গত চার মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর মোট ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন অফিসার শাহদাৎবরণ করেছেন এবং ৯ অফিসারসহ মোট ১২২ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বনানীর সেনা অফিসার্স মেসে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
তিনি বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের সরকার থেকে যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়, তা গত ১৫ নভেম্বর পুনরায় ৬০ দিনের জন্য বর্ধিত করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছে। গত ২০ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর মোট ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন অফিসার শাহদাৎ বরণ করেছেন এবং ৯ জন অফিসারসহ মোট ১২২ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন।
দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে যেসব দায়িত্ব পালন করছে সেগুলো হলো- অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ করা; দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা; বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কলকারখানাগুলোকে সচল রাখা; রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করা; মূল সড়কগুলোকে বাধামুক্ত রাখা; অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা; অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার, মাদককারবারি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা; বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করা; পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা; কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করা এবং সার্বিকভাবে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে, সেজন্য স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা।
Advertisement
১৩ নভেম্বর থেকে অদ্যাবধি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোট ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও শিল্পাঞ্চল ছাড়াও ৬৩টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৬টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত ১টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৪০টি।
যৌথ অভিযানের কথা উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যৌথ অভিযানে ২২৮ জন মাদক কারবারি অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৩২৮ জন ব্যক্তিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Advertisement
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান আরও বলেন, সারাদেশে সদ্যসমাপ্ত বৌদ্ধদের দেশব্যাপী কঠিন চীবরদান উৎসব যেন নিরাপদে পালিত হতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী মোট ৪৪৪টি বৌদ্ধ বিহারে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই কঠিন চীবরদান উৎসব পালিত হয়েছে।
নভেম্বরের ১৫-১৬ এবং ২০ তারিখে সনাতন ধর্মাবলম্বী মাতুয়া গোষ্ঠীর রাসমেলা ও নবান্ন উৎসব উদযাপনের জন্য গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী জেলায় নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং উভয় অনুষ্ঠান অত্যন্ত আনন্দ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়েছে। এছাড়াও ১০-১২ নভেম্বর প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বরিশালের জগদ্ধাত্রী পূজাতেও নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে; যার মধ্যে ৩৫ জন এখনো সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।
সিএমএইচে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫৩টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাত্রার। এছাড়া ৪ জন গুরুতর আহত রোগীকে উন্নত সুচিকিৎসার জন্য সিংগাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী।
টিটি/এমআরএম/জিকেএস