হাতের স্পর্শেই খুলে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও আবার দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বইয়ের ওপর ছাদ থেকে খসে পড়ছে বালু সিমেন্টের পলেস্তারা। এরপরও থেমে নেই ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। এমন ঝুঁকির মধ্যেই ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
Advertisement
বলা হচ্ছিল শরীয়তপুরের আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কথা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই ভবনে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবনটিতে দুর্ঘটনার আশংকার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও মেলেনি কোনো সুরাহা। দীর্ঘদিন ধরে এমন বেহালদশা তৈরি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ৪৯ নম্বর আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক ও ২৩১ শিক্ষার্থী রয়েছে। শুরুর দিকে একটি আধপাকা ভবন থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে পাঁচটি কক্ষের একটি দ্বিতল ভবন তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা একটি কক্ষে ক্লাস করছে। আর তাদের ওপরে ওই কক্ষের বিমের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। এছাড়া আরেকটি কক্ষের বিমে রয়েছে বড় ধরছেন ফাটল। বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে কক্ষের ওপরে শ্যাওলা জমে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে।
Advertisement
তনুশ্রী বিশ্বাস পিউ নামের প্রথম শ্রেণির এক খুদে শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের স্কুলটির ওপর দিক দিয়ে ভাঙা। বর্ষাকালে পানি পড়ে, বালু পড়ে। ক্লাস করতে ভয় হয়। আমরা চাই আমাদের জন্য নতুন স্কুল করা হোক।
তীর্থ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অনেক ভয় করে। কখন যেন আমাদের ওপর এটা ভেঙে পড়ে। এভাবে ক্লাস করতে ভালো লাগে না। আমাদের একটা স্কুল চাই।
জেরিন নামের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, যখন ক্লাস করি তখন অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। গতকালও আমার মাথায় খোয়া পড়েছে। এভাবে ক্লাস করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। সরকার যেন আমাদের একটি বিদ্যালয় ভবন করে দেয়।
এদিকে এক শিক্ষার্থীর মা রেহানা আক্তার বলেন, আংগারিয়া স্কুল ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওপরে ফাটল ধরেছে, রড দেখা যায়, আর বৃষ্টিতে পানি পড়ে। এই অবস্থায় আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠালে ভয়ে থাকি। কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আর দুর্ঘটনা ঘটলেও ওপর থেকে তাড়াতাড়ি নিচে নামার সুযোগ নেই। আমরা চাই বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে দ্রুত একটি ভবন সরকার যেন করে দেয়।
Advertisement
আসমা আকতার নামের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, আমাদের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক। আমরা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছি না। এর আগে ওপর থেকে ছাদ ভেঙে ফ্যান পড়ে যায়। এতে আমরা এবং শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকি। এছাড়া বৃষ্টির পানি পড়ায় ক্লাস নিতে পারি না। বাচ্চাদের বই-খাতা ভিজে যায়, ক্লাসরুম ভিজে যায়। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
ইউনূস শেখ নামের আরেক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের মাঝে ক্লাস করতে হয় বলে ওদের পড়ায় মনোনিবেশ থাকে না। আমাদের বিদ্যালয়ের পড়ার পরিবেশ ভালো থাকলেও ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দোতলা ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও সমাধান হচ্ছে না। আমার বিনীত অনুরোধ, ছোট ছোট সোনামণিদের কথা চিন্তা করে দ্রুত একটি নতুন ভবন তৈরি করা হোক।
এদিকে বিদ্যালয়টির ভবনের বরাদ্দ বাতিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। এগুলো সব একটি ডাটাবেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যখন বরাদ্দ আসে তখন আমরা সহযোগিতা করি এবং কাজ শুরু হয়ে যায়। স্কুলটিতে বরাদ্দ এসেছিল বলে শুনেছি। তবে সেটি কি কারণে বাতিল হয়েছিল তা দেখবো এবং নতুন বরাদ্দের জন্য উদ্যোগ নেবো।
বিধান মজুমদার অনি/জেডএইচ/জেআইএম