিশ রেখেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
আরও পড়ুন
Advertisement
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বর্তমান বয়স ন্যূনতম ২৫ বছর থেকে কমানোর সুপারিশে করে কমিশন বলছে, ‘সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করা হবে।’
কমিশন সুপারিশ করেছে, স্পিকারের পাশাপাশি দুই জন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন, যাদের মধ্যে একজন বিরোধীদল থেকে মনোনীত হবেন।
সুপারিশের বলা হয়, ‘একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে নিম্নলিখিত যেকোনো একটির বেশি পদে অধিষ্ঠিত হবেন না: (ক) প্রধানমন্ত্রী, (খ) সংসদনেতা এবং (গ) রাজনৈতিক দলের প্রধান।’
অর্থবিল ছাড়া অন্য সবক্ষেত্রে নিম্নকক্ষের সদস্যরা যাতে তাদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারে, সেই ‘পূর্ণ ক্ষমতা’ দেওয়ার সুপারিশও করেছে সংস্কার কমিশন।
কমিশনের আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে, আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সবসময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন।
উচ্চকক্ষ সিনেটের গঠন যেভাবেউচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য হবে ১০৫ জন। এর মধ্যে ১০০ জন সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া মোট ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত হবেন।
এর ব্যাখ্যায় কমিশন বলেছে, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন-পিআর) পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ (একশো) জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবেন।’আরও পড়ুন
রেস্তোরাঁসহ কিছু পণ্য ও সেবার ভ্যাট পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত র্যাব নিয়ে যা সুপারিশ করলো পুলিশ সংস্কার কমিশন সোনার দাম বাড়লো, ভরি ১৩৯৪৪৩ টাকাপ্রার্থীদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন ‘আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়’ থেকে রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন।
সুপারিশে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি কোনো সংসদের সদস্য নন বা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, এমন নাগরিকদের মধ্য থেকে অবশিষ্ট ৫টি আসন পূরণ করবেন।
কমিশন বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্বের যোগ্য হতে হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়া ভোটের অন্তত এক শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।
এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস