দেশজুড়ে

সরকার পতনের পর পলাতক ঠিকাদার, স্থবির শতকোটি টাকার কাজ

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় শেরপুরে প্রায় শতকোটি টাকার কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সরকারের এসব কাজ বন্ধ থাকায় বাড়ছে ভোগান্তি। দীর্ঘ সময়েও এসব কাজ শেষ না হওয়ায় গ্রামীণ সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টের অসমাপ্ত অংশে নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ।

Advertisement

এলজিইডি বলছে, পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা ঠিকাদারদের চূড়ান্ত নোটিশ করা হলেও কাজে ফিরছেন না অনেকেই। তাদের চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তির পরিকল্পনা করছে সরকার।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বিকল্প সংযোগ সড়কের চাপাতলী সেতু। ধানশাইল, ভটপুরসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা চুক্তিতে গতবছরের মার্চে সেতু নির্মাণ শুরু করে ধ্রুব ট্রেড এজেন্সি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। এজন্য বন্ধ রয়েছে কাজ।

একই অবস্থা শেরপুর সদরের চৌধুরীবাড়ী মোড় থেকে ৭ নম্বর চর এলাকার সড়কের। ব্রহ্মপুত্রের চরে প্রায় দেড় লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা চুক্তিতে কাজ শুরু করে ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ ও বরেন্দ্র কন্সট্রাকশন। ৩৫ শতাংশ কাজ শেষের আগেই পালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর রুমান।

Advertisement

কাজ শেষ না করেই পালিয়েছেন প্রায় ৬ কোটি টাকা চুক্তিতে শুরু করা ঝিনাইগাতী থেকে মোহনগঞ্জ বাজার সড়কের ঠিকাদার শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল এবং ছাত্রলীগ নেতা জনি ও রাশেদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ উপজেলায় এলজিইডির বাস্তবায়িত কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু, মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল, জেলা যুবলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও তাদের সমর্থকরা। তবে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় শেষ হয়নি পাঁচ উপজেলার বেশিরভাগ উন্নয়নকাজ। অর্ধেক কাজ ফেলে রাখায় একদিকে যেমন বেড়েছে ভোগান্তি, অন্যদিকে ক্ষতির মুখে সরকারি সম্পদ ও অর্থ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চলমান কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

শেরপুর সদর উপজেলার ৭ নম্বর চর এলাকার কৃষক নাদের আলী বলেন, ‘এই রাস্তাটা এখন আমাদের গলার কাঁটা। আমরা না পারি যাতায়াত করতে, না পারি গাড়ি দিয়ে চলতে। আমরা চাই দ্রুত কাজটা শেষ করে আমাদের কষ্টটা লাঘব করে দিক।’

ঝিনাইগাতী উপজেলার বাগেরভিটা এলাকার ছাদেক মিয়া বলেন, ‘আমগোর এই সেতুডা দুই বছর ধইরা এমনেই পইড়া রইছে। এই পাড়ের মানুষ ওই পাড়ে যাইতে পারে না। রোগী নিয়া ঘুইরা যাওন লাগে দশ কিলোমিটার। কী যে একটা অশান্তির মধ্যে আমরা আছি, কাউরে বুঝাবার পারি না।’

Advertisement

ধানশাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটা সেতুর জন্য শ্রীবরদী উপজেলা থেকে ঝিনাইগাতীর বিকল্প সড়কের মানুষগুলোর দুর্ভোগ চরমে। আমরা ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে ঠিকাদাররা কাজ করতেন না। কল দিলে তারা ফোনও ধরেন না। তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলেন, এখন পলাতক আছে।’

এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্ধ থাকা কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কাউকে ২৮ দিনের আবার কাউকে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যারা কাজে ফিরতে পারবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইমরান হাসান রাব্বী/এসআর/জেআইএম