করোনা বা কোভিড-১৯ নব্বই দশকের পর জন্ম নেওয়া জেনারেশনের কাছে খুব এক মিশ্র অনুভূতির নাম। এই ভাইরাসটি বিশ্বকে চিনিয়েছে একেবারে আলাদাভাবে। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা লাশের হিসাব, লকডাউনে মাসের পর মাস ঘরবন্দি থাকা, সামাজিক দূরত্ব এমনকি প্রিয়জনের থেকে দূরে থাকা, অনলাইনে যোগাযোগ।
Advertisement
চীনের উহান শহর থেকে ২০১৯ সালের একেবারে শেষে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় বছরখানিক এই ভাইরাস তার রক্তচক্ষু দেখিয়েছে পুরো বিশ্বে। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে পারেনি কোনো দেশই। আক্রান্ত হয়েছেন মানুষ, মারা গিয়েছেন অকালেই। তবে সম্প্রতি চীন থেকেই আরেক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে।
চীনের পর এরই মধ্যে জাপান, ভারতে এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এইচএমপিভির কারণে শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশে মাঝারি ধরনের সংক্রমণ হয়। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণকে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ থেকে আলাদা করা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সর্দি–কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা যায়।
দুই বা তার বেশি মানুষের মধ্যে সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করলে তা থেকেও ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।
Advertisement
তবে শুধু করোনা বা এইচএমপিভি ভাইরাসই নয়, আরও অনেক মরণঘাতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল চীন থেকে। চলুন এমন কয়েকটি ভাইরাস সম্পর্কে জেনে আসি-
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স)২০০২-২০০৩ সালে চীনের গুয়াংডং প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া সার্স-কোভ ভাইরাস ছিল প্রথম মারাত্মক করোনা ভাইরাস। এটি বাদু থেকে শুরু হয়ে সিভেট বিড়ালের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হু-এর মতে, সার্সে প্রায় ৮ হাজার জন সংক্রমিত হয় এবং ৭৭৪ জন মারা যায়। ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটিয়ে মৃত্যুর কারণ হতো।
অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইচ৫এন১)২০০৪ সালে চীনে প্রথম এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, যা পাখি থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছিল। যদিও এই ভাইরাসের সংক্রমণ তুলনামূলক কম ছিল, এটি খুবই প্রাণঘাতী। এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ।
হিউম্যান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইচ৭এন৯)২০১৩ সালে চীনে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা হাঁস-মুরগির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল আরেকটি মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, যার মৃত্যু হার ৩৯ শতাংশ।
Advertisement
করোনা ভাইরাস২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহান শহর থেকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এটি ছিল একটি নতুন করোনা ভাইরাস যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী এটি ২০২০ সালের শুরুর দিকে মহামারি রূপ নেয়। এই ভাইরাস ২০ কোটি মানুষকে সংক্রমিত করে এবং প্রায় ৭০ লাখ মৃত্যু ঘটায় (হু-এর হিসাব অনুযায়ী)।
নিপাহ ভাইরাসযদিও মূলত নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় হয়েছিল, ২০১৮ সালে চীনে এই ভাইরাসটি বাদুর ও শূকর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্কে প্রদাহ ঘটিয়ে মৃত্যুর কারণ হয় এবং মৃত্যুর হার প্রায় ৪০-৭৫ শতাংশ।
হেমোরেজিক ভাইরাস (হান্তাভাইরাস)হান্তাভাইরাস চীনে অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, তবে ২০২০ সালে এর কিছু কেস নতুন করে আলোচিত হয়। এটি সাধারণত ইঁদুর থেকে ছড়ায় এবং গুরুতর ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে এটি কোভিড-১৯-এর মতো ছোঁয়াচে নয়।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন কেন চীন থেকে বারবার ভাইরাস ছড়ায়?বন্যপ্রাণীর ব্যবহার: চীনের কিছু অঞ্চলে খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে বন্যপ্রাণীর ব্যবহার সাধারণ ব্যাপার। এতে ভাইরাস বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ে।
ওয়েট মার্কেট: জীবন্ত প্রাণী বিক্রি হয় এমন বাজারে ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়।
জনঘনত্ব: চীনের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো ভাইরাস ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
বন্যপ্রাণী ও মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ: চীনে বিভিন্ন স্থানে কৃষি, বনজ সম্পদ ও মানুষের ঘনিষ্ঠ মিথস্ক্রিয়া ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন ২০২৪ সালে নারীদের যত গিনেস রেকর্ডআবার দেখা যদি হলো, প্রাণের মাঝে আয়সূত্র: রয়টার্স
কেএসকে/জেআইএম