আন্তর্জাতিক

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী গণপরিবহন ট্রাম। বর্তমানে ভারতের একমাত্র এই শহরটিতেই ট্রাম চলাচল করে। তবে সময়ের পরিক্রমায় কলকাতায় অনেকাংশে কমে গেছে ট্রাম চলার রাস্তা। ধীরে ধীরে কমেছে ট্রামের সংখ্যাও। কিন্তু এবার তিলোত্তমার সেই নস্টালজিক বাহন চিরতরেই বন্ধ হওয়ার পথে।

Advertisement

যদিও কলকাতার রাস্তায় ট্রাম ফেরানোর দাবিতে হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে। শহরের রাজপথে ট্রাম চালানোর উপায় খুঁজে বের করতে কলকাতা পুলিশ, পূর্ত দপ্তর, কলকাতা করপোরেশনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করেছেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন>>

বাংলাদেশের ইলিশ পাঠানোর ঘোষণায় পশ্চিমবঙ্গে খুশির জোয়ার ভারতবিরোধী পোস্ট করে বিপাকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাজ্য সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বাংলাদেশকে অনুসরণ করা হচ্ছে: মমতা

এর মধ্যেই গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানান, কলকাতা শহরে ট্রাম চালানোর বিষয়ে রাজ্যের অনাগ্রহের কথা।

Advertisement

শহরের এসপ্লানেট থেকে ময়দানের মধ্যে একটি ছোট রুট ছাড়া অন্য সব রুটে ট্রাম চালাতে না পারার কথা জানিয়েছেন স্নেহাশীষ। তিনি বলেন, মন্থর গতির পরিবহন হওয়ায় ট্রাম তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। এছাড়াও ট্রাম চালাতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ব্যস্ততম কলকাতায় যানজট তৈরি হচ্ছে। দ্রুতগতির যুগে ধীরে চলা ট্রামের কারণে রাস্তায় সমস্যা বাড়ছে।

এ অবস্থায় যানজট এবং দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী।

কলকাতার জনপ্রিয় গণপরিবহন ট্রাম। ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সরকারের যুক্তির ভ্রান্তি আদালতে একাধিকবার তুলে ধরা হয়েছে। সেজন্য আদালত কমিটি গড়ে সমাধান খোঁজার কথাও বলেছেন।

Advertisement

তার দাবি, ট্রাম ডিপোর জমি হাতাতেই এই পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে রাজ্য সরকার।

কলকাতা শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতাশ পরিবহন বিষয়ক সংগ্রাহক সৌভিক মুখোপাধ্যায়ও। তার মতে, সরকারের এমন অবস্থান দুর্ভাগ্যজনক।

কলকাতাবাসীর সঙ্গে অনেকটা নাড়ির টান রয়েছে ট্রামের। শহরে মাটির নিচের মেট্রোরেল আধুনিকতার প্রতীক হলে ট্রাম হলো ঐতিহ্যের প্রতীক। কলকাতায় ট্রাম প্রথম চালানোর চেষ্টা হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলে।

১৮৭৩ সালে কলকাতার আর্মেনিয়ান ঘাট (বর্তমান বাবুঘাট) থেকে শিয়ালদহ ট্রাম পর্যন্ত চালানো হয়। সেসময় ট্রামে যথেষ্ট লোক উঠতো না বলে সাত বছর পর তখনকার ব্রিটিশ সরকার এই সেবা বন্ধ করে দেয়। তখন অবশ্য কলকাতায় ট্রাম টানতো ঘোড়ায়।

১৯০০ সালে ঘোড়ার বদলে প্রথম বিদুতের মাধ্যমে ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ১৯০২ সালে। সে বছর ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চলে।

এরপর ধীরে ধীরে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতাজুড়ে শুরু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রামের যাত্রা। কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতার বাসিন্দা ছাড়াও শহরে আসা বিদেশি পর্যটকদেরও পছন্দের পরিবহন হয়ে ওঠে ট্রাম। কিন্তু আজ সেই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। কিছুদিন পর হয়তো আর ট্রামে চড়া হবে না। ট্রাম দেখতে হলে হয়তো জাদুঘরেই যেতে হবে মানুষদের।

ডিডি/কেএএ/