বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ২৬ নভেম্বর দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
Advertisement
মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের আসামের তিনশুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর প্রয়াত বাবা রহিমুদ্দিন আহমেদ আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। যিনি চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন।
তিনি ১৯৪৭ সালে পাহাড়তলি রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরের বছর তাঁর পরিবার চট্টগ্রামে আসেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এখানে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তাঁর বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসবাস শুরু করেন।
তিনি ১৯৫৫ সালে অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলা থেকে ১৯৫৭ সালে ইন্টারমিডিয়েটে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।
Advertisement
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে সম্মান এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তারপর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (ফিটস উইলিয়াম কলেজ) থেকে ১৯৬৬ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৭০ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৬১ সালের শেষের দিকে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে। ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ইপিজেইএসে যোগদান করেন এবং ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমানে কবি নজরুল কলেজ) পাঠদান শুরু করেন।
আরও পড়ুনভাষাবিদ ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামান মারা গেছেন
তারপর তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে ক্যামব্রিজে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। ইংরেজি সাহিত্যে ট্রাইপস করেন এবং ১৯৬৬ সালে সম্মানসহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ফেরার পর ঢাকা কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
Advertisement
১৯৭৩ সালের শেষদিকে তিনি সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে ১৯৮১ সালের ২৪ জুলাই অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৯-১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি আলজেরিয়ার আনাবা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৫ সালের ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন। সেদিনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
১৯৯১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চার বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। ১৯৯৮ সালে তিনি ঐচ্ছিক অবসরে যান। অধ্যাপনা থেকে বিরতি নিয়ে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত জাতীয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ঢাকা কুরিয়ারের প্রধান সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন।
সীমিত সাংবাদিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ২০০০ সালে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে ৮ বছর শিক্ষকতা করেন। তারপর দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা এবং ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা ক্যাম্পাস) শিক্ষকতা করেন।
১৯৯৮ সালে ২ বছরের জন্য বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ২০০৭ সালে ২ বছরের জন্য বাংলা একাডেমির সভাপতি নিযুক্ত হন। ৫ আগস্ট ২০১৫ সালে এক বছর মেয়াদে ওয়াইল্ড টিমের (ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সাহিত্যে তাঁর অবদান প্রধানত কবিতা, অনুবাদ এবং সুফিবাদ বিষয়ক কর্মে। তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণায় গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে অভিধানে। যার জন্য প্রয়োজন হয় সম্পাদনা কর্ম ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান। তিনি বাংলা একাডেমিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থায় ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধান বের করেন। যা সবচেয়ে বেশি বিক্রীত গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তাঁর সময়ে তিনি তিনটি অভিধান প্রকাশ করেন। তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তি যেমন ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কায়কোবাদ, ফররুখ আহমেদ এবং কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী প্রকাশ করেন।
এসইউ/এএসএম