দেশে সরকারিভাবে পরিচালিত দুই ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি দুই নিয়মে চলছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থাপিত নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়াধীন ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে যে কোনো ধরনের ডিএনএর নমুনা (হত্যা, খুন, ধর্ষণ, পিতৃত্ব নির্ণয়, অজ্ঞাত লাশের পরিচয় নির্ধারণসহ) পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রতি ৫ হাজার টাকা আগাম ফি পরিশোধ বাধ্যতামূলক। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়াধীন সিআইডি দ্বারা পরিচালিত ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে একই ধরনের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হচ্ছে। ফলে সিআইডি পুলিশের ডিএনএ ল্যাবরেটরিটি যেমনি সাধারণ মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে তেমনি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের নিয়মে পরিচালিত হওয়ায় কোনটি সঠিক পদ্ধতিতে চলছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে ডিএনএর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই মন্ত্রণালয়াধীন দুটি ডিএনএ পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো আইন বা বিধিবিধান নেই। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিএনএর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত হয়ে ল্যাবরেটরির কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য এটি অধিদফতরে রূপান্তরিত করার নির্দেশ দেন।তিন বছর পার হতে চললেও এখনো পর্যন্ত অধিদফতরে পরিণত হওয়ার দৃশ্যত কার্যক্রম নেই! শুধু তাই নয়, ডিএনএ ল্যাবরেটরি কিভাবে চলবে তা নির্ধারণের জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৪ পাস হলেও আইনের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য এখনো পর্যন্ত বিধিমালা প্রণীত হয়নি। এ কারণে দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিএনএ ল্যাবরেটরির কার্যক্রম নিজস্ব নিয়মে চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনএ ল্যাবরেটরির একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি কি হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো আইন বা বিধিমালা না থাকায় দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে ভিন্নতা দেখা দিচ্ছে। ফলে আদালতের বিচারকরাও দুই ল্যাবরেটরির কোনটির পরীক্ষা পদ্ধতি ও গুণগত মান সঠিক সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে দোদুল্যমানতায় ভুগছেন। অনেক সময় আদালত এক ল্যাবরেটরির নমুনা পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করতে অন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠাচ্ছেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দুই ল্যাবরেটরি পরিচালনায় স্বতন্ত্র আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করলেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়াধীন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে পরিচালিত ‘মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স এগেইনস্ট ওম্যান’ প্রকল্পের অধীনে ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিটি এক যুগেরও বেশি সময় ২০০৩ সাল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। গত এক দশকে ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে স্পর্শকাতর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার সেনা কর্মকর্তা রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টসে নিহতদের লাশ শনাক্ত, ধর্ষণকারী ও পিতৃত্ব নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। এমইউ/এসএইচএস/এবিএস
Advertisement