জাতীয়

দুর্গাপূজা ঘিরে নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

• এবার কমেছে মণ্ডপের সংখ্যা• নজরদারিতে থাকবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা• গুজব ঠেকাতে সাইবার ওয়ার্ল্ডে মনিটরিং• হচ্ছে না ক্রস বর্ডার উৎসব• নাশকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত র‌্যাবের স্পেশাল কমান্ডো টিম

Advertisement

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার (৯ অক্টোবর)। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুর্গোৎসব ঘিরে কিছুটা উদ্বেগ-শঙ্কা বিরাজ করছে পূজারিদের মধ্যে। দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা আরও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত তারা।

জানা যায়, এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বেশ সজাগ। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিগত বছরগুলোতে গুজব ছড়িয়ে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা এখনো তাদের মনে দাগ কাটে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা শেষ করতে বদ্ধপরিকর।

আমাদের মধ্যে আতঙ্ক-আশঙ্কা এগুলো থাকবেই। সেটা সব পূজার সময় থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আতঙ্ক-আশঙ্কা আরেকটু বেশি থাকতে পারে।- বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা

Advertisement

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপনে যা যা করণীয় তার সবকিছুই করা হবে। কেউ যাতে উসকানি কিংবা গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা হবে। বিশেষ করে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে যা করণীয় সেনাবাহিনী তাই করবে।

গত ২ অক্টোবর দুর্গাদেবীর আবাহন তথা মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীর আরাধনা। এর এক সপ্তাহ পর ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী এবং ১২ অক্টোবর মহানবমী শেষে ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের দুর্গোৎসব।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর উদ্ভূত পরিস্থিতির পাশাপাশি ফেনী, নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যার কারণে ওই অঞ্চলের বেশ কিছু মন্দির-মণ্ডপসহ দেশের অনেক মণ্ডপে এবার পূজা হচ্ছে না। চূড়ান্তভাবে পূজামণ্ডপের সংখ্যা এখনো হিসাব করা না গেলেও এবার ৩১ হাজারের কিছু বেশি দাঁড়াবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে। তবে ঢাকা মহানগরীতে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরীতে পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৫৩টি, যা গতবারের তুলনায় ছয়টি বেশি।

সার্বিকভাবে পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসারসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

Advertisement

তবে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা, যা কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে পূজারিদের মধ্যে।

কয়েকটি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুর, ওসি প্রত্যাহার

পাবনার সুজানগরে চারদিনের ব্যবধানে দুটি মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিউল আজমকে প্রত্যাহার করা হয়।

এ প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় যুবলীগের এক কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তি হলেন মো. বাচ্চু আলমগীর ওরফে আগুন বাচ্চু (৩৪)।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় দুর্গাপূজা মণ্ডপের তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার পশ্চিম শ্যামপুর দেউরী বাড়ি সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় মন্দির কমিটি ও পুলিশ। ঘটনার পর বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলামকে সরিয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকার এই একটা ব্যাপারে বারবার কথা বলছে। তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমরা দেখছি পাশের দেশ থেকে এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে যেন প্রতিদিনই হিন্দু ডেডবডি রাস্তায় খুঁজে পাচ্ছি। এটা সত্য নয়।- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ

কিশোরগঞ্জের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলামকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। তরিকুল ইসলামের স্থলে ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিদর্শক (তদন্ত) শ্যামল মিয়াকে।

প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।

যা বলছে পূজা উদযাপন পরিষদ

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আতঙ্ক-আশঙ্কা এগুলো থাকবেই। সেটা সব পূজার সময় থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আতঙ্ক-আশঙ্কা আরেকটু বেশি থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সেনাপ্রধান নিজে ছুটে আসছেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।’

তিনি বলেন, ‘এনটিএমসি আমাদের ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজামণ্ডপকে একটি সফটওয়্যারের আওতায় নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে মিনিটের মধ্যে জানা যাবে কোথায় কী ঘটনা ঘটছে। যেন কেউ গুজব রটিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।’

আরও পড়ুন দুর্গাপূজা ঘিরে সারাদেশে মাঠ প্রশাসনে ৮ নির্দেশনা দুর্গাপূজায় বরাদ্দ দ্বিগুণ, থাকবে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্গাপূজায় কোনো ধরনের শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিজিবির ফোন নম্বর

পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমার বিষয়ে সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ফেনী অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলেও এখন বন্যা হচ্ছে। এই বন্যার কারণে বেশ কিছু জায়গায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমেছে। তবে ঢাকায় মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।’

বাংলাদেশের পূজা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় কিছু নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে- এ বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোন দেশে কোন মিডিয়া কী প্রচার করলো এটা সাংবাদিকরা বলতে পারবেন। এটা তো আমাদের কনসার্ন না। বাংলাদেশের মিডিয়া এবং আমরা কী বলছি, সেটা শুনতে হবে। আমরা তো পূজার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত আমাদের কমিটি আছে। প্রতিটি পূজা কমিটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা একটা কথা বারবার বলতে চাচ্ছি যে, অতীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর কোনো বিচার আমরা পাইনি। বর্তমানে বৈষম্যহীন এ দেশে আমরা অধিকার চাই, আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমরা এই দেশেই জন্মগ্রহণ করেছি। এই দেশ আমাদের। ৫ আগস্টের পর আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকের ওপর নির্যাতন হয়েছে। সেই চিত্র আমরা সরকারের কাছে দিয়েছি।’

যা বলছে বিএনপি

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্র থেকে সারাদেশে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপের নিরাপত্তায় পূজা কমিটির সঙ্গে মিটিং করে তাদের পাশে সার্বক্ষণিক থাকতে হবে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান কোনো সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব নয়, এটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের দ্বন্দ্ব। কিছু কিছু লোক দুর্গাপূজায় ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।’

অনেক এলাকায় পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা পলাতক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘এটা ছিল তাদের আরেকটি পলিটিকস। পূজা পরিষদের কাজ কী? তারা কি হিন্দুদের রিপ্রেজেন্ট করে নাকি? পূজা পরিষদের নামে টাকা তোলা, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জামাই আদর খাওয়া-দাওয়া করবে, আমি এগুলো পছন্দ করি না। যারা পালিয়ে গেছে এতে কিছু আসে যায় না।’

আইনজীবীরা যা বলছেন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দুরা আজ পর্যন্ত যেভাবে তাদের পূজা উদযাপন করেছে আমার মনে হয় ভারতেও এমন পূজা করে না তারা। কারণ বাংলাদেশে সর্বাত্মকভাবে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশসহ রাষ্ট্রের সব বিভাগ নিরাপত্তার জন্য হিন্দুদের পাশে থাকে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ হিন্দু ভারতকেন্দ্রিক এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক। ফলে তাদের আশঙ্কা থাকতেই পারে, তবে তারা যদি মনে করেন আমরা বাংলাদেশের মানুষ তখন আর তাদের ভয় করবে না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার এই একটা ব্যাপারে বারবার কথা বলছে। তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে। কিন্তু আবার আমরা দেখছি পাশের দেশ থেকে এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে যেন প্রতিদিনই হিন্দু ডেডবডি রাস্তায় খুঁজে পাচ্ছি। এটা সত্য নয়।’

দুর্গাপূজায় ঝামেলা কিংবা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কার পরিবেশ অবশ্যই আছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের মধ্য দিয়ে যে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে সেটা অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন চক্র কাজ করছে।- বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারে যারা আছেন তারা অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসছেন, তারা জনপ্রিয়তার মধ্যে আছেন। তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। ধর্মীয় যে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন অক্ষত থাকে। দুর্গাপূজা যেন কোনোভাবে আক্রান্ত না হয়। সংখ্যালঘু যারা আছেন তারা যেন কোনোভাবেই অসম্মানিত না হন। সরকারের গলার জোর আরেকটু বাড়ানো দরকার।’

কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, নির্বিঘ্নে পূজা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৬ অক্টোবর রাজধানীর রমনা কালীমন্দির পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। দুর্গাপূজা যেন ভালোভাবে নির্বিঘ্নে হয়, সেজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। পূজা এবার নির্বিঘ্নে হবে। উসকানির বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা তুলে ধরতে হবে গণমাধ্যমকে।

আমরা মাঠে আছি, নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন: সেনাপ্রধান

৫ অক্টোবর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা কেন্দ্র করে সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সবাই নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন। সবাই যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবেন। আমরা মাঠে আছি।’

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জাগো নিউজকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে বাংলাদেশ পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এবার পূজামণ্ডপে ব্যাগ-থলে-পোটলা নিয়ে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পূজামণ্ডপে এবং প্রতিমা বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে, সম্ভব হলে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর অথবা হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা রাখা, আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকতে হবে।’

পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও ‘স্বেচ্ছাসেবক’ লিখিত আর্মড ব্যান্ড দিন। প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

থাকবে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড-স্পেশাল কমান্ডো টিম

পূজায় র‌্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজামণ্ডপে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করেছে। ৪ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি এবং টহল বাড়ানো হয়েছে, যা বলবৎ থাকবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত।’

এছাড়া র‌্যাব ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিকভাবে পূজামণ্ডপ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রমে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।

লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ অন্য তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্গাপূজা কেন্দ্র করে কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না র‌্যাব। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বাড়ানোর মাধ্যমে জঙ্গিদের যে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত এলিট ফোর্সে র‌্যাব।’

ঝুঁকি নেই তবুও সতর্ক থাকতে চাই: আইজিপি

পূজায় ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব সময় ঝুঁকি পর্যালোচনা করি। ঝুঁকির ক্ষেত্রে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই, তবুও আমরা সতর্ক থাকতে চাই। কেউ যেন ফায়দা তুলতে না পারে সেজন্যই বাড়তি সতর্কতা। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অপতৎপরতার সুযোগ নেই। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড, নৌ অঞ্চলে নৌপুলিশসহ বিশেষায়িত পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।’

সোয়া দুই লাখ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার মোতায়েন

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ‘সারাদেশের পূজামণ্ডপে দুই লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে আটজন, গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ছয়জন ও সাধারণ মণ্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে। তারা ৮ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছয়দিন পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।’

সীমান্তে কমেছে মণ্ডপ, হচ্ছে না ক্রস বর্ডার উৎসব

এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘দুর্গাপূজায় ঝামেলা কিংবা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার আশঙ্কার পরিবেশ অবশ্যই আছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের মধ্য দিয়ে যে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে সেটা অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন চক্র কাজ করছে। সরকার পতনের পর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো ঘটনা অতিরঞ্জিত করে আন্তর্জাতিকভাবে একটি রূপ দেওয়ার প্রয়াস ছিল। এর মধ্যে দু-একটি মন্দিরে ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভয়-ভীতির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে দুর্গাপূজার মাধ্যমে সীমান্ত অস্থিতিশীল করতে পারে।’

গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা কমেছে না বেড়েছে- প্রশ্ন করা হলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘এক অর্থে কমেছে। গত বছর বা অন্য সময় সুনির্দিষ্ট মন্দির ছাড়াও বেশ কিছু জায়গায় মণ্ডপ হতো, এবার সেটা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা যায়।’

সীমান্তবর্তী বেশ কিছু বড় মন্দির আছে, এপারেও আছে ওপারেও আছে। সেখানে ক্রস বর্ডারে পূজায় উপস্থিতি অনেক হতো। সেটা এবার একটু নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিএসএফও যেমন বদ্ধপরিকর যে ক্রস বর্ডার বা মুভমেন্ট হবে না, আমরাও সেটা চেষ্টা করছি।’ জানান তিনি।

টিটি/এএসএ/এএসএম