অর্থনীতি

শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে চায় সরকার

শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সব সংস্কারেরই কিছু যন্ত্রণা থাকে। তাই শেয়ারবাজারের সংস্কার কার্যক্রমেরও কিছু যন্ত্রণা সাময়িকভাবে সইতে হবে।

Advertisement

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর নিকুঞ্জে শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারের গভীরতা অনেক কম। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এই বাজারে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এসব কোম্পানির মালিকেরা ভাবেন, ছেলে হবে পরিচালক, বউ চেয়ারম্যান। ব্যবসায় যা মুনাফা হবে, তা নিজেরা ভোগ করবেন। শেয়ারবাজারে আসা মানেই ভালো ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ইত্যাদি উন্নত হওয়া। কিন্তু অনেকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না। তাই তারা বাজারে আসতে আগ্রহী নন।

আরও পড়ুন

Advertisement

আর্থিক প্রতিবেদনে গোঁজামিল, বোরাক রিয়েল এস্টেটের আইপিও বাতিল যে কারণে পতনের বৃত্তে শেয়ারবাজার

তিনি বলেন, সময় এসেছে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর। এজন্য ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। আর তার জন্য করের সুবিধাসহ সরকারি যেসব নীতি-সহায়তা দরকার, সেসব বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। কিছু সরকারি কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের ঋণনির্ভর অর্থনীতি টেকসই কোনো অর্থনীতি নয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শিল্প গড়লে অনেক সময় টাকা ফেরত না দিলেও চলে। এ কারণে আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেশি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও বড় সমস্যা রয়েছে। একই সঙ্গে দলগতভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করার উদ্যোগেরও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় বা যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি দলগতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাজার-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেই সবাই খুশি হন। কিন্তু বাজার যখন বেশি ওপরের দিকে যায়, তখন একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল নীতির কারণেও শেয়ারবাজারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ব্যাংকগুলো বাজারে বেশি বিনিয়োগ করায় বাজার অনেক ওপরে উঠে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন

টানা দরপতনে হাহাকার বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এসময় বিএসইসি কমিশনার, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডিএসইর পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন

এদিকে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থ উপদেষ্টার ডিএসইতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনের সামনে বিনিয়োগকারীরা এ মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিনিয়োগকারীরা বলেন, শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। কারণ, তিনি বিএসইসি চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্য নন। তার শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞান শূন্য। বর্তমান সরকার কীভাবে তার মতো মেধাহীন লোককে বিএসইসিতে বসালো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

এমএএস/এমকেআর/এমএস