অর্থনীতি

বাজারদর থেকে কেজিতে ১৭ টাকা কমে মসুর ডাল কিনবে সরকার

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কিনবে সরকার। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম বাজারদরের তুলনায় ১৭ টাকা ৯ পয়সা কম পড়বে। এমনকি দাপ্তরিক দরের থেকেও কম দামে এই মসুর ডাল পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

আগামী বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে কারওয়ান বাজারের শবনাম ভেজিটেবল অয়েল থেকে এই মসুর ডাল কেনা হবে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে আগামী মার্চ মাসে কেনা হবে এই ডাল।  

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে টিসিবির বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২ লাখ ৮৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৯২ হাজার ৯৫০ টন মসুর ডাল কেনার চুক্তি করেছে সরকার।

নতুন করে আরও ১০ হাজার টন মসুর ডাল স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তার আলোকে গত ৯ ডিসেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৩ ডিসেম্বর, বৈধতার মেয়াদ ধরা হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।  

Advertisement

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শবনাম ভেজিটেবল অয়েল, নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড এবং ইজি জেনারেল ট্রেডিং দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ইজি জেনারেল ট্রেডিং ৫ হাজার টন মসুর ডালের জন্য দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৯৯ টাকা ৪৮ পয়সা করে প্রস্তাব দেয়।

অপর দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাবিল নাবা ফুডস প্রডাক্টস ১০ হাজার টনের জন্য দরপত্র জমা দেয়। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম প্রস্তাব করে ৯৮ টাকা ৭৫ পয়সা। এছাড়া শবনাম ভেজিটেবল অয়েল ১০ হাজার টন মসুর ডালের জন্য দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম প্রস্তাব দেয় ৯৭ টাকা ৯১ পয়সা।  

গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা। মূল্যায়ন কমিটি জমা পড়া ৩টি দরপত্র পর্যালোচনা করে এবং তিনটি প্রস্তাবই রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়। রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে শবনাম ভেজিটেল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৫০ কেজির বস্তায় ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার সুপরিশ করেছে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।  

আরও পড়ুনরমজানে স্থিতিশীল থাকবে দেশের পণ্যবাজার যেসব পণ্য কেনায় গুনতে হবে বাড়তি টাকা 

অগ্রিম আয়কর এবং টিসিবির গুদামে পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজি মসুর ডালের ক্রয় মূল্য হবে ৯৭ টাকা ৯১ পয়সা। যা দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দামের চেয়ে ৯ টাকা ২৬ পয়সা কম। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি-১৬(৫ক) অনুযায়ী প্রতি কেজি মসুর ডালের দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ১০৭ টাকা ১৭ পয়সা।

Advertisement

এক শতাংশ অগ্রিম আয়কার এবং পরিবহন খরচ ২ (কেজিপ্রতি) টাকা বাদ দিলে এই মসুর ডালের প্রকৃত ক্রয় মূল্য পড়বে ৯৪ টাকা ৯৩ পয়সা। টিসিবির বাজার তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ডিসেম্বর স্থানীয় বাজারে মাঝারি দানার মসুর ডালের প্রতি কেজির গড় খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা। এ হিসাবে স্থানীয় খুচরা বাজরের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা ৯ পয়সা কম দামে মসুর ডাল কিনতে পারবে সরকার।  

সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ৯ ডিসেম্বর স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা কেজি দরে মসুর ডাল কেনা হয়। সে হিসাবে আগের তুলনায় এখন প্রতি কেজি মসুর ডাল ২ টাকা ৯৬ পয়সা বেশি দাম কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

আগের তুলনায় এখনকার প্রস্তাবিত দাম বেশি হলেও দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য এবং স্থানীয় বাজারের মূল্যের চেয়ে কম এবং সংগতিপূর্ণ বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ বর্তমানে মসুর ডালের বাজার মূল্য ঊর্ধ্বমুখী।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি কেজি ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে মূল্যায়ন কমিটি তা ক্রয়ের সুপরিশ করেনি। এখন যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে- তা পবিত্র রমজান উপলক্ষে আগামী মার্চ মাসে গ্রহণ করা হবে। সে সময়ের মজুত বিবেচনায় এই মসুর ডাল কেনা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।  

এই মসুর ডাল কেনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রত্যয়ন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের প্রত্যয়ন হলো- এই ক্রয়প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণে ক্রয় সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে। বিবেচ্য প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধানের পরিপন্থি নয়। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম-নীতির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সুপরিশ করা দরদাতার প্রস্তাবের সঙ্গে উন্মুক্ত দরপত্রের ডকুমেন্টের সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী রমজান মাসে টিসিবির কার্ডধারীদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে যে দর পাওয়া গেছে তা বাজারদর এবং দাপ্তরিক দরের তুলনায় বেশ কম। তাছাড়া অন্তর্জাতিক উৎসের তুলনায় স্থানীয় বাজার থেকে কম দামে মসুর ডাল পাওয়া যাচ্ছে। এখন সরকরি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে এই ১০ লাখ টন মসুর ডাল কেনা হবে। 

তিনি বলেন, গত ১ ডিসেম্বরের প্রাক্কলিত মূল্য অনুযায়ী ভারতীয় উৎসের মসুর ডালের বাজরদর সিপিটি স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি ১১৯ টাকা ৫৩ পয়সা। যা সিটিবির গুদাম পর্যন্ত সিপিটি মূল্য, সিএসআই ফি, পিএসআই ফির ওপর ভ্যাট, ইন্স্যুরেন্স, পোর্ট চার্জ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কমিশন ও কাস্টম ডিউটি এবং পরিবহন খরচসহ সম্ভাব্য খরচ দাঁড়ায় প্রায় ১২৫ টাকা ১৮ পয়সা প্রতি কেজি। ফলে দেখা যাচ্ছে অন্তর্জাতিক উৎসের থেকে স্থানীয় পর্যায় থেকে অনেক কম দামে মসুর ডাল কেনা সম্ভব হচ্ছে। এ কারণেই এই মসুর ডাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এমএএস/কেএসআর