সাহিত্য

মিষ্টি হাসির বিয়ে পালানো বউ

চাঁদনী

Advertisement

দিন-তারিখ ঠিক মনে নেই। তবে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পরের সময় আর সবার মতো আমিও ফুল অন ঘোরাঘুরির মুডে থাকতাম। বাবার বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত। আমার ছোট ভাইয়ের ঠান্ডা, তাই আম্মু যাবে না। আমি আর বাবা সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম।

পথের মধ্যে গাড়ির চাকার পাংচার হওয়ার সুবাদে সব বরযাত্রী পাশের এক মেলা থেকে ঘুরেও এলো। মেলা থেকে বাবা আমাকে একটি মাটির ঘোড়া কিনে দিলেন। তারপর বাবা-মেয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আবার রওনা হলাম।

বিয়ে বাড়ি আসার কিছুক্ষণ আগে বড় যানজটে পড়লাম। আমি আপন মনে বাসের জানালায় নিজের মাটির ঘোড়া নিয়ে খেলছি। হঠাৎ চোখ গেল পাশের রিকশায়। লাল টুকটুকে শাড়ি পরা একটি মেয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। কী যে সুন্দর দেখতে। কিন্তু মুখে একরাশ চিন্তা ভর করে আছে।

Advertisement

আমার চোখে চোখ পড়তেই বলল, ‘আমাকে ঘোড়াটি দেবে?’ আমিও সঙ্গে সঙ্গে ‘না’ বলে দিলাম। আমার ‘না’ শুনে মেয়েটির মুখে হাসি ফুটে গেল। আহা, কী মিষ্টি হাসি! এর মধ্যে জ্যাম ছুটে গেলে মেয়েটির রিকশা চলে গেল। আমরাও পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।

কনের বাড়ির সামনে বিশাল গেট। কনেপক্ষ আমাদের খুব সমাদর করল। সব কিছু ভালোই চলছিল। হঠাৎ কেমন যেন একটা শোরগোল পড়ে গেল। বাচ্চা আমি শুধু এটুকু বুঝলাম, বউ নাকি পালিয়েছে। বরপক্ষের মানুষেরা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। কনের বাবা মাথা নিচু করে সব শুনছেন। এরমধ্যে পালিয়ে যাওয়া কনের ছবি দেখতে পেলাম। দেখেই আমি অবাক, আরে এতো সেই মিষ্টি হাসির মেয়ে। যে আমার কাছে ঘোড়া চেয়েছিল। বাবাকে কথাটি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন যেন বলতে পারিনি।

বিয়ে বাড়িতে দুপক্ষের প্রায় তিন ঘণ্টা মিটিং শেষে মেয়ের চাচাতো বোনের সঙ্গে অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেল। আমরা একটি টুকটুকে বউকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হলাম।

মাটির ঘোড়াটা আজও আমার কাছে আছে। মাটির ঘোড়ার দিকে চোখ গেলেই মনে পড়ে সেই বিয়ের কথা। মনে পড়ে সেই মিষ্টি হাসির বিয়ে পালানো বউয়ের মুখটি।

Advertisement

এসইউ/এমএস