অর্থনীতি

শ্রমিক অসন্তোষ-ভাঙচুর, হুমকিতে উৎপাদনমুখী শিল্প

দেশের উৎপাদনমুখী বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ মারাত্মক আকার ধারণা করেছে। হামলা ও ভাঙচুরের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। দাবি মেনেও মিলছে না নিস্তার। অচল হয়ে পড়েছে অনেক কারখানা। ফলে রপ্তানিকারক ও স্থানীয় পণ্য উৎপাদকরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

Advertisement

কারখানা মালিকরা বলছেন, উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমদানিকারক দেশগুলোতে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে সমস্যায় পড়বেন রপ্তানিকারকরা। শুধু তাই নয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগের কারণে ব্যবসায়ীরা কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকরাও চাকরি হারাতে পারেন।

দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা ও অপরাধীদের দমনে যথাযথ পদক্ষেপের অভাব দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আমাদের উৎপাদন ১০-১২ দিনের জন্য বন্ধ ছিল। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার উৎপাদন খতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে আমরা সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবো না। কারণ এটি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে।- কোকোলা ফুডসের মহাব্যবস্থাপক মো. মহসিন

Advertisement

শেখ হাসিনার পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের অনুপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। পরবর্তীসময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও সার্বিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি।

আগস্টের শেষ দিকে পুনরায় অস্থির হয়ে ওঠে শিল্পাঞ্চল। শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের অধিকাংশ যৌক্তিক দাবি পূরণে সম্মত হলেও থামেনি সহিংস অস্থিরতা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প এবং কিছু কিছু ভোগ্যপণ্যের কারখানায়।

শিল্পের মালিকরা বলছেন, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শ্রমিকরা সহিংস হয়ে ওঠায় আমরা আতঙ্কিত। গত মাসে আমরা শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছিলাম, যা উৎপাদন ব্যাহত করেছিল।

ভোক্তাপণ্য প্রস্তুতকারকদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উদ্যোক্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বাজারে পণ্য সরবরাহ করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন হবে। রপ্তানিমুখী উৎপাদকরা চরম উদ্বেগের মধ্যে আছেন। কারণ তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য পাঠাতে হবে।’

Advertisement

আরও পড়ুন যে কারণে থামছে না পোশাক খাতের শ্রমিক অসন্তোষ ওমালিকরা প্রতিশ্রুতি না রাখলে শ্রমিকরা আবারও বিরক্ত হতে পারে অচেনা শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি পোশাক শিল্পে! সাভারে শ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ১

‘যদি শ্রমিকদের অস্থিরতা অব্যাহত থাকে এবং এটি উৎপাদন ব্যাহত করে তাহলে ক্রেতারা ছাড় চাইবেন কিংবা উড়োজাহাজের মাধ্যমে তাদের পণ্য পাঠাতে হবে।’ এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী।

‘একটি কোম্পানি হিসেবে আমরা অন্যদের চেয়ে বেশি বেতন দেই এবং কোনো বকেয়া নেই। হঠাৎ শ্রমিকরা ১২ দফা দাবি পেশ করলে ১১ দফাই পূরণ করি। তা সত্ত্বেও তারা বিক্ষোভ করে। বহিরাগতদের উসকানিতে কিছু শ্রমিক কারখানা ভাঙচুর করে। ফলে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণে প্রায় ছয় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ বলছিলেন কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মহসিন।

বেতন বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি জানুয়ারিতে মজুরি বাড়িয়েছে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আগামী জানুয়ারিতে আবার বাড়ানো হবে। বলছিলেন এই ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আমাদের উৎপাদন ১০-১২ দিনের জন্য বন্ধ ছিল। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে আমরা সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবো না। কারণ এটি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে।’

৫ আগস্টের পর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে অস্থিরতা দেখা দিলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে আরও অস্থিরতা বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে স্থানীয় বাজারে খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হবে।- বাপা সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক।

৫ আগস্টের পর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে অস্থিরতা দেখা দিলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে আরও অস্থিরতা বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে স্থানীয় বাজারে খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হবে বলে জানান বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক। শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের উচিত ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, তা না হলে রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলেও জানান তিনি।

সময়সীমার মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পাঠাতে হয় বলে ভোগ্যপণ্য রপ্তানিকারকরা গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছেন। একজন রপ্তানিকারক দাবি করেছেন, যদি নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয় তাহলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পণ্য রপ্তানি করতে সমস্যায় পড়তে হবে। বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা আমাদের ওপর আস্থা হারাবে। তাই কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের এখনই সময়।

আইএইচও/এএসএ/এএসএম