নিয়ামুর রশিদ শিহাব
Advertisement
‘নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন, নাই রে টেলিগ্রাম/ বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম।’ এক সময় প্রায়ই বেতারে শোনা এ রকম কালজয়ী গানের সঙ্গে দিন বদলের পালায় কালের বির্বতনে হারিয়ে গেছে ডাকযোগে চিঠিপত্রের ব্যবহার। সেইসঙ্গে কদর কমে গেছে বহুল ব্যবহৃত ডাকবাক্সের। তাই অলস পড়ে থাকা চিঠির বাক্সগুলো মরিচা পড়ে যাচ্ছে।
এক সময় চিঠির জন্য অনেকেই অপেক্ষা করতেন। কালের বিবর্তনে যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন এসেছে। তাই তো চিঠি পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে কবি হেলাল হাফিজ বলেছেন—‘এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিওএক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তালপাখাটাখুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিও।’(প্রস্থান)
আধুনিক যুগের মতো মোবাইল ও ইন্টারনেট ছিল না বলে এক সময় মানুষের সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল ফ্যাক্স ও ডাক যোগাযোগমাধ্যম। আজ থেকে মাত্র পনেরো বছর আগেও পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন অথবা অতি আপনজন দূর-দূরন্ত থেকে ফ্যাক্স কিংবা ডাকযোগে চিঠিপত্রের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং খোঁজ-খবর নিতেন। আর্থিক লেনদেনও করা হতো ডাকযোগের মাধ্যমে।
Advertisement
আরও পড়ুন: রাহেল রাজিবের প্রেমের কবিতা: বাস্তবতার অভিজ্ঞান https://www.jagonews24.com/literature/article/815871
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কিংবা প্রিয় মানুষটির চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন। প্রহর গুনতেন, কখন আসবেন ডাক-পিয়ন। অপেক্ষার সেই মুহূর্ত সম্পর্কে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন—‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতেরানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,রানার চলেছে, রানার!রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।’(রানার)
প্রিয় মানুষটি অথবা অতি আপনজনের সেই চিঠি হাতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হতেন অপেক্ষা করা ব্যক্তিটি। চিঠি হাতে নিয়ে কতই না স্বপ্নে বিভোর থাকতেন প্রেমিক-প্রেমিকা। স্ত্রী তার স্বামীর চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন, তেমন মা থাকতেন ছেলের আর প্রেমিক ও প্রেমিকা থাকতেন চিঠি অপেক্ষায়। গানে গানে তাই তো শোনা যায়—‘চিঠি কেন আসে নাআর দেরী সহে না,ভুলেছো কি তুমি আমাকেভুলেছো কি নাম-ঠিকানা।’
তখনকার দিনের সেই আনন্দ অনুভূতিই ছিল অন্যরকম। কিন্তু প্রযুক্তির বির্বতনে এখন আর শহর কিংবা গ্রাম-গঞ্জে ডাকযোগে চিঠিপত্রের ব্যবহার নেই। তাই তো আনাচেকানাচে ডাকবাক্সগুলো অলস পড়ে আছে। কেউ চিঠি দিচ্ছেন না। চিঠি নেওয়ার জন্য বাক্সও খুলছেন না কেউ। তাই অলস পড়ে থাকা চিঠির বাক্সগুলোয় মরিচা পড়ে যাচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: ‘কাজলা দিদি’র অন্তরালে যতীন্দ্রমোহন বাগচী
বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। অনেক উন্নত পরিসরে চলছে মানুষের সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা। এখন মানুষ ডাকযোগে যোগযোগের মাধ্যম পরিহার করে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ই-মেইল, রকেট, বিকাশ, নগদ কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ করে থাকেন। এসবের ব্যবহারও চলছে জোরালো গতিতে।
মানুষ এখন ভুলে গেছে সেই পুরোনো আমলের ডাকযোগে পাঠানো চিঠিপত্রের কথা। এখন গ্রাম-গঞ্জের অনেক স্থানে ডাকঘর থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। চিঠিপত্র জমা রাখার বক্স থাকলেও নেই কোনো চিঠি। এভাবেই প্রযুক্তির বিকাশে ও যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতি সাধনে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠিপত্রের ব্যবহার।
চিঠিপত্র কিংবা ডাকঘর এখন কেবল সাহিত্যে। গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে কিঞ্চিৎ দেখা মেলে। ঔপন্যাসিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘মমতা’ উপন্যাসে ডাকঘর, চিঠি ও পোস্ট মাস্টারের চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি তার উপন্যাসে এসবের ব্যবহার তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে যোগাযোগের বিবর্তনও তুলে ধরেছেন। এসবই এখন কেবল স্মৃতি। অতীতের ইতিহাস শুধু।
লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
এসইউ/জিকেএস