প্রাথমিকভাবে দেশের ১১ জেলায় ৮১৪ স্থানে এক হাজার ২৩৪ হেক্টর পাহাড় কাটার প্রমাণ মিলেছে। এর বাইরে ছোট ছোট পাহাড় কাটা হয়েছে, সেগুলো এ হিসাবের বাইরে রয়েছে।
Advertisement
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ‘ন্যাচারাল ক্যাপিটাল ম্যাপিং বা দেশের পাহাড় ও টিলাসহ প্রাকৃতিক সম্পদের মানচিত্র প্রণয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মানচিত্র প্রণয়নের কাজ করছে সেন্টার ফর ইনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)। সভায় এ বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দেন সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের ১৬ জেলায় পাহাড় ও টিলা রয়েছে। এসব জেলার ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ হেক্টর জমিতে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬৯টি পাহাড় ও টিলার চূড়া পাওয়া গেছে। ১৬ জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় ৮১৪টি পাহাড় কাটার পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে সরকার। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোতেও পাহাড় কাটার পয়েন্ট চিহ্নিত করা হবে। ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে পাহাড় ও টিলার অস্তিত্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে।
Advertisement
পাহাড় এবং টিলার অবস্থান নিশ্চিত করতে ৪০ কোটি টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট ইমেজ কিনেছে সরকার। ইমেজগুলো বিশ্লেষণ করে অনেক জায়গায় পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে প্রেজেন্টেশনে জানানো হয়।
সভায় জানানো হয়, রাঙ্গামাটিতে ৪৮৮৭২৩ হেক্টর, বান্দরবানে ৪২৯৯৮৯ হেক্টর, খাগড়াছড়িতে ২৫২৬৯৩ হেক্টর, চট্টগ্রামে ১৪০৩২৪ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৯২৮৪৫ হেক্টর, কক্সবাজারে ৭৭৫৫৪ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৩৫২২৬ হেক্টর, সিলেটে ২০৩৫২ হেক্টর, শেরপুরে ৬৩৫১ হেক্টর, কুমিল্লায় ২৮১৪ হেক্টর, নেত্রকোনায় ১০৬৭ হেক্টর, জামালপুরে ১০১৯ হেক্টর, ফেনীতে ৭৫৬ হেক্টর, সুনামগঞ্জে ৬৪৭ হেক্টর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৮৮ হেক্টর এবং ময়মনসিংহ জেলায় ৩৫৭ হেক্টরসহ ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ হেক্টর পাহাড় রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ১১টি জেলায় ১২৩৪ হেক্টর পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে ছোট ছোট আরও পাহাড় কাটা হয়েছে, সেগুলো এ হিসাবের বাইরে রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, কক্সবাজারে ১০৫টি পয়েন্ট ৩২১ হেক্টর, চট্টগ্রামে ১১২টি পয়েন্টে ২৮৯ হেক্টর, বান্দরবানে ২০৭টি পয়েন্টে ২৭৫ হেক্টর, রাঙ্গামাটিতে ২০৯টি পয়েন্টে ১২০ হেক্টর, সিলেটে চারটি পয়েন্টে ৭৮ হেক্টর, কুমিল্লায় ১২টি পয়েন্টে ৫২ হেক্টর, হবিগঞ্জে নয়টি পয়েন্টে ২৮ হেক্টর, ফেনীতে ৯টি পয়েন্টে ৬ হেক্টর, মৌলভীবাজারের চারটি পয়েন্টে এক হেক্টর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি পয়েন্টে এক হেক্টর এবং সুনামগঞ্জের ৮টি পয়েন্টে এক হেক্টর পাহাড় কাটা হয়েছে।
Advertisement
সভায় জানানো হয়, আবুল খায়ের ইন্ডাস্ট্রি সীতাকুণ্ডে ৮১ দশমিক ০৩ হেক্টর পাহাড় কেটে কারখানা করেছে। রামুতে ১৬৭ দশমিক ৮৫ হেক্টর পাহাড় কেটে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে। লালমাই পাহাড়ের ৩৭ দশমিক ৬৫ হেক্টর কেটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে।
রিজওয়ান হাসান বলেন, পাহাড় সরকারও কাটে বেসরকারিভাবেও কাটা হয়। সমতলের অনেক জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। একবার পাহাড় কাটলে আর তৈরির সুযোগ নেই। আমরা দেখছি ইটভাটা করার জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য পাহাড় কাটা যাবে না, এটা আমাদের দর্শন হতে হবে।
দেশে পাহাড় ও টিলার অবস্থান এবং পাহাড় কাটার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান পরিবেশ উপদেষ্টা।
পাহাড় কাটা প্রতিরোধে যাতে সরকার সার্বক্ষণিক তদারকি করতে পারে সেই ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য রিজওয়ানা হাসান সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
আরএমএম/এমএএইচ/