নতুন বছরটা কীভাবে কাটাবো, বছরের শেষ দিন আমরা সেসব ভাবতে বসি। খাতা-কলমে বসে বানাই নিউ ইয়ার রেজ্যুলেশন বা নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা। সারা দুনিয়ার মানুষের মধ্যেই এই প্রতিজ্ঞা বানানোর হিড়িক লক্ষ্য করা যায়। ডিসেম্বর মাসে ফেসবুক-টুইটার ভরে যায় নানান সব প্রতিজ্ঞায়। কেউ কেউ খুব গুরুত্বের সঙ্গে রক্ষা করতে চান সেসব। আবার কেউ একে শুধুই রসিকতাচ্ছলে প্রচার করেন, স্রোতে গা ভাসাতে।
Advertisement
তবে নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা বা নিউ ইয়ারস্ রেজ্যুলেশন কি শুধুই একটি সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড, নাকি এর পেছনে আছে অর্থবহ কোনো রীতি?
কীভাবে শুরু হলো এই নিউ ইয়ারস্ রেজ্যুলেশনের রীতিনতুন বছরে প্রতিজ্ঞা ঘোষণার এই ধারাটি আসলে চলে আসছে হাজার বছর ধরে। জানা যায়, প্রাচীন ব্যাবিলনে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে এর প্রচলন শুরু হয়। ব্যাবিলনীয়রা তাদের দেবতাদের কাছে বছরের শুরুতে বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা করতো। যেমন, তারা ঋণ পরিশোধ করবে এবং ধার করা জিনিস ফিরিয়ে দেবে, যেন তারা নতুন বছরে সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। আবার নতুন বছরকে বরণ করতে রোমানরা জানুস নামের এক দেবতার কাছে প্রতিজ্ঞা করত।
এ রীতি এখনো টিকে আছে কেন?এই প্রতিজ্ঞা আসলে নিজের জীবন নিয়ে নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষার একটি প্রতিক। বছরের প্রথম দিন আপাতদৃষ্টিতে শুধুই একটি দিন হলেও, মানুষের বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত নতুন অনুপ্রেরণা আর পরিবর্তনের আশা প্রয়োজন। নিউ ইয়ারস্ রেজ্যুলেশন মানুষের মধ্যে সেই আশা, উৎসাহ আর উদ্দেশ্যের অনুভূতি তৈরি করে। আর এখনকার যান্ত্রিক যুগে প্রতিটি মানুষেরই এই অনুভূতির ভীষণ প্রয়োজন। জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে না পেলে মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে আর ধীরে ধীরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনসহ অন্যন্যা মানসিক সংকটে পড়তে পারে। তাই ফেসবুক-টুইটারে যতই হালকা মনে হোক প্রসঙ্গটি, এর কিছু গভীর মনস্তত্ব আছে, যা অস্বীকার করা ঠিক হবে না।
Advertisement
নতুন বছরে সাধারণত যেসব বিষয়ে মানুষ এই রেজ্যুলেশন করে তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতটি হলো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা। যেমন ব্যয়াম বা ডায়েট। অনেকে ওজন কমানোর প্রতিজ্ঞা করেন। কেউবা অর্থ ও উপার্জনসংক্রান্ত লক্ষ্য ঠিক করেন। অন্যদিকে, কেউ প্রতিজ্ঞা করেন নতুন বছরে তিনি অবশ্যই কোথাও বেড়াতে যাবেন। কেউ ভাবেন, নতুন কোনো দক্ষতা বা স্কিল শেখার ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের কথা। কেউ আবার নিজের সম্পর্কগুলোকে আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও বেশ জোর দেন।
তবে অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, এতসব প্রতিজ্ঞার বেশিরভাগই কয়েক মাসও টেকে না। কদিন পরই গতানুগতিক জীবনে ঢুকে অনেকে ভুলে যান তার নিজের কাছে করা প্রতিজ্ঞার কথা। অনেকে সেই ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে চেষ্টাই ছেড়ে দেন। আবার পরের বছর একই ভাবে ঘুরতে থাকে এ চক্র। কিন্তু উপায় কী এই চক্র থেকে বের হয়ে নিজের জন্য সত্যিকার অর্থে কিছু করার?
চক্র থেকে বের হওয়ার জন্য আগে জানতে হবে, কেন মানুষ কয়েক মাস যাওয়ার আগেই ব্যর্থ হন
প্রথমত, যথেষ্ট সময় নিয়ে চিন্তা করে রেজ্যুলেশন ঠিক না করা। অন্য কারও কথায় বা কোনো ডিজিটাল কনটেন্ট দেখে হঠাৎ করে মোটিভেটেড হয়ে যান অনেকেই! তারপর নিজের পরিস্থিতি ও সময়সূচি বিবেচনা না করেই ঝোঁকের মাথায় একটি রেজ্যুলেশন ঘোষণা করে বসেন।
Advertisement
দ্বিতীয়ত, নিজের সক্ষমতার বাইরে কিছু টার্গেট করা।
তৃতীয়ত, সফলতার পথের ছোট্ট কোন হোচটকে ব্যর্থতা মনে করে হাল ছেড়ে দেওয়া।
অর্থাৎ, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার রাস্তা বের করতে পারলেই আপনি আপনার নিউ ইয়ারস্ রেজ্যুলেশন পূরণ করতে পারবেন। এ জন্য যা যা করা যেতে পারে:
• বাস্তববাদী হতে হবে। এমন কোনো লক্ষ্য ঠিক করবেন, যা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও আপনার কাছে সম্ভব বলে মনে হবে।
• লক্ষ্যকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। প্রতিটা অংশের সফলতাই আপনাকে বিজয়ীর অনুভূতি দেবে, যা আপনাকে পরের ধাপের জন্য আরো অনুপ্রাণিত করবে।
• একবার ব্যর্থ হলেই হাল ছেড়ে দেবেন না। বরং সময়ের প্রযোজনে আপনার রেজ্যুলেশনে কিঞ্চিত পরিবর্তন আনা যেতে পারে এমন মনোভাব রাখুন।
• লাইফস্টাইলে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলে আপনার কাছের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করুন যেন প্রয়োজনে তাদের পাশে পান।
• নিউ ইয়ারস্ রেজ্যুলেশনের পরিবর্তে কেউ কেউ বছরের জন্য থিম বা উদ্দেশ্য তৈরি করেন। অনেকেই মনে করেন, কোনো কাজকে রেজ্যুলেশন মনে না করে কাজের ফলাফলকে লক্ষ্য হিসেবে ভাবলে সফলতার হার বাড়ানো সম্ভব।
নিউ ইয়ারস্ রেজ্যুলেশন কেবল একটি ফেসবুক ট্রেন্ড নয়, এটি ব্যক্তিগত উন্নতির এবং জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণকে উদযাপন করার একটি প্রক্রিয়া। তাই নতুন বছরে প্রবেশ করে বিবেচনা করুন, আপনি কী অর্জন করতে চান। সম্ভাবনাগুলো গ্রহণ করুন এবং মনে রাখবেন, পরিবর্তন কেবল সম্ভবই নয়, এটি আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। বর্ণবাদবিরোধী বিপ্লবী রাজনীতিক নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘বাস্তবে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত এটি অসম্ভব মনে হবে।’
আরও পড়ুন:
শীতে হার্ট অ্যাটাক এড়াতে যে নিয়ম মানবেন কষ্টের স্মৃতি ভোলা যায় না কেন? শীতে নারীদের মধ্যে কেন বাড়ে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি?এএমপি/আরএমডি/এমএস