যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি ইমেইল বার্তার মাধ্যমে তাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির।
Advertisement
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের মধ্যে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হঠাৎ এমন সতর্কবার্তায় অনেকে রীতিমত চিন্তায় পড়ে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভারের অধ্যাপক ক্লোই ইস্ট বলেন, বিদেশি সব শিক্ষার্থীরা এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির নেতা ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এই অভিযানের ফলে যারা বেকায়দায় পড়তে পারেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিবাসী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা ‘হায়ার অ্যাড ইমিগ্রেশন পোর্টালে’র তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে চার লাখেরও বেশি।
Advertisement
যদিও ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়ে বলছেন যে, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের রাখার জন্য তারা বড় ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা করবেন।
অভিজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তা ও ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ‘সীমান্ত জার’ টম হোম্যান বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভয়ঙ্কর অপরাধী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি- এমন মানুষজনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন।
ক্লোই ইস্ট বলেন, শিক্ষার্থীদের খুব একটা ভয় পাওয়ার কথা না বলা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েই গেছে। অভিবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখন ভীষণ চাপে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবেন কি না, সেটি নিয়েও এখন অনেক শিক্ষার্থী চিন্তায় আছেন।
নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নেবেন। ফলে তার আগেই নিজেদের বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের শীতকালীন ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পরামর্শ দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস।
Advertisement
২০১৬ সালে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতা থেকেই অফিস অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স সতর্কতা হিসেবে এই পরামর্শ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। সেখানে বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
প্রথম দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু কঠোর নিয়ম চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই রিপাবলিকান নেতা।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের মতো ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটিও তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ২০ জানুয়ারির আগে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে একটি ওয়েবিনার পর্যন্ত আয়োজন করতে দেখা গেছে যেখানে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
কঠোর অভিবাসন নীতির মাধ্যমে ট্রাম্প মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে চালু হওয়া একটি কর্মসূচির ইতি টানতে চাচ্ছেন। ওই কর্মসূচিটি শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে এতদিন সুরক্ষা দিয়ে আসছিল।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এখন তাদের পড়াশোনা ও একাডেমিক কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন, তাদেরই একজন হলেন ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের আর্লহাম কলেজে অধ্যয়নরত জাপানি নাগরিক অই মায়েদা। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মে মাসে আমার স্নাতক পাস করার কথা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে, আমাদের জন্য মার্কিন প্রশাসন একটু বেশিই বিপজ্জনক হতে চলেছে। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে সামনে ভালো কিছু হওয়ার বিষয়ে আমি খুব একটা আশাবাদী না।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি শুধুমাত্র অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান। কিন্তু বেশ কয়েকবার তাকে এর বাইরেও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। কাজেই আমি মনে করি, তার এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসায় প্রভাব পড়তে পারে, যার ফলে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়াও বেশ সহজ হয়ে যাবে।
ট্রাম্পের ভিসা নীতিঅভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতি নিয়ে এগোবেন বলে জানিয়েছেন, তাতে অন্য দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
নির্বাচনে দাঁড়ানোর শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরিতে ভাগ বসাচ্ছে। ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন এবং তারা ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও ‘এইচ-১বি’ ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তখন এর বেশ প্রভাবও বিভিন্ন খাতে পড়তে দেখা গেছে। এখন দ্বিতীয় মেয়াদেও একই নীতি অব্যাহত রাখতে চান ট্রাম্প যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে।
বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের নীতি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এবং অপরাধ করেনি এমন নথিপত্রহীন অভিবাসীদের সুরক্ষায় সহায়তা করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্তের দায়িত্ব পাওয়া টম হোম্যান ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি বাইডেন প্রশাসনের এই নীতি উল্টে দিবেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সমস্যা নেই: ড. ইউনূস শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, এমন কথা বলেননি ট্রাম্পতিনি আরও বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার ও বিতাড়ন অভিযান চালানোর সময় একটি নিশানাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। তবে শহর-উপশহরজুড়ে গণহারে অভিযান চালানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
টিটিএন