একুশে বইমেলা

অচেনা পথে চেনা মানুষ: নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার গল্প

তানজিদ শুভ্র

Advertisement

প্রতিটি মানুষের জীবনেই গল্প থাকে; হোক তা বিষাদের কিংবা আনন্দের। আমাদের একই সমাজে মধ্যবিত্ত, বিত্তশালী, লোভী—নানা চরিত্রের মানুষের বাস। একেক জনের জীবনের গল্প একেক রকম। আহমেদ শিমুর এবারের উপন্যাস ‘অচেনা পথে চেনা মানুষ’ ঠিক তেমনই ভাবে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন সংগ্রামের গল্প বলতে চেয়েছেন। তিনি বিত্তশালী আর লোভী মানুষের জীবনের ছবিও প্লটে এনেছেনে নিখুঁতভাবে। যাপিত জীবনের সুখ, দুঃখ, মধ্যবিত্তের সংগ্রামী জীবনের কথা ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে।

বইটি হাতে নিলেই প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে কিছু রহস্যের ইঙ্গিত। একটি রক্তাক্ত বাক্সে ছুঁড়ি আর পাশে এক নারীর অবস্থান। তবে কি এই নারীই উপন্যাসের মূল চরিত্র নাকি অন্য কেউ? এই প্রশ্নের উত্তর না হয় পাঠক উপন্যাস পড়ে শেষ করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। শুরুটা একদম রহস্যময় ভাবে। শীতের রাতে এক ঘটনা দিয়ে গল্পের শুরুর বুনন। শুরুতেই উপন্যাসের নায়ক চরিত্র চাকরিপ্রত্যাশী রাতুলের জীবনযাপনের বর্ণনায় লেখক বর্তমান সময়ের অগণিত তরুণের বাস্তব জীবন ফুটিয়ে তুলেছেন।

উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে একটি ঘটনার পর কী ঘটতে যাচ্ছে, তা সহজে অনুমেয় ছিল না। লেখক প্রতিটি প্লট নিখুঁতভাবে সাজিয়েছেন। উপন্যাসজুড়ে পরিবারে নারীদের অবহেলার শিকার হওয়ার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি যৌতুকের বিরুদ্ধাচরণ করে নারীকে নিজের অবস্থান তৈরির আবেদন ছিল এই লেখায়। নায়ক চরিত্র রাতুলের বড় বোন নিরুর বিবাহিত জীবনেও যৌতুকের বাজে প্রভাব পড়ছিল। জুয়ারি স্বামী প্রতিনিয়ত যৌতুকের টাকা চেয়ে অমানবিক আচরণ করত। একসময় নিরু তার স্বামীকে পুলিশে সোপর্দ করে নিজে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে। আর রাতুলের ছোট বোন তিতিরের বিয়ে ভেঙে যায় যৌতুক দিতে রাজি না হওয়ায়। তবে পাত্রের ইচ্ছায় বিয়ে হলেও পরে স্বামীর সংসারে খুব হেলায় দিন কাটছিল তিতিরের। একসময় পড়াশোনায় অমনোযোগী তিতির আবার পড়াশোনা শুরু করে যখন নিজের অবস্থান বুঝতে পারে। ঘটনায় এসব স্বাভাবিক হলেও রহস্যের গল্প ছিল ভিন্ন অংশে।

Advertisement

একেবারে শুরুতে রাতুলের হুট করে অচেনা অজানা একজনকে বিয়ে করতে হয় এক সমস্যা এড়াতে। বিয়ের পর রাতুল জানতে পেরেছিল মেয়েটি শহরের এক প্রভাবশালীর মেয়ে আর সেই প্রভাবশালী খুন হয়েছে। খুনী তার পরিকল্পনামতো তনিমা নামের এই মেয়েকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে খুনের দায় স্বীকার করাচ্ছিল। আকস্মিকভাবেই রাতুলের চাকরি হয় ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির কোম্পানিতে এবং তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় খুনীকে খুঁজে বের করতে। একটা সময় পর রাতুল তার চাকরিদাতা কর্মকর্তার সব অসৎ উদ্দেশ্য আর কর্মকাণ্ড টের পেয়ে প্রমাণসহ পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। এদিকে ওই ব্যবসায়ী খুনের রহস্যও উন্মোচন হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

রনজু রাইমের অস্পর্শিয়া: কবিতায় প্রেম ও দর্শন বীরের মুখে বীরত্বগাথা: দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে

উপন্যাস পড়ে মনে হবে, প্রচ্ছদের নারী চরিত্রটি তনিমার অবয়ব আর জীবন সংগ্রামের গল্পে নিরুই মূল চরিত্র। আর রাতুল তো সামগ্রিক অর্থেই নায়ক চরিত্র ছিল এই উপন্যাসে। তবে উপন্যাসের শেষ হয় তিতিরের গল্প দিয়ে। যেভাবে লেখক উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন, সেটি হয়তো আরেকটু ভিন্ন হতে পারতো। যদি কিছুটা রহস্য গল্পের প্লটে রেখে দিতেন পাঠককে তৃষ্ণার্ত করতে। বইটির প্রচ্ছদ, কাগজ, ছাপার অক্ষর আর বাঁধাই সবই যুতসই ছিল। মুদ্রণের সময় অনিচ্ছাকৃত কিছু শব্দের ভুল বানান পরবর্তী সংস্করণে সঠিক হয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছাবে এমনটাই প্রত্যাশা।

মানুষ জাতি কখনোই নিখাঁদ ভালোবাসা ও ত্যাগকে মূল্যায়ন করতে পারে না। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে গল্পের বুননের গভীরতায় বইটির নাম ভুলে যেতে পারেন। তবে উপন্যাসটি উপলব্ধি করতে পারলে বোঝা যাবে নামটি প্রকৃতপক্ষেই সার্থক। দিন দিন আমাদের চেনা মানুষগুলোই অচেনা পথে গিয়ে বাড়ছে দূরত্ব। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত ১২৮ পৃষ্ঠার ‘অচেনা পথে চেনা মানুষ’ বইটি পাঠক ঘরে বসেই বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

Advertisement

বই: অচেনা পথে চেনা মানুষলেখক: আহমেদ শিমুপ্রকাশনী: অনুজ প্রকাশনপ্রচ্ছদ: সাদিত উজ জামানমূল্য: ৩২০ টাকা।

আলোচক: ফিচার লেখক।

এসইউ/এমএস