সাহিত্য

কামাল চৌধুরীর কবিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

বঙ্গ রাখাল

Advertisement

আমাদের নেতা, আমাদের পিতা, নিদারুণ একজন জনপ্রিয় এবং জনদরদী বিপ্লবস্পৃহার মানুষই বটে। সবাইকে নিয়ে চলতেই তিনি পছন্দ করতেন কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর কাজ। অন্যায়কে তিনি মেনে নিতে পারতেন না কিংবা জীবনে কোন দিনই অন্যায়কে সমর্থন করেননি। যে কারণে তাকে বারবার রাস্তায় নামতে হয়েছে এবং কারাবরণের জীবনকে বেছে নিতে হয়েছে। তিনি সময়ের লাগাম টেনে ধরতে জানতেন, যে জন্য তিনি সময় থেকেও অনেক এগিয়ে থেকেছেন। এজন্যই তো নেতা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে পারেন, ‘ওরা আমাকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। ওরা আমাকে হত্যা করলে লক্ষ মুজিবের জন্ম হবে।’ এ কথাটা শুনলেই আর আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে, তিনি কতটা বিশ্বাসী ছিলেন এ দেশের জনসাধারণের প্রতি। সেই আমাদের প্রাণের পুরুষ, যাকে আমরা নিজেদের জীবন দিয়ে অনুভব করি। সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করা আর অনাহারী, নির্যাতিত, পদদলিত, নিম্নবিত্ত, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় নিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ দেশে একজন নেতার আগমন ঘটে। যিনি মানুষ ব্যতিত অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেননি। তিনিই তো আমাদের সবার নেতা শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)। তিনি অন্তরে ধারণ করতেন শিল্প-সাহিত্য কিংবা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অভিপ্রায়। স্বার্থের কোন ইচ্ছাপাখি শেখ মুজিবুর রহমানের অন্তরে কোনোদিন বাসা বাঁধেনি। এ দেশের মানুষের মুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি নিজের জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন। যখন তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এর চেয়ে মহাশক্তি আর কী হতে পারে? এই ভাষণই সেদিন ছিল মুক্তিকামী বাঙালি জাতি ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সব অনুপ্রেরণার উৎসশক্তি। ছিল বাঙালির একধরনের সঞ্জীবনী শক্তি।

শেখ মুজিবুর রহমান অকুতোভয় একজন বীরসৈনিক। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি তাঁর পথ থেকে পিছপা হননি। তিনি শত্রুর কাছে কখনো মাথা নত করেননি, ‘তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না এবং যাবার সময় বলে যাবো, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান’। নেতার অন্তরে প্রতি মুহূর্তে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত ছিল। তিনি তাঁর সাহস, বাগ্মিতা আর অনমনীয়তা দিয়েই তো অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের দিয়েছেন স্বাধীনতা।

আমরা সেই জাতি, যে জাতি আমাদের নেতাকে হত্যা করেছি। ঝাঝরা করে দিয়েছি নেতার বুকসহ তাঁর পরিবার। ছোট্ট রাসেলকেও ক্ষমা করা হয়নি। যে রাসেল ছোট্ট দুটি হাত তুলে বলেছে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও আমি আর এখানে থাকবো না। আমি আমার হাসুবুর কাছে চলে যাবো।’ তবু সেদিন তাকে ক্ষমা করা হয়নি। হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। আমরা আমাদের নেতাকে মানে আমাদের স্বদেশকেই সেদিন হত্যা করেছি। যিনি আমাদের স্বাধীনতা দিলেন, আমরা প্রতিদানে তাঁরসহ তাঁর পরিবারের জীবন নিয়েছি। যিনি আমাদের জন্য কাঁদেন, আমরা তাকে ভর্ৎসনা করি। শুধু ভর্ৎসনাই নয়, তাকে হত্যা করে পৃথিবীর বুকে এক কালো জাতি হিসেবে নিজেদের নাম লেখাই।

Advertisement

আমাদের পিতাকে আমরা হত্যা করেছি। আমরা তাঁর কুলাঙ্গার সন্তান। একটা জাতি যখন বিক্ষোভ, যন্ত্রণা-আত্মপীড়নের মধ্য দিয়ে সময়কে অতিক্রম করছিল, মানুষের জীবন যখন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল; ঠিক তখনই আমাদের একজন সত্য ন্যায় আর আদর্শের প্রত্যয়ী বলিষ্ঠ বিবেকের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

জাতির ভাগ্যবদলের জন্য এই বাংলায় যার আবির্ভাব হয়েছিলে। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দেশের অবহেলিত-অত্যাচারিত লাঞ্ছিত-বঞ্চিত বাঙালির মুক্তির দূত, অন্তিম সময়ের মুক্তির কাণ্ডারী। যার আগমন ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। এই গ্রামেই বেড়ে ওঠেন মহাকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলার মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টায় কাটিয়ে দিয়েছেন জীবন। শুধু কি তাই? এই জাতির জন্য নিজের জীবন নয়, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের রক্তে ভেসে গেছে বাংলার মাটি। তার ধানমন্ডির বাড়িতে এখনো লেগে আছে রক্তের ছাপ। যে মহান নেতা এই বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ নিয়ে এসেছিলেন; তাকেই হত্যা করলো এ দেশের কুচক্রী ক্ষমতালোভী বাঙালি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যার পর এ দেশের রাজনৈতিক পালাবদল শুরু হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবুও এই নিষিদ্ধ সময় নিজের বিপদ হবে জেনেও দ্রোহী-সাহসী ও প্রত্যয়ী তরুণ কবি কামাল চৌধুরী ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে লিখলেন—‘রক্ত দেখে পালিয়ে গেলেবক্ষপুরে ভয়, ভাবলে না কার রক্ত এটাস্মৃতিগন্ধময়, দেখলে না কার জন্ম-মৃত্যু জাতীয়তাময়’; (জাতীয়তাময় জন্ম-মৃত্যু)

কবি কামাল চৌধুরী এই নবীন বয়সে জাতির পিতার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। হৃৎখোড়লে ব্যথা অনুভব করেছেন। চোখের কোণে জমেছে অশ্রু। ব্যথিত হৃদয়ে এই মহান নেতাকেই স্মরণ করেন। তাই তো দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন—...শোষিতের বৈঠা ধরে আছেহে আমার স্বাধীনতার মহান স্থপতিমহান প্রভুর নামে আমার শপথসেই বৃদ্ধদের প্রতি আমার শপথসেই সব ভাই বোন লক্ষ লক্ষ মানুষদের প্রতি আমার শপথআমি প্রতিশোধ নেবোআমার রক্ত ও শ্রম দিয়েএই বিশ্বের মাটি ও মানুষের দেখাসবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যার আমি প্রতিশোধ নেবো। (টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে)

কবি কামাল চৌধুরী জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। কোনভাবেই এই বেইমানদের ক্ষমা করবেন না। পৃথিবীর যতগুলো জঘন্য হত্যা হয়েছে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যাকাণ্ড জাতির পিতাকে হত্যা। কবি এই মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন না। তিনি তো মানুষ ছিলেন—কোন দেবতা ছিলেন না। যারা নেতাকে দেবতা জ্ঞান করেছেন তারাই নেতাকে সুযোগ বুঝে ক্ষমতার নেশায় হত্যা করেছেন। তাই তো বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ করেন—...মহান মানব ছিলে তুমি—দেবতা তো কখনো ছিলে নাদেবতা বানিয়ে যারা স্তুতি করেছে তোমারজনসভা সেমিনারে বহুবার জীবন দিয়েছেতোমার মৃত্যুর পরেতারা কেউ আমাদের সাথে নেই আজ...

Advertisement

তীব্র প্রতিশোধ আমি ছুড়ে দিই খুনিদের মুখেদ্যাখো, আগুন জ্বলছে আজ শুদ্ধ সব বাঙালির বুকেএখন স্বদেশে চাই, শুধু চাইতোমার সৈনিক কিছু সবল গোলাপ। (টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে)

রাজনৈতিক কবি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। এ দেশ গরিবের, ফকিরের, এ দেশ আমাদের সবার। তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় গেলেই তার প্রমাণ মিলবে। চাকচিক্য তিনি পছন্দ করতেন না। অতি সাধারণের জীবনই যেন তাকে অসাধারণ করে তুলেছে। একজন নেতাকে দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় এসে ভিড় করে, একনজর তারা দেশনেতার মুখ দেখবে। তাঁর মুক্তির জন্য দীনহীন মানুষও দরগায় সিন্নি করেছে, রোজা থেকেছে এমনকি নিজের সবকিছু বিলিন করে দিয়েছেন। নেতাও এ দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্যই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আজ আমরা দেশের মানুষ কি তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে সোনার বাংলা করে রাখতে পেরেছি। না, আমরা রাখতে পারিনি আমাদের দেশের রাজনৈতিক পট বারবার পরিবর্তিত হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে এবং বিরোধী শক্তি আমাদের নেতার স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করে নিজেরা হয়ে উঠেছেন সোনার বাংলা নির্মাণের প্রতিষ্ঠাতা। যুদ্ধের বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছে মহা ক্ষমতার কর্ণধার। নেতাকেও একসময় বুকের তাজা রক্তে লিখতে হয়েছে বাংলাদেশের রক্তাক্ত নাম। কবি কামাল চৌধুরী তাঁর ‘টুঙ্গিপাড়ায় ঘুমাও বাংলাদেশ’ কবিতায় লিখেছেন—১.তবু আমি রক্তলেখা লিখি তবুও লিখি অশ্রু-সরোবর একটি ঝরাপাতার পাশে লিখি শোকার্ত ফুল, স্মৃতিও মর্মর।

২.তোমার মৃত্যুর কথা মনে হলেতোমার জন্মের কথা মনে হয়ে যায়তোমার মৃত্যুকে তাই তুচ্ছ করি, ছুড়ে ফেলিতোমার মৃত্যুকে তাই ভুলে যাই, কোথাও দেখি না। (তোমার মৃত্যুর কথা মনে হলে)

কবি কামাল চৌধুরীর কবিসত্তা সত্যিই পাঠককে ভাবিত করে। কবি যে প্রত্যয় নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন সেই কথা তিনি বারবার রাখার চেষ্টা করে গেছেন। তবু হাল ছাড়েননি। তিনিও যে বিপদের সম্মুখিন হননি তা কিন্তু নয়। তিনি তার ‘বীরের এ রক্তস্রোত’ কবিতায় বলতে চেয়েছেন একটা চেতনাধারী মানুষকে হত্যা করলেই তার চেতনাকে শেষ করে দেওয়া যায় না। বরং তা কয়েকগুণ তীব্রতা নিয়ে বেগবান হয়ে ওঠে। জনক মরতে পারে, কিন্তু তাঁর চেতনা মরে না—গুলি বোমা নির্বাসন এ-সবের তাৎপর্য ক্ষণিক/ঘাতকের কাপুরুষ, অপশক্তি সহিংস কার্তুজে/নারী-হন্তা, শিশু-হন্তা—তারা ঘৃণ্য থাকে চিরকাল।... দশ কোটি, বারো কোটি, শত কোটি অগ্নিপুত্র বাড়ে/ জননী বাংলায় তারা স্থপতিকে অর্ঘ্য দিয়ে যায়। কবি নিজেকে মুজিবের লোক বলে পরিচয় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি কিংবা অন্যদের মতো ছলচাতুরির আশ্রয় নেননি। তাই তো নিজেকে ব-দ্বীপের বলে ঘোষণা দিয়েছেন।১.আমরা ব-দ্বীপের লোকআমরা ভাত ও মাছের স্বপ্নে বেঁচে থাকিআমরা মুজিবের লোক; (বিজয় দিবস)

যেই মানুষটি স্বাধীনতাপ্রিয় ছিলেন—যিনি সবার স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন; সেই মানুষ আজ মৃত্যুর মতো তরতাজা মুখ নিয়ে শুয়ে আছেন। কিন্তু এই দেশের মানুষ তা মেনে নিতে পারেনি। আর কবি কী করে মেনে নেবেন। কবি তো আবেগী, একটু সংবেদনশীল মানুষ। তিনি কী করে ভুলতে পারেন। এই মৃত মানুষকে তিনি মৃত বলতেও রাজি নন। তার সামনে সব সময় ঘুরেফিরে আসে জনকের মুখ। এই মুখই তাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। তাকে ভাবিত করে, তাড়িত করে, মোথিত করে গড়ে তোলে। তাই তো কবি কামাল চৌধুরী তার ‘সেই মুখখানি কবিতার চেয়ে বড় ছিল’ কবিতায় বলেন—সেই মুখখানি স্বাধীনতাপ্রিয় ছিল,সেই মুখখানি মিছিলে মানব হতোউত্থিত হতে স্লোগানে চলায় মিলেসেই মুখখানি অগ্নির সাথী ছিল...

মৃত্যুর রাতে তরতাজা সেই মুখরক্তে বুলেটে একাকার শুয়ে ছিলধূপধুনাহীন বারুদের প্রিয় ঘ্রাণেসেই মৃতদেহ যুদ্ধপ্রেরণা ছিল।

শিশিরের কাছে পদচিহ্নের মতো সেই মুখখানি ফিরে বারবার ফিরে আসে। কবি সেইদিন পতাকা ওড়াবেন; যেদিন তিনি জনক হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারবেন। এখন তিনি শত্রুর হাতে বন্দি তার স্বাধীন স্বদেশে। এই বন্দিদশা কবিকে তরুণ বয়সে বারবার ব্যথিত করেছে। তাই তাড়িত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ১৯৭৭ সালে লেখেন প্রথম প্রতিবাদী কবিতা। স্লোগান হিসেবে লেখা হয়েছিল—‘মুজিব লোকান্তরে, মুজিব বাংলার ঘরে ঘরে’। এটা সেই সময় ছড়িয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়, নগর-মহানগরের দেয়ালে দেয়ালে; প্রতিশোধের আগুনে প্রজ্বলিত করে তরুণ সমাজকে। কবি কামাল চৌধুরী তার একটি লেখায় এই স্লোগান লেখার পটভূমি উল্লেখ করেছেন। ‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, গৌরব সবকিছু তখন ভূলুণ্ঠিত। সামরিক শাসন এবং হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি জেঁকে বসেছে জাতির ঘাড়ে। শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতি। কেউ কথা বলার সাহস রাখছে না। এমনই ভয়াল সময়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। বঙ্গবন্ধুর এই মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জমা হয়েছিল হৃদয়ে। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না এই হত্যাকাণ্ড। বুকের ভিতর তীব্র প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল, প্রতিবাদী হয়ে উঠছিল মন। কিন্তু সময় প্রতিকূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাতকরাও তৎপর—ছাত্রদের মধ্যেও তারা পেটোয়া বাহিনী তৈরি করেছে প্রতিবাদী কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে।... বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কর্মীর সঙ্গে পরিচিত হলাম। তারা প্রত্যেকেই গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন বাংলা বিভাগের ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা, ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার মোহাম্মদ হায়দার আলী। হায়দার ভাই আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। কবি জাফর ওয়াজেদ আমার অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু; ঢাকা কলেজে আমরা ছিলাম সহপাঠী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাফর ভর্তি হয় বাংলা বিভাগে। জাফর ১৯৭৮ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। পরের বছর সে ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ১৯৭৭ সালের শেষ দিকের ঘটনা। তারিখটা আজ মনে নেই। আমি আর জাফর আড্ডা দিচ্ছিলাম গফুর মিয়ার দোকানে। আলোচনা করছিলাম বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে কী করা যায়। সে সময় আমার মাথায় একটা চিন্তা আসে—একটা স্লোগান লিখলে কেমন হয়! এই ভেবে আমি লিখলাম—‘মুজিব লোকান্তরে, মুজিব বাংলার ঘরে ঘরে’ স্লোগানটি। জাফর স্লোগানটি পছন্দ করলো। আমরা ঠিক করলাম স্লোগানটি হায়দার ভাইকে দিতে হবে। কারণ হায়দার ভাই ছিলেন চিকা মারার ওস্তাদ। সেই দিনই হায়দার ভাইয়ের হাতে লেখাটি দিয়ে দিলাম আর বললাম, সুন্দর করে লেখাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে লিখে দিন। পরের দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে হায়দার ভাইয়ের ঝকঝকে হাতের লেখায় ফুটে উঠলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদী স্লোগান—‘মুজিব লোকান্তরে, মুজিব বাংলার ঘরে ঘরে’। পরবর্তী সময়ে স্লোগানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়—১৯৭৯ সালের ছাত্রলীগের সংকলনের নাম করা হয়—‘মুজিব লোকান্তরে, মুজিব বাংলার ঘরে ঘরে’। তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন জনাব ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জনাব বাহলুল মজনুন চুন্নু। পরে স্লোগানটি ‘এক মুজিব লোকান্তরে/লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’ এভাবেও প্রচার লাভ করে।’

আমাদের দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী ও ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর; ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কবি কামাল চৌধুরী ‘নিয়াজি যখন আত্মসমর্পণ লিখছে’ কবিতায় লিখেছেন—‘এই দৃশ্য বজ্রকণ্ঠ, মুজিবের সাহসী তর্জনীএই দৃশ্য চির উন্নত মম শিরআমরা হারিনি।এই দৃশ্য বিজয়ী জাতির।’

স্বাধীন দেশে তখনো নেতা নেই। তিনি পাকিস্তানের কারাকারে বন্দি আছেন। অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি; বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাধীন স্বদেশে ফিরে আসেন; কিশোর কামাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন রেসকোর্স ময়দানের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে; যখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দ্যাখো, আমি মরি নাই। তোমাদের ভালোবাসা আজ আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।’ এই মুহূর্ত কবিকে বারবার আন্দোলিত করেছে। বিশাল হৃদয়ের এই মানুষের দেশে ফিরে আসাকে কেন্দ্র করেই কবি লেখেন—যেদিন তিনি ফিরে আসলেন, সেদিনশীতার্ত আলো হাওয়ার মধ্যে ঋতু বদল হলো স্বদেশেরঝরাপাতায় জেগে উঠলো বসন্ত... ...তখন সারা বাংলায় অপেক্ষায় অধীর মানুষপ্রতিটি হৃদয় স্পন্দিত বজ্রকণ্ঠেপিতার জন্য করছে সন্তানবন্ধুর জন্য ভাইনেতার জন্য মুগ্ধ অনুসারীজনকের জন্য আবহমান এক দেশ।......শোক থেকে জেগে উঠলো স্বপ্ন, রক্তে বাজলো দারুণ দামামাবেদনার অশ্রুরেখা মুছে ফেলে‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ বলে হেসে উঠলোলতাগুল্ম, ধূলিকণা, পরিপূর্ণ দীপ্ত পতাকা।(১০ জানুয়ারি ১৯৭২)

কবি কামাল চৌধুরী কতটা বঙ্গবন্ধু প্রেমিক কতটা অন্তর থেকে জাতির পিতাকে ভালোবাসতেন তার নিচের কবিতাটি পড়লে সহজেই অনুমান করা যায়— ‘আমি সেই বেদনার হাত রেখে কাঁদিজল-চোখে একজন ব্যথিত তরুণ হয়ে তোমার জন্মের কাছে ঋণী হয়ে যাই আজীবন শ্রদ্ধাভরে নতজানু থেকেপ্রিয় সেই জন্মকে লালন করি ভেতরে ভেতরে।’

কবি স্বপ্নে জাগরণে সংগ্রামী এই মহান মানবকে শয়নে স্বপ্নে স্মরণ করেন। এই বাংলার অস্তিত্বে মিশে আছে তার নাম শেখ মুজিব। তার বজ্রকণ্ঠ মানুষকে জাগ্রত করেছিল—এক মন্ত্রে দীক্ষিত করে ছিল। চেতনাকে শাণিত করতে যে নেতা শিক্ষা দিয়েছিল, আমরা এই জাতি ভুলি কী করে। কবিও ভুলতে পারেন না। তাই তো বলতে পারেন এমন কথা—বিশাল হৃদয়ী এই মানবিক মানুষের জন্য দেশটা খা খা করে। কোন এক গ্রামে ঘরের কোণে নিভৃতে কাঁদে কোন এক বয়স্ক মা। খোকনের জন্য চিন্তায় বিভোর বাংলার মানুষ। তার শূন্যতার কথা মনে হলেই কবি কামাল চৌধুরীর মন হু-হু করে ওঠে। এই মানবের জন্য লুকিয়ে কত জল ঝরিয়েছেন কবি; তার প্রমাণ একজন প্রেমিকের কথা কবিতাটি—১.একটি মুজিব ছিল বাঙালির প্রথম প্রেমিকএকটি মুজিব আছে এই দেশে গ্রাম জনপদেএশিয়ার মাঠে ঘাটে ঘাটে শ্রমিকের পেশল শরীরেপুরুষের শোণিত বাহুতে রমণীর প্রখর হৃদয়েপ্রগতির মিছিলে মিছিলেআছে তাঁর অমর ভাষণপৃথিবীর ঘাসজুড়ে তাঁর সেই বজ্রকণ্ঠ জেগে থাকে। ২.শুধু এক মাতা দেশ গোপনে লুকিয়ে কাঁদে, বিশাল শূন্যতাদেখে হু-হু করে বুক; নিভৃতে একাকী বোনে হৃদয়ের কাঁথা... তাতেই ঝরলো মৃত্যু, বিশালহৃদয় এক মানবিক বুকে।(এখনো দাঁড়িয়ে ভাই)

কবি কামাল চৌধুরী মার্চ কবিতাটি লেখেন ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ। মার্চ বাংলাদেশের জন্মমাস। মার্চে বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁকবদল হয়। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে এ দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের সময় কবি এই ময়দানে উপস্থিত থেকে তা প্রত্যক্ষ করেন। সেই উত্তাল সময়ের উত্তাল অনুভূতি কবি তার এই মার্চ কবিতায় তুলে ধরেছেন—এসে গেছে শেখ মুজিবের নামেমার্চের ভাষা সাহসের তর্জনীজনসমুদ্রে স্বাধীনতা স্বাধীনতাআকাশে বাতাসে জয়বাংলার ধ্বনি... এই মার্চ মানে মুক্তি ও স্বাধীনতা এই মার্চ মানে বাঙালির জয়গানস্বদেশ আমার, সাহসে ও সংগ্রামেআমরা সবাই মার্চের সন্তান।

কবি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করবেন টুঙ্গিপাড়া। সেখানেই তার সাথে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানকার আলো-বাতাস এই মহান নেতাকে নিয়ে প্রতিদিন কবিতা লিখছে আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মন্ত্রণায় দীক্ষিত হচ্ছে। এই মাটি পবিত্র মাটি, এই মাটিতেই ঘুমিয়ে আছেন মানবতার মূর্তপ্রতীক—হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মাটিই তাকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে। তাই কবি বলেন—১.আবার দেখা হবে টুঙ্গিপাড়ায় আশ্চর্য শব্দের গায়ে ঝরে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা বিনম্র আকাশসেখানে প্রতিদিন তোমাকে লিখছে বাংলা কবিতা মহাদেশ পাড়ি দিচ্ছে তোমার মুক্তির মন্ত্র, জাতিরাষ্ট্র, জাগরণ বাঙালির ভোর।(আবার দেখা হবে)

২.যেখানে ঘুমিয়ে আছ, শুয়ে থাকো বাঙালির মহান জনকতোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠশৌর্য আর অমিত সাহস টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো তোমার সাহস নেবেনেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা (টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে)

কবি কামাল চৌধুরী তাঁর অন্য একটি কবিতায় লিখেছেন—আমারও কবিতা নিবেদন করি তোমাকেতোমার মৃত্যু কোথাও যে দেখি না আমরাঅশ্রু ও শোক, রক্তের স্রোত পেরিয়েকোটি মানুষের অনুভবে আছো জীবিত।(কোটি মানুষের অনুভবে)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময়ই এই বাড়ি থেকে রাজনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন। আবার এই বাড়িটিও সবার কাছে প্রিয় বাড়ি ছিল। এই বাড়ির উপরতলায় বাড়ির সবাই থাকত এবং নিচতলা ছিল রাজনৈতিক র্কাক্রমের জন্য অফিস রুম। সেখানেই সবাই সারাদিন আসা যাওয়ার মধ্যেই থাকত। এই বাড়িতেই আবার জানোয়ারগুলো বাংলার সিংহপুরুষকে হত্যা করে। আবার এই বাড়িটা তার হত্যার পরেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এই বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে তিনি নিজ হাতে এই বাড়িতে জমে যাওয়া ধুলা ময়লা পরিষ্কার করেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও এই বাড়ি থেকে হায়েনারা লুট করে নিয়ে গেছে। এই বাড়িটা সবার, এই বাড়িটা নেতা—এই বাড়িটা এখন জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। এই বাড়ি এখন সবার—রাষ্ট্রের। তাই কামাল চৌধুরী তার কবিতায় বলেন—এই বাড়িটার জাতির পিতার, এই বাড়িটার সবারএই বাড়িটা মুজিব নামের পলাশ, রক্তজবার এই বাড়িটা অশ্রুলেখা শোকের আগস্ট মাস এই বাড়িটা পিতৃভূমির কান্না, দীর্ঘশ্বাস...তোমার আমার আত্মপরিচয়এই বাড়িটা বঙ্গবন্ধু, জাতির হিমালয়।

কামাল চৌধুরী তাঁর অধিকাংশ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর ও অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন জনক হত্যার প্রতিশোধ তিনি নেবেনই। তিনি জনক হত্যাকারী শত্রুদের যথার্থ জবাব দিবেন। তিনি না পারলেও তার প্রতিশোধ নেওয়ার তলোয়ার পুত্রকে দিয়ে যাবেন। পুত্র যেন সেই প্রতিশোধ নিতে পারে। সেই কথাই কবি তার প্রতিশোধ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন—পাঁজরের হাড়ে আগুন জ্বালিয়ে আছিছাড়বো না আমি কিছুতেই ছাড়বো নাযতদিন বাঁচি গোত্রের প্রতিশোধরক্তবর্ণ ক্রোধ জ্বেলে জ্বেলে নেবো;...একা হয়ে যাবো নিঃস্ব হবো না তবুছাড়বো না আমি কিছুতেই ছাড়বো না।এ এক জীবনে যদিবা ব্যর্থ হইএই তলোয়ার পুত্রকে দিয়ে যাবো।(প্রতিশোধ)।

কবি কামাল চৌধুরী একজন ইতিহাস সচেতন ও দ্রোহী কবি। যার কবিতায় তাই ঘুরেফিরে বারবার এসেছে সেই দুঃসময়ের চিত্র, বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বরের বাড়ির, তাঁর কারাজীবন, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিসৌধ, ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, পিতার জন্মদিনের কবিতা, নিয়াজির আত্মসমর্থন। কবির কবিতায় এই নিজস্ব প্রকাশভঙ্গিই বাংলা ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের সনদ হয়ে উঠেছে। কবি কামাল চৌধুরী নেতার মহিমান্বিত জীবনকে তাৎপর্যসহ বারবার তুলে ধরার বা তার কবিতায় প্রকাশ করার প্রয়াস পেয়েছেন। আমাদের সত্যিকার নেতাই যেন—কামালের কবিতায় দৃশ্যমান হয়ে আমাদের সাথে সাথে থাকেন—একান্ত নিজের মানুষ হয়ে। তাই তো কবি বলেন—বিপর্যস্ত মানুষের নির্মম অসংলগ্নতাকে মনোজগতের উদঘাটনে মৃত্যু চিন্তাকে পদতলে পিষ্ট করে নেতা এগিয়ে যান সামনের দিকে। আজ দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কিন্তু সেদিন নেতা আমাদের অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক ভাত, কাপড় ও মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে, বাংলাদেশ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি দূর করা হবে। দখলদার বাহিনীর বিচার হবে ও পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর গণহত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, আমরা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, প্রয়োজনে প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা সুরক্ষা করব’। নেতার কথা আমাদের নেতাশূন্য স্বদেশে বারবার মনে পড়ে। এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? তিনি চেয়েছিলেন সম্প্রীতির স্বদেশ, সোনালি, রুপালি, সবুজবরণ বাংলা জননীকে। যার মাতৃছায়ায় সব সন্তান নির্বিচারে জীবনযাপন করবে। তাই তো নেতা বলতে পারেন, ‘স্বপ্ন আমার সফল হইয়াছে... স্বাধীনতা আর কেউ হরণ করিতে পারবে না।’ কবি তো সেই নেতারই শূন্যতায় ব্যথিত—কবি এই সত্যতার বাণী উচ্চারণ করেন। ভুলব না আমরা তাদের ভুলব না। আর সমস্ত অন্যায়ের পরিত্রাণ ঘটিয়ে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সত্য আর আদর্শের দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে এই কবি দৃঢ় প্রত্যয়। তাই কবি বলেন—সেবাদাসীদের মতো তারা সব ঘিরে আছে নতুন মনিবহায়, এ রকম অপকর্ম শুধু বুঝি বাঙালির সাজে!...তোমার নিকটে ছিল যারা—তোমার খুনিরাতারা কি বাঙালি ছিল?নাকি কোনো ষড়যন্ত্রী দেশের সেবক?সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজেদের বিকিয়েছে যারাআমাদের ভাই নয় তারা...

এসইউ/এসএম