চার্লস ডিকেন্স একজন ইংরেজ ঔপন্যাসিক। পুরো নাম চার্লস জন হাফ্যাম ডিকেন্স। ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপের সাহিত্যে এক নতুন বিপ্লবের নাম চার্লস ডিকেন্স। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, সম্পাদক, সচিত্র প্রতিবেদক এবং সমালোচক ছিলেন। ডিকেন্স জীবদ্দশাতেই তার পূর্বসূরি লেখকদের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মৃত্যুর পরও তার জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, ডিকেন্স ইংরেজি সাহিত্যে প্রবাদপ্রতিম বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অলিভার টুইস্ট, দ্য পিকউইক পেপারস, ডেভিড কপারফিল্ড ইত্যাদি।
Advertisement
তার উপন্যাসের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ এবং সামাজিক অসঙ্গতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে সাধারণ বন্ধুত্ব কিংবা প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বাসরুদ্ধ উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্যও তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় সাহিত্যিক। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন তিনি। এমনকি একবিংশ শতাব্দীর লাইব্রেরিগুলোতেও ডিকেন্সপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ শহরে জন্ম তার। শৈশব কেটেছে চরম আর্থিক অভাব অনটনে। ১৮২৭ সালে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি আদালতের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এক বছর পর ডক্টর কমন্সের রিপোর্টার এবং ট্রু সান-এর ক্রনিকলার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তার অধিকাংশ রচনাই পত্র-পত্রিকায় মাসিক কিস্তিতে প্রকাশিত হত। এই পদ্ধতিতে রচনা প্রকাশকে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনেও ডিকেন্সের কিছু অবদান আছে। অন্যান্য লেখকগণ ধারাবাহিক কিস্তি প্রকাশের আগেই উপন্যাস শেষ করতেন, কিন্তু ডিকেন্স কিস্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী অধ্যায়গুলো রচনা করে যেতেন। এই পদ্ধতিতে উপন্যাস রচনার ফলে তার উপন্যাসগুলোর গল্পে একটি বিশেষ ছন্দ দেখা যেত। অধ্যায়গুলোর শেষটুকু হত রহস্যময়, যার জন্য পাঠকেরা পরবর্তী কিস্তিটি পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকত। তার গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাসগুলো এতই জনপ্রিয় যে এগুলো কখনই আউট-অফ-প্রিন্ট হয়ে যায়নি।
Advertisement
লিও টলস্টয়, জর্জ অরওয়েল, জি. কে. চেস্টারটন প্রমুখ লেখকবৃন্দ ডিকেন্সের রচনার বাস্তবতাবোধ, রসবোধ, গদ্যসৌকর্য, চরিত্রচিত্রণের দক্ষতা ও সমাজ-সংস্কার চেতনার উচ্চ প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে হেনরি জেমস, ভার্জিনিয়া উল্ফ প্রমুখ লেখকবৃন্দ ডিকেন্সের রচনার বিরুদ্ধে ভাবপ্রবণতা ও অবাস্তব কল্পনার অভিযোগ এনেছেন। সাহিত্যিক জীবনে তিনি অনেকগুলো বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করে গিয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডেভিড কপারফিলড, আ টেল অব টু সিটিজ, অলিভার টুইস্ট, দি ওল্ড কিউরিয়াসিটি শপ ইত্যাদি।
এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলিগুলো হলো-স্কেচেস বাই বজ, দি ওল্ড কিউরিওসিটি শপ, নিকোলাস নিকোলবি, বার্নাবি রাজ, আ ক্রিসমাস ক্যারোল, মার্টিন চাজলউইট, আ টেল অফ টু সিটিজ, গ্রেট এক্সপেক্টেশনস, ব্লেক হাউস, লিটল ডরিট, হার্ড টাইমস, আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড, দ্য পিকউইক পেপারস।
১৮৩৬ সালে তিনি ক্যাথরিন থম্পসন হোগার্থকে বিয়ে করেন। তাদের ছিল ১০ সন্তান। চার্লস ডিকেন্স জুনিয়র, মেরি ডিকেন্স, কেট পেরুগিনি, ওয়াল্টার ল্যান্ডর ডিকেন্স, ফ্র্যান্সিস ডিকেন্স, অ্যালফ্রেড ডি'অরসে টেনিসন ডিকেন্স, সিডনি স্মিথ হ্যালডিম্যান্ড ডিকেন্স, হেনরি ফিল্ডিং ডিকেন্স, ডোরা অ্যানি ডিকেন্স ও এডওয়ার্ড ডিকেন্স। ১৮৭০ সালের ৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কেএসকে/জিকেএস
Advertisement