তথ্যপ্রযুক্তি

এআই ব্যবহারে হারিয়ে যাবে যে ১০ চাকরি

প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মস্তিষ্কের মতো করে কাজ করে। চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের সহজাত। কিন্তু একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।

Advertisement

বর্তমানে একাধিক এআই চ্যাটবট যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি দুনিয়ায়। যা মানুষের কাজ আরও সহজ ও গতিশীল করেছে। তবে এআই ব্যবহার মানুষের জন্য একদিকে আশীর্বাদ অন্যদিকে দুশ্চিন্তার কারণও বটে। কারণ এআই ব্যবহার যত বাড়বে ততই কমবে মানুষের কর্মসংস্থান। গবেষকরা বলছেন এআই ব্যবহারে আগামী ২৫ বছরে ১০ চাকরি হারিয়ে যাবে। কমবে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ। বাড়বে বেকারত্ব।

দেখে নিন ১০ চাকরি, যেগুলো অচিরেই হারিয়ে যাবে-

ব্যাংকারএআই-এর ব্যবহারে ব্যাংকিং কার্যক্রম হবে আরও সহজ ও দ্রুততর। যে কারণে কাগজে কলমে কোনো কিছুই আর লিখতে হবে না। ব্যাংক পরিচালনা করবে এআই। তাি ব্যাংকাররা চাকরি হারাতে পারেন।

Advertisement

গুদাম কর্মীএআই-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে যে চাকরিটি সবার আগে হারিয়ে যাবে সেটি হল গুদাম কর্মী। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আমাজনের জেফ বেজোস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি তার ওয়্যার হাউস বা গুদামগুলোকে পুরোপুরি মেশিন চালিত করতে চান। আমাজন এমন কিছু রোবট তৈরি করছে যেগুলো সপ্তাহে ৭ দিনই ২৪ ঘন্টা করে কাজ করতে পারবে , যা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এলন মাস্কও এআই ব্যবহারের ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী কিন্তু এলন তার প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি এআই দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে চান না।

ট্যাক্সি ও উবার ড্রাইভারএআই ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ড্রাইভার ছাড়া ট্যাক্সি বা উবার চালানো যাবে। সম্প্রতি এমন গাড়ির দেখা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই গাড়িতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে ম্যাপে ঠিকানা নির্দেশ করে দিলে এটি আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। ফলে ভবিষ্যতে চাকরি হারাবে গাড়ি চালকেরা।

আরও পড়ুন: ধূমপানের অভ্যাস ছাড়তে সাহায্য করবে এআই

গাড়ি মেকানিকএরই মধ্যে টেসলা অটো-মোবাইল জগতে বিপ্লবের ঢেউ নিয়ে এসেছে। অটো-মোবাইল শিল্পজগত এখন পুরোপুরি বিদ্যুৎ নির্ভর হওয়ার পাশাপাশি নিজে ড্রাইভ করতে পারবে এমন গাড়ি তৈরির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতের মেশিনগুলো কম্পিউটার সায়েন্টিসদের মতো আচরণ করবে। গাড়িগুলোতে চড়ে মনে হবে গাড়ি নয় কম্পিউটার চালানো হচ্ছে। আর অনেক বিশ্লেষকদের ধারণা ভবিষ্যতে এমন মেশিন তৈরি করা হবে যা মানুষের সাহায্য ছাড়া নিজেই গাড়ির ছোট-বড় সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবে, কোনো মানুষ মেকানিকের সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো গাড়ি মেকানিক চাকরিটি হারিয়ে যাবে।

Advertisement

ট্রান্সলেটরবর্তমানে ইনটারপ্রিটার বা ট্রান্সলেটর একটি জনপ্রিয় চাকরি কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের মানুষ ইনটারপ্রিটারের প্রয়োজন হবে না। কারণ এআই-ই ট্রান্সলেটর হিসেবে কাজ করবে। ফলে যারা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সলেটর বা দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন তারা চাকরি হারাতে পারেন।

অ্যাসেম্বলি লাইন কর্মীএআই বা মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারাবে বিভিন্ন ফ্যাক্টরির অ্যাসেম্বলি লাইন কর্মীরা। গবেষণায় উঠে এসেছে যে শিল্পক্ষেত্রে মেশিনের ব্যবহারের ফলে ১৯৪৭ সাল থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন ম্যানুফ্যাকচারিং চাকরি হারিয়ে গিয়েছে। আর এর ফলে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন অর্থ কোম্পানিগুলোতে যোগ হয়েছে। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মানুষ কর্মীর বদলে রোবট দিয়ে কাজ করাতে বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে।

গভীর সমুদ্রের ডুবুরিবিগত কয়েক দশক ধরে গভীর সমুদ্রের ডুবুরিরা সমুদ্রের বিভিন্ন স্থান অনুসন্ধান করা সহ গবেষণার কাজও করে আসছে। কিন্তু এই কাজগুলো করতে দক্ষতার প্রয়োজন এবং সেই সঙ্গে এটি ভীষণ বিপদজনক। তাই বর্তমানে এসব কাজে রোবট ও ড্রোন ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক পরীক্ষামূলকভাবে গ্রেট ব্যারিযার রীফে এধরণের পরীক্ষা চালিয়ে সফলতা লাভ করেছে। যার ফলে এখন সমুদ্র অভিযানে রোবটের ব্যবহারের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।

এয়ার-ট্রাফিক কন্ট্রোলারঅটো-মেশিনগুলো ভবিষ্যতের জব র্মাকেটগুলোতে বিশাল জায়গা দখল করতে চলেছে। কিন্তু অনেকে ধারণা করছেন বিশেষ কিছু কাজে এই অটো-মেশিনগুলো ব্যবহার করা হবে যেখানে কোনো মানুষ যদি ভুল করে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ। তেমনই একটি কাজ হল এয়ার -ট্রাফিক কন্ট্রোলার। হয়তো ভবিষ্যতে এয়ার-ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কাজটি পুরোপুরি এআই দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আরও পড়ুন: বাংলায় ব্যবহার করা যাবে গুগলের এআই ‘বার্ড’

ফাস্ট-ফুড রেস্তোরার সার্ভারজাপানের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাগুলোতে মানুষের পরিবর্তে রোবট ম্যানেজার ও ওয়েটারদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকডোনালসে অর্ডার নেওয়ার জন্য অটোমেটিক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। যদিও রান্না করা ও খাবার দেওয়ার জন্য মানুষ কর্মী রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো এই খাবার পরিবেশনের কাজটি পুরোটাই রোবটদের দখলে চলে যাবে।

লাইব্রেরিয়ানলাইব্রেরিয়ান চাকরিটি যদিও অটো-মোবাইল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মানুষের জীবন-যাত্রার পরিবর্তন। এখন মানুষ বই পড়ার জন্য লাইব্রেরি যায় না। সবাই এখন মোবাইলে বই পড়ে বা অডিও বই শুনে থাকে। তাই মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। যদিও লাইব্র্রেরি হুট করে হারিয়ে যাবে না কিন্তু ভবিষ্যতে পুরো লাইব্রেরি সিস্টেমটি অনলাইন ভিত্তিক হয়ে উঠবে।

সূত্র: রিডার ডাইজেস্ট

কেএসকে/এএসএম