দেশজুড়ে

শেরপুরে পানি কমতেই ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত

শেরপুরে বৃষ্টি না হওয়ায় ও প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। পানি নেমে গেলেও এখন ভেসে উঠছে ক্ষত। বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন।

Advertisement

এদিকে বন্যায় কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজার ৭১টি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারি হিসাবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা হলেও তা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলার অন্তত পৌনে দুই লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত অধিকাংশ এলাকার বিধ্বস্ত রূপ ভেসে উঠছে। পানি কমলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এলাকাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। গৃহপালিত গরু-মহিষসহ গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষ।

সবজি খেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা। ফলে একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে মাথার ওপর চাল না থাকায় বহু মানুষ চরম কষ্টে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত দুদিনে পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালি, মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলাসহ সদর উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকেও পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। এতে দু’একদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে।

জেলা খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি মৌসুমে সাড়ে ৯৩ হাজার হেক্টর আমনের জমিতে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেওয়া হবে। এছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর তাদের মাঝে বিতরণের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হবে।

Advertisement

ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এএসএম