আইন-আদালত

কাদের-জয়সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গণহত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ পরোয়ানা জারি করেন।

একই সঙ্গে আগামী ১৮ নভেম্বেরর মধ্যে তাদের গ্রেফতার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের ও জয় ছাড়াও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও অধ্যাপক জাফর ইকবালও রয়েছেন।

Advertisement

এর আগে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ দুটি পিটিশন দাখিল করেছি আমরা। প্রথমটিতে শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন এবং অন্যটিতে ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে। ট্রাইব্যুনাল আমাদের পৃথক দুটি আবেদন মঞ্জুর করেছেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন। আর আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে এবং পলাতক হলে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

Advertisement

আরও পড়ুন শেখ হাসিনা এখন কোথায়? শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ওবায়দুল কাদের-নানক-হারুনের তথ্য পেলেই গ্রেফতার: র‌্যাব

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুম-হত্যা এবং সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে চালানো গণহত্যার বিচার করবে এই ট্রাইব্যুন্যাল। গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টির বেশি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।

স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ওই বছরের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকার্য চলমান ছিল। আগের ৩০টি মামলা এখনো ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।

এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এফএইচ/বিএ/জেআইএম