জাতীয়

ভবিষ্যতে অন্যায়-অনিয়ম সহ্য করা হবে না: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

যেসব অন্যায়-অনিয়ম হয়েছে তা আর ভবিষ্যতে সহ্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। যে কোনো কথা কঠিন হলেও সত্য বলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আমরা অতীতকে ভুলে সামনে আগাব। কিন্তু কেউ যদি আগে গুরুতর অন্যায় বা অনিয়ম করে থাকেন, সেটা আমরা ভুলব না। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারের মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনারা হয়তো জানেন সাম্প্রতিক আন্দোলনে ৩৯ জন ছাত্র-জনতা দুই চোখ-ই হারিয়েছে। তারা এই দুনিয়াটা চোখে আর দেখতে পাবে না। যাদের সন্তান আছে তারা তাদের সন্তানকে দেখতে পাবে না। এই আহতরা তাদের মা-বাবাকে আর দেখতে পাবে না। কীসের জন্য তাদের এই অপরিমেয় আত্মত্যাগ? শুধু এই দেশটাকে পরিবর্তন করার জন্য। এই দেশটাতে আমাদের নতুন করে যাত্রা শুরু হয়েছে অসংখ্য শহীদ এবং আহতের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। 

সিস্টেম লসের কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এই লস যত কমবে বা শূন্য হবে, আপনাদের কাজের ইফিসিয়েন্সি ততই বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমরা ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের কথা স্মরণ করি। কেন করি? কারণ তিনি মানুষের জন্য কিছু সৃষ্টি করে গেছেন। কাজেই আসুন আমরা মানুষের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করি এবং মানুষের যাতে উপকার হয় তেমন কিছু সৃষ্টি রেখে যাই। আমরা যদি ব্যক্তিকে অনুভব করতে না পারি, মানুষের কষ্ট এবং দারিদ্র্য যদি অনুভব করতে না পারি, তাহলে সামনে আগাতে পারব না।

Advertisement

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যোগ করেন, ইডিসিএল নিয়ে নানান অনিয়মের কথা পত্রিকায় এসেছে। এই যে এতগুলো ছেলে জীবন দিলো, আত্মত্যাগ করলো, তাদের কথা স্মরণ করে আসুন আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করি। যাতে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো কথা না ওঠে। সেজন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হবে।

আরও পড়ুন

যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই সমস্যা আর অনিয়ম: স্বাস্থ্য উপদেষ্টাডিমেনশিয়া নিয়ে দেশে আরও গবেষণা হওয়া উচিত: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইডিসিএলকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে দক্ষ এবং এফিসিয়েন্ট হতে হবে। একটা কথা বলি, ইডিসিএল থেকে এনওসি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্য জায়গা থেকে ওষুধ কিনে ২২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এটা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ বেশি টাকা দিয়ে তারা কেন ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনবে? ইডিসিএল যে দামে ওষুধ বিক্রি করে তার চেয়ে কম দামে মার্কেটে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। আপনাদের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করতে বলা হচ্ছে না। কিন্তু আপনাদের এফিসিয়েন্সি বাড়াতে হবে। আপনারা পুরো প্রসেসটা নিয়ে বসেন এবং কোন জিনিস ওপরে যাবে, নিচে আসবে, কোনটা কোন ফেইজে যাবে তা ঠিক করেন। বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে আপনাদের পাঁচটা প্ল্যান্ট আছে। এটা আর অন্য কারোরই নেই। পুরো বিশ্বে ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে টপ কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি। এখানে নিখুঁতভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আপনারা যদি চান দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থান করে নিতে পারেন। কাজেই সেই স্বপ্নটিই দেখেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যান হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেয়া। এটা সরকারের কমিটমেন্ট। এটা গ্লোবাল কমিটমেন্ট। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার প্রধান উপাদান হচ্ছে মেডিসিন কাভারেজ। ৬৭ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ আউট অফ পকেট ব্যয় হচ্ছে ওষুধের পেছনে। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড ভালোভাবে প্রোডাক্ট তৈরি ও অব্যাহতভাবে ঔষধ সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের পুরো মার্কেটের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এফিসিয়েন্সি বাড়বে।

Advertisement

এছাড়া স্বচ্ছতা এবং অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সবকিছু স্বচ্ছ, ইলেকট্রনিক এবং টাইম বাউন্ড হতে হবে। আমরা মোটা দাগে ট্রান্সপারেন্ট সিস্টেম এবং ডেটাবেজ চাই। পুরো দুনিয়ায় এগুলো কমন প্র্যাকটিস। আমরা কমন প্র্যাকটিস এর বাইরে যেতে পারব না। ইডিসিএলের মূল উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী দামে কোয়ালিটি ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গুণগত মান বজায় রেখে ওষুধ সরবরাহ করা। এটা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ দেশের সাধারণ জনগণ আপনাদের ভোক্তা।

মতবিনিময় সভায় ইডিসিএলের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন ইডিসিএলের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধা। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন খানসহ ইডিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

মতবিনিময় সভা শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সরেজমিনে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) পরিদর্শন করেন।

এএএম/এএমএ