ধর্ম

বিশ্বব্যাপী কল্যাণময় রাষ্ট্র গঠনে নবিজির (সা.) ভূমিকা

মাওলানা নূর হোসাইন

Advertisement

মহান রাব্বুল আলামিনের জন্যই সব প্রশংসা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি শতকোটি দরুদ ও সালাম। যিনি এমন এক সময় মানবতার অস্থায়ী বসুন্ধরায় তাশরিফ এনেছিলেন, যখন মানুষ মনুষ্যত্ব ছেড়ে দিয়ে পশুত্বের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো। তাঁর অনুপম আদর্শ চির অমর হয়ে আছে এবং থাকবে। তাঁর আদর্শে গঠিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী কল্যাণময় রাষ্ট্র।

তিনি বিশ্বব্যাপী কল্যাণময় রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন। আজ সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করবো। আর এ বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের তিনটি বিষয় জানতে হবে। তাহলো-

১. The welfare state অর্থাৎ কল্যাণকর রাষ্ট্র কাকে বলে?

Advertisement

২. বিশ্বব্যাপী কল্যাণময় রাষ্ট্র গঠনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভূমিকা ও কার্যক্রম।

৩. আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অমুসলিমদের চোখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন ছিলেন।

কল্যাণময় রাষ্ট্র কাকে বলে?

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এ-সম্পর্কে বলেন, যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে তাকে the welfare state তথা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে।

Advertisement

কল্যাণময় রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য পাঁচটি-

১. রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা তথা  ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করা। যা জাতিসংঘের ১, ৩, ১২, ১৩ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

২. সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করা। যা জাতিসংঘের ২০ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

৩.  আয় উৎপাদন  ও সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে সুষম নীতি অবলম্বন করা। অর্থাৎ ধনী গরিব বৈষম্য নিরসন ও শ্রেণিস্বার্থের পরিবর্তে গণস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। যা জাতিসংঘের ২৫ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

৪. জনগণের পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। যা জাতিসংঘের ২৬ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

৫. নাগরিকের জীবনযাত্রার মান সংরক্ষণ করা। যা জাতিসংঘের ২৫ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ যে রাষ্ট্রে বিদ্যমান থাকে তাকে The Welfare State অর্থাৎ কল্যাণকর রাষ্ট্র বলে ধরা হয়।

বিশ্বব্যাপী কল্যাণময় রাষ্ট্র গঠনে নবিজির (সা.) ভূমিকা ও কার্যক্রম

মাত্র সাত থেকে আট বছরের মধ্যে আট লাখ বর্গ মাইলের একটি সুদীর্ঘ রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার পরিধি আমাদের বাংলাদেশের মতো প্রায় ১৬টি দেশের সমান। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন পরবর্তী ২০ বছরে যা ২৬ লক্ষ বর্গমাইলে সম্প্রসারিত করেন।

প্রশ্ন জাগতে পারে, এ বিশাল সম্রাজ্য ও সাফল্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে অর্জন করেছিলেন?

হ্যাঁ, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐতিহাসিক ‘মদিনা সনদ’ (সাংবিধানিক চুক্তি) এর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। যা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

অমুসলিমদের চোখে আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক রাসুলুল্লাহ (সা.)

হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মহামানব। এ কথা শুধু কোরআন-হাদিস দ্বারাই প্রমানিত নয়, বরং বিশ্বের বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরাও একবাক্যে তার ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা আর কর্মের শ্রেষ্ঠত্বর স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ জন্য প্রত্যেক জাতির কবি, সাহিত্যিক, রাজনিতিবিদ, ধর্মগুরু তথা পন্ডিতগণ উদাত্ত অবলীলাক্রমে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা করেছেন।

১৯৭৮ সালে মাইকেল এইচ হার্ট "The Hundrad" নামের একটি বই প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দিয়েছেন।'

উইলিয়াম ড্রাপার বলেছেন, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর সবার চেয়ে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

আলফ্রেড মার্টিনে তার ‘The Great Religlous Teacher In The East’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনে যেভাবে সফলতা লাভ করেছিলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় কোনো ধর্মীয় ইতিহাসে তার কোনো নজির পাওয়া যায় না।’

লেখক: শিক্ষক, আলহাজ্ব আব্দুল মালেক মাতব্বর ইসলামিয়া মাদরাসা, খিলক্ষেত, ঢাকা।

এমএমএস/এএসএম