দেশজুড়ে

কাঙালিভোজের জন্য ২০ টন করে সরকারি চাল চাঁদা নিতেন আ’লীগ নেতা

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ও দলীয় প্রধানদের বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কথা উঠে এসেছে বারবার। তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের ঘনিষ্ঠরা। যা থেমে ছিল না ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও।

Advertisement

১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে কাঙালিভোজের কথা বলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার কীর্তনীয়ার কাছে ২০ টন সরকারি চাল চাঁদা দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান। প্রথম খাদ্য গুদাম থেকে ২০ টন চাল দিতে অস্বীকৃতি জানালে কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত হন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। পরে তিন টন চাল সরকারি গুদাম থেকে তাকে দেওয়া হয় বলে স্বীকার করেছেন খাদ্য গুদামের ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগ স্বীকারোক্তির এমন একটি ভিডিও ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে। যেখানে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার কীর্তনীয়া অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ২০ টন চাল চাঁদা দাবি করেন। পরে তিনি (খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা) চাল দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাহাবুব আলী খান তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন। পরে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে তিন টন সরকারি চাল দেওয়া হয়।

ভিডিওতে আরও শোনা যায়, বিগত বছরগুলোতেও ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ২০ টন চাল চাঁদা নিতেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান।

Advertisement

অভিযোগ স্বীকার করে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার কীর্ত্তনীয়া বলেন, ‘দায় ঠেকে চাল দিতাম ভাই। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে কাঙালিভোজের জন্য আমার কাছে ২০ টন চাল দাবি করেন। চাল না দেওেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন জনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দেন। পরে আমি তাকে তিন টন চাল দিয়েছি।’

তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘তিন টন তো দূরের কথা, তিন কেজি চাল সরকারি গুদাম থেকে দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি তিনি দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি তার দায়িত্ব। আমার এ বিষয়ে জানা নেই।’

অভিযোগ আছে, হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান কাউকে পরোয়া করতেন না। ক্ষমতা দেখাতেন মন্ত্রীর চেয়েও বেশি। নিজ এলাকার মানুষ তাকে চিনতেন ‘বাইদে মাহাবুব’ নামে। জেলার প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে নিতেন নিজের গাড়ির তেল। নিয়ম করে কর্মকর্তারা শহরের পাশের একটি ফিলিং স্টেশন থেকে চাঁদা হিসেবে তেল কিনে দিতেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রকল্প থেকে মোটা অংকের কমিশনসহ বদলি বাণিজ্য ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তদবির বাণিজ্য করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে মাহবুব আলী খানের বিরুদ্ধে। এভাবেই জেলার বিভিন্ন স্থানে জমি কেনাসহ গড়েছেন অঢেল সম্পত্তি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মাহবুব আলী খানের যোগাযোগ ছিল স্বয়ং শেখ হাসিনার সঙ্গে। যে কারণে তিনি দেশের কোনো মন্ত্রীকে গোনার মধ্যে রাখতেন না। বিভিন্ন দেন-দরবার নিয়ে মন্ত্রীদের ফোন দিয়ে আদেশ করতেন এবং সেই কাজ সঙ্গে সঙ্গে করে নিতেন। এভাবে দলকে সুসংগঠিত করার কথা বলে সেন্ট্রাল থেকে লাখ লাখ টাকা এনে আত্মসাৎ করেছেন।’

Advertisement

ওই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জয়ের (সজীব ওয়াজেদ জয়) কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা এনেছিলেন ১৫ আগস্টে শোক পালনের নামে প্রতিবিপ্লব ঘটাতে। যদিও তিনি প্রথমেই ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সেই টাকা তিনি এখনো খরচ করেননি। এখন সেনাবাহিনীর ওপর হামলার প্রধান আসামি হয়ে পলাতক রয়েছে। যে কারণে সেই টাকার আর হিসাব পাওয়া যায়নি।’

এসআর/এএসএম