দেশজুড়ে

হাতছানি দিচ্ছে হেমন্তের শান্ত সৈকত

বর্ষার পর শরতেও বৈরী আবহাওয়া বহন করেছে প্রকৃতি। গত মাসেও ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বঙ্গোপসাগর। কিন্তু হেমন্তের প্রকৃতি কক্সবাজার সৈতককে দিয়েছে নির্মল শান্ত আবহ। নীলাভ দূত্যি ছড়ানো সাগরের ঢেউ এখন নিরাপদ আলিঙ্গন এনে দেবে, সেই ঘোষণা প্রচার করছে বেলাভূমিতে ওড়ানো ‘লাল-হলুদ পতাকা’।

Advertisement

গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ মৌসুমে উত্তাল সাগর ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। এ সময় পর্যটন জোনের জনবিচরণ সৈকতস্থলে ‘লাল পতাকা’ ওড়ানো থাকতো। বেলাভূমিতে হেঁটে সমুদ্রের নির্মল হাওয়া সেবন করলেও পর্যটকরা যেন গোসল থেকে বিরত থাকেন, তারই নির্দেশনা ‘লাল পাতাকা’। তবে হেমন্তে এসে সাগর এখন শান্ত। তাই লাল পতাকা এড়িয়ে ওড়ানো হচ্ছে ‘লাল-হলুদ’ পতাকা। এ সময় মন খুলে নিরাপদে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করতে পারবেন পর্যটকরা।

সৈকতে বিপদাপন্ন পর্যটকদের উদ্ধারে কাজ করা সী সেইফ লাইফগার্ডের সিনিয়র কর্মকর্তা মো. ওসমাণ গণি বলেন, বর্ষার শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রকৃতি ও নানা কারণে সাগর উত্তাল ছিল। এ সময় সৈকতে গোসল করা অনিরাপদ। তাই বেড়াতে আসাদের সতর্ক করতে বেলাভূমিতে ‘লাল পতাকা’ ওড়ানো থাকে। লঘু-নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ে সতর্ক সংকেত অনুসারে নিশানা খুঁটিতে লাল পতাকার সংখ্যা বাড়ে। অনিরাপদ সময়ে গোসলে নেমে বেশ কয়েকটি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে লাল-হলুদ পতাকা ওড়ানো হচ্ছে। সাগরে লঘু বা নিম্নচাপসহ কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে নিরাপত্তার স্বার্থে আবারো লাল পতাকা ওড়ানো হবে।

লাইফগার্ডের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় ও বৈরী আবহওয়ায় সাগর উত্তাল হলে ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বাড়ে। এ সময় ক্রমে আঁচড়ে পড়া ঢেউয়ে বালি দ্রুত সরে গিয়ে গোসলরতরা তলিয়ে গেলে উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ঘটে প্রাণহানি। গত ১০ মাসে সৈকতে গোসলে নেমে স্থানীয় ও পর্যটকসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্রোতের টানে ভেসে যাবারকালে উদ্ধার হয় আরও অন্তত শতাধিক মানুষ।

Advertisement

দেখা গেছে, গত সপ্তাহ ধরে সৈকতের সুগন্ধা-কলাতলী-সীগাল ও লাবণী পয়েন্টসহ একাধিক স্থানে লাল-হলুদ পতাকা উড়ছে। শান্ত সৈকতে সকাল-দুপুর-বিকেলে হাজারো পর্যটক নোনাজলে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করছেন। লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সৈকতেই বেশি গোসলে নামেন পর্যটক বা দর্শনার্থীরা। সাগরের এ অংশে নেমে পর্যটক বা কেউ ভেসে গেলে তাদের উদ্ধারে কাজ করেন বেসরকারি সী-সেফ লাইফগার্ডের ২৭ কর্মী। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পালা করে দায়িত্ব পালন করেন প্রশিক্ষিত এসব লাইফগার্ড। সার্বিক নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসনের হয়ে বেলাভূমিতে রয়েছেন ৩৭ জন বিচকর্মী।

ফেনীর দাগনভূঞায়ার ইমতিয়াজ আলম বলেন, দু’বছর পর স্বপরিবারে কক্সবাজার এসে আগের মতো ওশান প্যারাডাইস হোটেলে উঠেছি। সোমবার সকালে সুগন্ধা পয়েন্টে এসে খুবই ভালো লাগলো। নির্মল শীতল পরিবেশে শান্ত সৈকতে সবাই খুব মজা করে গোসল করেছি। এর আগের বার জুন মাসে এসে গোসল করতে নেমে সাগরের উত্তাল রূপে ভয় পেয়েছিলাম। মেগাফোনে গোসলে নামতে নিষেধ করার পাশাপাশি লাল পতাকা উড়িয়েছিল লাইফগার্ড কর্মীরা। আজ দেখলাম ‘লাল-হলুদ’ পতাকা ওড়ানো হয়েছে। এটা নাকি সাগর শান্ত থাকার চিহ্ন।

তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের জিএম রিয়াদ ইফতেখার ও ওশান প্যারাডাইসের বিপণন অফিসার ইমতিয়াজ নূর সুমেল বলেন, দীর্ঘ নিরবতার পর কক্সবাজারের পর্যটন এখন সরব হয়েছে। জিও-এনজিও এবং কর্পোরেট হাউজগুলো বাৎসরিক কর্মশালার জন্য কক্সবাজারে আসছেন। অফিসিয়াল কাজ সারার পাশাপাশি বেড়ানোও হচ্ছে একইসঙ্গে। এ সময়টা সাগর শান্ত থাকে, বিধায় ভেসে যাওয়ার আতঙ্কও থাকে না।

ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, এখনই কক্সবাজারে বেড়াতে আসার সময়। নির্মল প্রকৃতি ও শান্ত সৈকতে কলাতলী-সুগন্ধা-লাবণীর মতো হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ারটেক, বাহারছড়া ও টেকনাফ সৈকতেও গোসলে নামেন পর্যটকরা। তবে কলাতলী-টেকনাফ প্রায় ৯০ কিলোমিটার সৈকতে গোসলকালীন স্রোতের টানে ভেসে গেলে উদ্ধারে কেউ থাকে না। এসব স্থানে সতর্কতামূলক কোনো পতাকাও ওড়ে না। তাই সবখানেই নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

Advertisement

সী-সেইফ লাইফগার্ডের পিডি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সৈকতের ইনানী-পাটোয়ারটেক এলাকা প্রাকৃতিক পাথরে ভরা। শান্ত সৈকতে এখানে গোসলকালে পা পিছলে পাথরে আঘাত পাওয়া কিংবা অসাবধানতায় ডুবে গেলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে এসব এলাকায় গোসলে নামলে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। কক্সবাজারকে বিশ্বমানের পর্যটন স্পটে রূপান্তরে নানা কার্যক্রম চলছে। এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমে কক্সবাজার-টেকনাফ অখণ্ড সৈকতের সবখানেই পর্যটক বিচরণ নিশ্চিতের প্রচেষ্টাও চলছে। পাশাপাশি নিশ্চিত করা হবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাও।

এফএ/জিকেএস