আইন-আদালত

অনেকের সাজা শেষ হলেও আপিল শুনানি না হওয়ায় মুক্তি মিলছে না

গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অনেকের সাজা শেষ হলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল শুনানি শেষ না হওয়ায় তাদের মুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিল দ্রুত শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল আসামিদের পক্ষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এই আবেদন করেন।

আদালতে উপস্থাপিত আর্জির বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় আমার যে আসামি, তার যে সাজা হয়েছিল তিনি সেটা খেটে ফেলেছেন। এখন তার মতো যারা এই মামলার আসামি এবং আপিল আবেদনকারী, তাদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসামিরা কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। তাই মামলাটি দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়েছি।

এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের সাজা বাড়ানোর জন্য করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য এলেও এখনো শুনানি হয়নি।

Advertisement

এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ জুন আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ১১ জনকে খালাস দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া জীবিত ২৬ আসামির মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক থাকায় তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। এসব আসামির মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া দুজন মারা গেছেন।

বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া ১১ আসামি হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির। ১১ জনের মধ্যে তিন আসামি পালাতক রয়েছেন যারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আটজনের মধ্যে সাতজনের বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমেছে এবং বাকি একজনের আগের সাজাই বহাল রয়েছে।

Advertisement

এদিকে, মারা যাওয়া দুই আসামির করা আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। আর মামলার মোট ৩০ আসামির মধ্যে দু’জন বিচারিক আদালতেই খালাস পেয়েছিলেন।

চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ছয়জন হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।

মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন- মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম ওমশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক)। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি হলেন নুরুল আমিন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তার সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত।

বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর মারা যাওয়ায় আল আমিন ও রতন ওরফে ছোট রতনের আপিলের নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট। ৩০ আসামির বাকি দুজন কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু বিচারিক আদালত থেকেই খালাস পেয়েছিলেন।

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসানউল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরদিন আহসানউল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এরপর বিচার শেষে ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশসহ দুজনকে খালাস দেন।

পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল হয়। এরপর ২০১৬ সালে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার রায়ে ছয়জনের ফাঁসি বহাল থাকে। এই মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে নিম্ন আদালতে মোট ২৮ জনের দণ্ড হয়। এর মধ্যে ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এসব আসামির মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া দুজন মারা গেছেন।

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

আবেদন করার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, আমরা খালাসপ্রাপ্তদের রায় এজন্য স্থগিত চেয়েছি যেন মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর আসামিরা বের হয়ে যেতে না পারেন। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল করবো।

এফএইচ/ইএ/এএসএম