জাগো জবস

চাকরির পাশাপাশি চলে বিসিএসের প্রস্তুতি: আকাশ আহাম্মেদ

মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বাবা মো. ফরজুর রহমান, মা মোছা. আসুরা খাতুন। তিনি ১৯৯৫ সালে ৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অধীনে কাজ করছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

Advertisement

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—

জাগো নিউজ: বিসিএসে ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা: রেজাল্ট দেওয়ার সাথে সাথে যখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি; তখন ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছিল। কিছু মুহূর্ত পর যখন নিজের রোল লিস্টে খুঁজে পেলাম; তখন এক মুহূর্তের জন্য নির্বাক হয়ে গেছিলাম। পরক্ষণেই মাকে ফোন দিয়ে জানালাম, ‘মা আমি ক্যাডার হয়ে গিয়েছি’। এ মুহূর্তটি আমার জীবনের সেরা এক মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা: দরিদ্রতা বরাবরই অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও পরিবারের সাপোর্ট ও নিজের প্রচেষ্টা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্যে করেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস 

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা: অনার্সে ভর্তির পর থেকেই স্বপ্ন দেখি। তবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকে।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা: অনার্স চতুর্থ বর্ষে এসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে অভাবের সংসারে আর্থিক চাপ আরও বেড়ে যায়। এ সময় থেকেই চাকরির প্রস্তুতি শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি পুরোদস্তুর চলতে থাকে। সাথে তিন-চারটা টিউশনি দিনের পুরোটা সময় ব্যস্ততায় কেটে যায়। এভাবে এক বছর কেটে যায়। এরই মধ্যে করোনা এসে হানা দেয়। সবকিছু যেন এলোমেলো করে দেয়। টিউশন বন্ধ, বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। পাশাপাশি এলাকায় ছোটদের পড়ানো শুরু করি। এরপর করোনার প্রভাব কিছুটা কমে এলে ঢাকা চলে আসি। চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। প্রথম পরীক্ষা ছিল ৪১তম বিসিএস প্রিলি। এরপর এনএসআইতে পরীক্ষা দিই। পরে সুপারিশও পাই কিন্তু জয়েন করিনি। কেননা টার্গেট ছিল শুধু বিসিএস। পরে দেখলাম, বিসিএসে সুপারিশ ও জয়েন করতে কমপক্ষে ৪ বছর লেগে যাবে। ফলে অন্য একটি চাকরি করতে হবে।এবার ক্যাবে অনেকগুলো ভাইভা দিই। নিরাপত্তা শাখায় চাকরি হয়ে যায়। পোস্টিং হয় ঢাকা এয়ারপোর্টে। চাকরির পাশাপাশি ৪১তম ভাইভার প্রস্তুতি, ৪৩তম লিখিত ও ৪৪তম লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি সমানতালে চলতে থাকে।এয়ারপোর্টের শিফট ডিউটির মাঝে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি কুলিয়ে ওঠা একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আর্থিক সাপোর্ট ও পরিবারের কথা চিন্তা করে চাকরি না ছেড়ে তিনটি বিসিএস প্রস্তুতি চলতে থাকে। এভাবেই এক সময় কাঙ্ক্ষিত ৩ আগস্ট চলে আসে। সন্ধ্যায় রেজাল্ট হয়, ধরা দেয় স্বপ্ন। এর মধ্যদিয়ে ৪১তম বিসিএস যাত্রার সমাপ্তি ঘটে।

আরও পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে ফার্স্ট ইম্প্রেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ 

Advertisement

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা: আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা ও স্ত্রী। বাবা তার পুরো জীবন আমাদের পরিবারকে দাঁড় করানো ও আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসর্গ করেছেন। আমার মা সাংসারিক দক্ষতা ও শাসনে চলার পথকে আরও মসৃণ করেছেন। আমার স্ত্রী ধৈর্য ও সাহস জুগিয়ে সামনের দিকে পথ চলতে দারুণ সাহায্য করেছে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. আকাশ আহাম্মেদ রানা: ভবিষ্যতে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা ও তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে চাই। তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষা বিস্তারে বিশেষত আর্থিক সামর্থহীন পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মৌলিক অধিকার শিক্ষা প্রাপ্তিতে সহায়তা করা। এ নিয়ে আমার একটি মৌলিক পরিকল্পনা আছে। তা হলো ‘শিক্ষার বিনিময়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি’। অর্থাৎ বিনা পারিশ্রমিকে সামর্থহীন পরিবারের শিশুদের প্রাকৃতিক পরিবেশে পাঠদান। বিনিময়ে প্রত্যেক শিশু মাসে একটি করে ফলদ বৃক্ষরোপণ করবে। এতে শিক্ষা যেমন শিশুদের মনকে আলোকিত করবে; অন্যদিকে বৃক্ষরোপণ আমাদের পরিবেশকে সামনের জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে।

এসইউ/জিকেএস